Header Image

ফুলবাড়িয়ায় যুদ্ধবিধবা উর্শী ঋষির থাকার ঘর করে দিলেন কেন্দ্রীয় জাপা নেতা মুক্তিযোদ্ধা বাবুল 

সাইফুল ইসলাম তরফদার, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
স্বাধীনতা যুদ্ধে স্বাধীনতা বিরোধীদের
হাতে স্বামী হারানো উর্শী রানী ঋষির জীবনে সুখের সন্ধান মেলেনি। জীবনের শেষ প্রান্তে
এসে ভঙ্গুর শরীর নিয়ে জীবনকে বাচিয়ে রাখতে পাড়ায় পাড়ায় ভিক্ষা মেগে। যেই স্বাধীনতার
যুদ্ধে তরুণ স্বামীর জীবন গেছে তাকে হতে হয়েছে অকাল বিধবা সেই স্বাধীন দেশে তার
জীবিকার নিশ্চয়তা নেই। স্বামীর রেখে যাওয়া এক টুকরো জায়গা থাকলেও সেখানে নিরাপদ
একটা ঘর উঠিয়ে মাথাগোচার করে শান্তিতে ঘুমাবে সেই সক্ষমতাও তার দীর্ঘ জীবনে কখনও
হয়নি। সারা দিন ভিক্ষা করে এসে যে খুপরিটিতে ঘুমাতেন তাও কাল বৈশখী ঝড়ে উড়িয়ে
নিয়ে যায়। সারারাত থাকতে হয়েছে তাকে খোলা আকাশের নিচে। কান্না নিয়ে দিনভর ঘুরে
বেড়ান বিভিন্ন জনের দারে দারে। এই খবর পৌছে একজন যুদ্ধজয়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহফিজুর
রহমান বাবুলের কানে। জাপার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হৃদয়বান এই মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধবিধবা বৃদ্ধা
উর্শী রানী ঋষির খোঁজ নিয়ে নিজে উদ্যোগে একটি ঘর বানিয়ে দেবার ব্যবস্থা করেন। গত
বুধবার খুব দ্রæত সময়ের মধ্যে জিনিসপত্র কিনে কাচা টিন শেঠ একটি ঘর করে দেন এই
বৃদ্ধাকে। তাৎক্ষনিক খাবার চলার মত ব্যবস্থাও করে দেন তিনি।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার পুটিজানা ইউনিয়নের দাওশা গ্রামের বিধবা বৃদ্ধ উর্শী
রানী ঋষি ঘর পাবার পর বলেন, এক টুকরো জায়গা থাকলেও বসবাসের উপযোগী ঘর ছিলনা। ঘর
পেয়ে আনন্দিত হয়েছি। ‘আমার স্বপ্নের মতো লাগছে। অনেক কষ্টের জীবন। ভাবিনি একটি
টিনের চালা ঘর পাবো। আমি অত্যন্ত খুশি। এখন নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে পারবো।
যুদ্ধের সময় স্বামীকে রাজাকার-আলবদলরা মেরে ফেলেছে। আমি একজন ভিক্ষুক। আগে একটি
মাটির ঘরে জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিলাম। জীবনের বেশির ভাগ সময় কষ্টে রাত কাটাতে হত। গত পরশু
দিন কাল বৈশাখী ঝড়ে আমার শেষ সম্ভলটুকু উড়িয়ে নিয়ে যায়। সারারাত বৃষ্টিতে ভিজতে
হয়েছে।
এই বিধবার কথা শুনে এগিয়ে আসেন জাতীয় পার্টী কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির
সাংগঠনিক সম্পাদক, ময়মনসিংহ জেলা জাপা’ সহ-সাধারণ সম্পাদক, ফুলবাড়ীয়ার
কৃতিসন্তান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহফিজুর রহমান বাবুল। তিনি গত বুধবার পুটিজানা উর্শী
ঋষির বাড়িতে গৃহ নির্মাণ সামগ্রী পৌছে দিয়ে ঘর তৈরী করে দেন।
পুটিজানা ইউনিয়নের জাপার সদস্য সচিব জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, আমরা এই ভিক্ষুকের
করুনদৃর্শ্য দেখে জাপার কেন্দ্রীয় নেতা, বীরমুক্তিযোদ্ধা মাহফিজুর রহমান বাবুলকে জানালে
তিনি গত বুধবার দুপুরে ভ্যানযোগে সিমেন্টের খুটিঁ, টিন সহ যাবতীয় নির্মাণ
সামগ্রী পৌছিয়ে দেয়। নেতার নিজ অর্থে বৃহস্পতিবার কাঠমিস্ত্রী দিয়ে ঘর নির্মাণ করা
হয়। এসময় ছাত্রসমাজের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব সহ ইউনিয়নের অঙ্গ সহযোগি
সংঠনের নেতৃবৃন্দ সার্বিক সহযোগিতা করেন।
আনন্দিত হয়ে উর্শী ঋষী বলেন, এখন ঘর নির্মান হয়েছে, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি শান্তিতে
ঘুমাতে পারবো, আমার স্বামী যুদ্ধের সময় মারা গেছে। আজ আরেক মুক্তিযোদ্ধা আমার ঘর
নির্মাণ করে দিয়েছে। হে সৃষ্টি কর্তা তুমি মাহফিজুর সাহেব সহ তাঁর পরিবারের
সবাইকে সুস্থ্যতা দান কর এবং নেক হায়াৎ বাড়াইয়া দিও। আমি অনেকবার চিয়ারম্যান ময়েজের
কাছে গেছিলাম, একটি ঘর দেইন, আমারে ঘর দেয় নাই।বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহফিজুর রহমান বাবুল বলেন, আমি বিষয়টি জানার পর খুবই কষ্ট লেগেছে।
তাৎক্ষনিক পুটিজানা ইউনিয়নের জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দকে খোঁজ নিতে বলি। পরে
বিধবা অসহায় বৃদ্ধা উর্শী ঋষীর বাড়িতে ঘর নির্মাণের জন্য খুঁটি, টিনসহ সামগ্রী
পাঠাই। আমি ফুলবাড়ীয়াবাসীর পাশে আছি। চিরকাল থাকবো। উল্লেখ্য যে, পুটিজানা
ইউনিয়নে মসজিদ, মন্দির নির্মাণ ও পৌরসভার আলুর চপ বিক্রেতা কানাই বাবু কে ঘর
নির্মাণ করে দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!