Header Image

ভালুকায় তরমুজ চাষে স্বাবলম্বী ৫ শিক্ষার্থী 

আনোয়ার হোসেন তরফদারঃ
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় এই প্রথম হলুদ তরমুজের চাষে স্বাবলম্বী ৫ শিক্ষার্থী।
ভালুকা উপজেলা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে বহুলী দাখিল মাদ্রাসার দক্ষিণ পাশে আড়াই বিঘা জমির ওপর এ তরমুজ খেত।
শিক্ষার্থীরা হলেন- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের মাসুম আহম্মেদ, গাজীপুর পিয়ার আলী কলেজের মার্কেটিংয়ের ছাত্র ফরিদ আহমেদ, ভালুকা সরকারি কলেজের স্নাতকের ছাত্র মেরাজ আহমেদ, টাঙ্গাইল মির্জাপুর কলেজের মার্কেটিংয়ের মো. এপ্রোল ও ময়মনসিংহ নাসিরাবাদ কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শাহ মুহাম্মদ সজীব।
শিক্ষার্থী মাসুম আহম্মেদ বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। সময়টা কাজে লাগাতে এলাকার আরও চার বন্ধুকে নিয়ে এ অঞ্চলের কৃষিতে নতুন কিছু একটা করার ভাবনা মাথায় আসে। পরে সবার মতামতের ভিত্তিতে আড়াই বিঘা জমি লিজ নিয়ে চাষ করেন হলুদ তরমুজ। জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে চুয়াডাঙ্গা থেকে ১শ গ্রাম বীজ দশ হাজার টাকায় সংগ্রহ করে এনে বীজ থেকে চারা উৎপাদন করেন তারা। এ পর্যন্ত জমি প্রস্তুত, সার, বীজ, মাচা, সুতা ও জাল বাবদ তাদের খরচ হয়েছে আরও ৫৫ হাজার টাকার মতো। জমিতে কোনো ধরনের লোক খাটাননি এই শিক্ষার্থীরা। চুয়াডাঙ্গার খাইরুল ইসলাম নামের অভিজ্ঞ চাষির পরামর্শ নিয়ে সব কাজ করেছেন নিজেরাই। এতে তাঁদের উৎপাদন খরচ বেশ সাশ্রয় হয়েছে।
শিক্ষার্থী মাসুম আরও বলেন, জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে হাল চাষ করে জমি তৈরি করেছেন। এরপর সেখানে বেড তৈরি করে ওপরে বিছিয়ে দিয়েছেন মালচিং পেপার। এর ফাঁকে পলি ব্যাগে উৎপাদন করেছেন চারা। ২৩ ফেব্রুয়ারি সেই চারা জমিতে রোপণ করেন। বিঘাপ্রতি ৮০ কেজি গোবর, ডিএপি ২৫ কেজি, টিএসপি ৩০ কেজি, গ্রিনক্যাল জিপসাম ১০ কেজি, ম্যাগনেশিয়াম ৪ কেজি, ২ কেজি করে কার্বফোরাব ও জিঙ্ক জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করা হয়েছে। পরবর্তীকালে আর কোনো সার দিতে হয়নি তাদের।
ভালুকা উপজেলার ধীতপুর ইউনিয়নের বহুলী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সরাসরি খেত থেকে তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন কয়েকজন ব্যক্তি। তিন যুবক গাছ থেকে হলুদ তরমুজ ছিঁড়ে দিচ্ছেন তাঁদের। খেতের মাচায় ঝুলছে তরমুজ। সবুজ পাতার মধ্যে যেদিকে চোখ গেছে, শুধু হলুদ তরমুজ ঝুলতে দেখা গেছে।
কথা হয় মাসুম আহম্মেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে পড়ালেখা করা পাঁচ বন্ধু মিলে এ অঞ্চলে প্রথম হলুদ তরমুজের চাষ করেছেন। রমজানে ফলন উঠায় বেশ ভালো দামে বিক্রি করতে পেরেছেন। তবে পোকার আক্রমণের সময় কৃষি কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার কারণে প্রায় দুই লাখ টাকার তরমুজ নষ্ট হয়েছে। জমি তৈরির আগে মাটি পরীক্ষা করাতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অনাগ্রহে সেটি সম্ভব হয়নি। রমজানের প্রথম দিন থেকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের আড়তে সর্বোচ্চ ৭০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ৪০ টাকা কেজিতে তাঁদের তরমুজ বিক্রি হয়েছে। প্রায় আড়াই লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি হয়েছে। এখন খেতে যা তরমুজ আছে, ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বিক্রি হতে পারে। এবারের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সামনের দিনে পাঁচ বিঘা জমিতে হলুদ তরমুজ চাষের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
শিক্ষার্থী ও নতুন সফল চাষিদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভালুকা উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা জেসমিন জাহান জানান, ওরা যে দিন মাটি পরীক্ষার জন্য এসেছিলেন, আমাদের একটি প্রোগ্রাম থাকায় সময় দেওয়া সম্ভব হয়নি। ওই ব্লকে কোনো উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নেই। যিনি অতিরিক্ত দায়িত্বে, তিনি বয়স্ক বলে তিনি জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!