ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ
ময়মনসিংহের ভালুকায় এক যুবককে থানায় আটকে রাখার সুযোগ নিয়ে, কৌশলে জমি বেদখলের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের ছোট ভাই আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে। তবে পুলিশের দাবি বিশৃঙ্খলা এড়াতেই কামরুল ইসলাম নামে এক যুবককে থানায় বসিয়ে রাখা হয়েছিল।
উপজেলার সিডস্টোর উত্তর বাজার সংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে ১৬ শতাংশ জমি নিয়ে ৫ বছর ধরে বিরোধ চলছে মৃত আমজাদ আলী ফকির ও মৃত রমজান আলী ডিলারের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে।
উভয় পক্ষের দখলে থাকা জমিটি সাম্প্রতি পুরো অংশ দখলে নিতে মৃত আমজাদ আলী ফকিরের ছেলে হাফিজ মহিউদ্দিন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের ছোট ভাই আবুল কাশেমের সাথে ১০ লক্ষ টাকা কন্ট্রাক্ট করেন। এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাতে আবুল কাশেম জমিতে ট্রাক দিয়ে মাটি ভরাট কাজ শুরু করেন।
মৃত রমজান আলী ডিলারের ছেলে শরিফুল ইসলাম বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের ছোট ভাই আবুল কাশেম আমাদের জমিতে শতাধিক লোক দা, লাঠি দিয়ে বসিয়ে রেখে ট্রাকে মাটি ভরাট শুরু করে। এসময় আমার মা বাধা দিলে তাকে মারধর করতে থাকে। এসময় আমার ছোট ভাই কামরুল ইসলাম ৯৯৯ ফোন দিলে পুলিশ আসে। তারা আমার মা এবং ছোট ভাইকে নিয়ে যায়। মা’কে হাসপাতালে ভর্তি করে এবং কামরুলকে থানায় নিয়ে যায়।
ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন মৃত রমজান আলী ডিলারের স্ত্রী সখিনা বেগম বলেন, স্বামীর ক্রয়কৃত জমি রক্ষা করতে গিয়ে ট্রাকের সামনে দাড়িয়ে ছিলাম। মহিউদ্দিন ও কাশেমের লোকজন ছেলেকে আটকে রেখে আমাকে মারধর করে। পুলিশ তাদের পক্ষ নিয়ে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে ছেলেকে থানায় নিয়ে সারারাত বসিয়ে রাখে। সেই সুযোগে জমিতে মাটি ভরাট করে টিনের দুটি চালা তুলে।
কামরুল ইসলাম বলেন, পুলিশী সহযোগিতার জন্য ৯৯৯ কল দিয়েছিলাম। উল্টো পুলিশ গিয়ে আমাকে থানায় এনে সারারাত বসিয়ে রেখে শুক্রবার বিকালে ছাড়ে। এই সুযোগে কাশেম এবং মহিউদ্দিন জমিতে মাটি ভরিয়ে টিনের দুটি চালা তুলে জমি বেদখল দেয়।
স্থানীয় রফিকুল ইসলাম ও আবুল হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা দেখছি উভয়পক্ষ জমিটি ভোগ দখল করছে। কিন্তু হঠাৎ করে রাতারাতি জমিতে মাটি ফেলে চালা তৈরি করা হয়েছে। ভালুকায় জোরযার জমি তার। এটি এখানেও প্রমাণিত হয়েছে।
জমি দখলকারী হাফিজ মহিউদ্দিন বলেন, ২৫ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে আমার মা রাহাতান নেছা বিবি সাবেক ২৩ নম্বর দাগে ১৬ জমি ক্রয় করেন। মা মারা যাওয়ার পরে আমরা ভাই বোনেরা জমির মালিক হই। এখন জমি আমি আমার দখলে নিয়েছি।
ভালুকা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ছোট ভাই আবুল কাশেম বলেন, আমি ব্যবসায়ী। মাটি ভরাট হচ্ছে আমার ব্যবসা। মহিউদ্দিন বলেছে তার জমিতে মাটি ভরাট করে দিতে তাই আমি দিয়েছি। কারো জমি বেদখল দেয়নি।
কামরুল ইসলামকে আটকের বিষয়ে ময়মনসিংহ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া পুলিশ কাউকে আটক করা রং ফুল কনসাইনমেন্ট। এটা এক ধরনের ফৌজধারী অপরাধ।
ভালুকা থানার ওসি মাইন উদ্দিন বলেন, একই জমি প্রথমে হাফিজ মহিউদ্দিনের পরিবার এবং পরে রমজান আলী ডিলার একই লোকের কাছ থেকে ক্রয় করে। দীর্ঘদিন জমিটি উভয় পক্ষ ভোগদখল করেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে জমির মালিক মহিউদ্দিন। তাই জমিতে মাটি ভরাটের কাজ চললে সেখানে দূর্ঘটনার আশংকায় কামরুল ইসলামকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছিল। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাকে আবার ছেড়ে দেয়া হয়।
ভালুকা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, জমিটি নিয়ে আমিও অনেকবার সালিশ করেছি। তবে কোন সমাধান হয়নি। আমার ভাই যদি কোন অন্যায় করে থাকে তার দায়ভার থাকেই নিতে হবে।
বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে গত ১৭ অক্টোবর ২০১৫ সালে আদালতে মামলা হয়। ১৯ অক্টোবর আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে ভালুকা সহকারী কমিশনার ভ‚মিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। ওই বছরের ৩০ নভেম্বর সহকারী কমিশনার ভ‚মি সাখাওয়াত হোসেন আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেন। সেখানে উল্লেখ করেন হাফিজ মহিউদ্দিনদের দখলে ৯ শতাংশ এবং কামরুল ইসলামদের দখলে রয়েছে ৭ শতাংশ জমি। দুই পক্ষ’ই জমিটি ভোগ দখল করছে।