Header Image

প্রান্তিক পর্যায়ে সেবা দিতে সাদিকার নিরলস পরিশ্রম

 

ময়মনসিংহ সদর উপজেলা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে গোপাল নগর কমিউনিটি ক্লিনিক। সেখানে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন সরকারি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা। কয়েক বছর আগেও এলাকার লোকজনকে চিকিৎসাসেবা নিতে উপজেলা সদর কিংবা জেলা সদরে আসতে হতো। কমিউনিটি ক্লিনিকের কল্যাণে এখন বাড়ির পাশেই চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন তারা।
ময়মনসিংহে তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে জেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এসব ক্লিনিকে প্রতি মাসে প্রায় ১ লাখ মানুষ চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে। এসব ক্লিনিকে সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ৩২ ধরনের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। সদর উপজেলার গোপালনগরের বাসিন্দা রোকেয়া ও শাহনাজ বেগম বলেন, ‘আগে আমাদের সামান্য জর হলে হাতুড়ে ডাক্তার বা সদর হাসপাতালে যেতে হতো টাকা ও সময় ব্যয় করে। কমিউনিটি ক্লিনিক থাকায় আমরা সহজেই সেখান থেকে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ পাচ্ছি।’
শুধু ময়মনসিয়হে নয়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থাপন করা কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো এভাবেই চিকিৎসাসেবাকে করেছে সহজ ও কার্যকর। তৃণমূলের সব মানুষের দরজা খোলা এসব ক্লিনিকে। এরই মধ্যে এসব ক্লিনিক ‘গ্রামীণ হাসপাতাল’ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও গ্রামীণ জনপদে শ্রেণিবৈষম্যের ঊর্ধ্বে উঠে রোগীদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। সেবার মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি ও প্রচার পাওয়ার সুবাদে এখন চিকিৎসাপ্রত্যাশীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। একসময় যেভাবে নাক সিটকানো হতো, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে এখন সেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে ইতিবাচক ভাবমর্যাদা তৈরি হয়েছে। যৌক্তিকভাবেই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো হয়ে উঠছে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর নির্ভরতার প্রতীক!জনমুখী ও আন্তর্জাতিক মহলের প্রশংসা কুড়ানো কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতার ফসল। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে সূচারুভাবে পারিচালনা করা হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকে জনগণ সেবা গ্রহণ করে। প্রতিদিন প্রতি ক্লিনিকে গড়ে ৪০-৪২ রোগী সেবা গ্রহণ করে। রোগীদের শতকরা ৮০ ভাগ নারী ও শিশু।কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে এমোক্সিসিলিন ২৫০, পেনিসিলিন, কট্রিম, প্যারাসিটামল, অ্যান্টাসিড, মেট্রোনিডাজল, জিংক, নিয়োমাইসিন অয়নমেন্ট, জেনসন ভায়োলেন্ট, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, আয়রন ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইনসহ ২৯ ধরনের ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া পরিকল্পিত জনসংখ্যার লক্ষ্যে পরিবার পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট তিন ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হয়ে থাকে এখান থেকে। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক পরামর্শও দেওয়া হয়। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪২ রোগীকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়। একসময় গ্রামাঞ্চলে রোগ নির্ণয়, চিকিৎসায় ঝাড়ফুঁক কিংবা হাতুড়ে ডাক্তারের ওপর নির্ভর করতে হতো। সামান্য সর্দিজ্বরেও প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষগুলো অসহায় হয়ে যেত। কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার পর সে অবস্থার অনেক উন্নতি ঘটেছে।
প্রতিটি ক্লিনিকে একজন করে নিয়োগকৃত প্রশিক্ষিত সেবাদানকারী (সিএইচসিপি) দায়িত্ব পালন করেন, যিনি শুক্র ও শনিবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত সেবা দিয়ে থাকেন। স্বাস্থ্য সহকারী (এইচএ) ও পরিবার কল্যাণ সহকারী (এফডব্লিউএ) সপ্তাহে তিন দিন সেবাদানকারীকে সহযোগিতা করেন। স্বাভাবিক প্রসব পরিচালনার লক্ষ্যে কর্মরত সব নারী সিএইচসিপিকে পর্যায়ক্রমে ৬ মাসব্যাপী ধাত্রী (কমিউনিটি স্কিলড বার্থ অ্যাটেনডেন্ট-সিএসবিএ) প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সময়মতো প্রতিষেধক টিকাদান, যেমন যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, পোলিও, ধনুষ্টংকার, হাম, হেপাটাইটিস-বি, নিউমোনিয়াসহ শিশু ও বয়স্কদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়। পাশাপাশি মহিলা ও শিশুদের অপুষ্টি কমাতেও সেবা দেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, কুষ্ঠ, কালাজ্বর, ডায়রিয়াসহ অন্যান্য সংক্রামক রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং সেগুলোর সীমিত চিকিৎসা-সুবিধা রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে। এছাড়া সাধারণ জখম, জ্বর, ব্যথা, কাটা, পোড়া, দংশন, বিষক্রিয়া, হাঁপানি, চর্মরোগ, কৃমি, চোখের রোগ, দাঁত ও কানের সাধারণ রোগের ক্ষেত্রে লক্ষণভিত্তিক প্রাথমিক চিকিৎসা কমিউনিটি ক্লিনিকে দেওয়া হয়। অস্থায়ী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সংক্রান্ত বিভিন্ন উপকরণ, যেমন কনডম, ইসিপি (ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল) ইত্যাদি সার্বক্ষণিক সরবরাহ ও বিতরণ নিশ্চিত করা হয়ে থাকে এসব ক্লিনিকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!