পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে সাংবাদিক নির্যাতনের এসব ঘটনা ঘটছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগায়। অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক ও সাংবাদিকরা যে শুধু সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঘটনাস্থলে প্রকাশ্যে এমন হামলার শিকার হচ্ছেন তা নয়; দেশের বিভিন্ন স্থানে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সাংবাদিকদের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালানোর বহু ঘটনা ঘটেছে। ঢাকাসহ সারাদেশে বিগত ২০১৮/১৯ সালে এ ধরনের নানা হামলায় বহু অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক ও সাংবাদিক মিথ্যা মামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক।
আরও উদ্বেগজনক হলো সাংবাদিকদের ওপর হামলা-নির্যাতনের বেশিরভাগ ঘটনারই সুষ্ঠু বিচার হচ্ছে না। সাংবাদিক নির্যাতন ও সাংবাদিক হত্যার যথাযথ বিচার না হওয়া স্পষ্টতই অপরাধীদের দায়মুক্তি দিচ্ছে। একে সাংবাদিকদের ওপর হয়রানি, নির্যাতন ও হামলার ঘটনা বাড়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন সাংবাদিক নেতারা।
সাংবাদিকরা যে কতটা অনিরাপদ পরিবেশে কাজ করছেন তার একটা দৃষ্টান্ত বলা যেতে পারে যশোরের বেনাপোলে অনুপ্রবেশকারী হিসাবে কাজলকে আটক করে তার দুটি হাত পেছনে হ্যান্ডকাপ দিয়ে বেঁধে রাখে পুলিশ।
এসব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ (বনেক) কেন্দ্রীয় পরিষদের উপদেষ্টা মেয়াদী সেলিম আহমেদ, খন্দকার সাইফুল ইসলাম সজল ও সভাপতি মোহাম্মদ খায়রুল আলম রফিক, সিনিয়র সহ সভাপতি তাজবির সজিব, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আসাদ, যুগ্ম সম্পাদক বাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রেজা, মাসুদ রানা, বিভাগীয় সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক, দপ্তর সম্পাদক এইচ এম এ তারেক ভূঞা, প্রচার সম্পাদক নাহিদুর রহমান বিদ্যুৎ, বিভাগীয় সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, আইন বিষয়ক সম্পাদক নাসিম শরীফসহ আরও অনেকেই।
বনেকের এক বিবৃতিতে নরসিংদীর তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে।
মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, সংবাদমাধ্যমসহ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে সাম্প্রতিক ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’। একদিকে, এমন আইন ও নানারকম ভয়ভীতি-হুমকির কারণে সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত হয়ে উঠছে; আরেকদিকে, শারীরিকভাবে হামলা ও হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক ও সাংবাদিকদের। এসব হামলা-নির্যাতন সাংবাদিকতা পেশাকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে এবং তথ্যপ্রকাশে বাধা দেওয়ার মধ্য দিয়ে তা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকেও খর্ব করছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
বনেকের নেতারা অভিযোগ করে আসছেন যে, অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় সরকারের ভূমিকা অনেকটাই নীরব। কিন্তু গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন জরুরি। এ অবস্থায় অবিলম্বে অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক ও সাংবাদিকদের ওপর সংঘটিত সব হামলা-নির্যাতনের যথাযথ বিচার নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।