Header Image

সন্তানের আবেগ জুড়ে স্মৃতিচারণ পিতা সাবেক শ্রীরামপুই ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম সফিয়ার রহমানের ….

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

বাবাকে আজ বড্ড মনে পড়ছে

বাবার সেই পুরনো শার্টটি আজও হেঙ্গারে টানিয়ে রেখেছে মা। মোটা কালো ফ্রেমের চশমাটি অতি যত্নে তুলে রেখেছে কাঁচের সুকেশে আর কাজ করা একটি ফ্রেমে ঝুলে রয়েছে সাদা-কালো ছবিটি । মনে হয় এ বুঝি বাবা এসে মাকে বলবে ‘এই দাও আমার শার্ট আর চশমাটা’। আর দিনভর মায়ের অপেক্ষার প্রহরের সাথে আমি আজও যেন প্রতীক্ষায় রয়েছি কখন বাবার ফোন এসে ভেজে উঠবে আর স্নেহভরা কন্ঠে বলবে ‘বাবু’ কেমন আছ? -জানি এ অপেক্ষার শেষ নেই…। অপেক্ষার সাগরে আরো একটি বছর যোগ হয়ে গেল । আজ বাবার মৃত্যুবার্ষিকী । ভীষণ মনে পড়ছে বাবা তোমায় আজ এ মৃত্যুবার্ষিকীর দিনটিতে…। “রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বাইয়ানিস সাগিরা” -আল্লাহ তোমায় জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন…!!

বাবাকে আজ বড্ড মনে পড়ছে- কেমন আছ তুমি? কোথায় আছ তুমি? কি কর তুমি? জানতে বড় ইচ্ছে হয়! তোমার জন্য আমার বুকের গহীনটায় কেমন যেন পুড়ে দিবারাত্রি। এই সেই মে মাস যে মাসে তুমি শুধু আমাদেরকেই নয় সমস্ত পৃথিবীকেই বিদায় জানিয়ে চলে গেছ সকল মায়াজাল ছিন্ন করেছ না ফেরার দেশে। তোমার চলে যাওয়ার মুহূর্তে যখন তোমাকে দেখলাম তখন তুমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলে। শত-হাজারো ডেকেছি, তোমায় ধরে কত কেঁদেছি – শুধু তোমার মুখের একটি বর্ণমালা শুনার জন্য, তা হয়নি – সেজন্য আজও হৃদয়ে রক্তক্ষরণ থামেনি। তুমি দেখতে পাওনি হাজারো মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে ঠাই নিয়েছ তোমার আসল বাশের ঘেরা ঘরে। তুমি এও দেখতে পাওনি মায়ের পড়া ধবধবে সাদা শাড়ির সৌন্দর্যতা! সেই সাদা শাড়ি আজও পড়ে চলেছে মা। হাতে চুড়ি নেই, কানে দুল নেই, গলায় হার নেই, –এ কেমন মা কে দেখছি– এ যেন আমার মা নয়! কখনো রঙ্গীন শাড়ি কিনে দিলে পড়ে না। বলে, “এসব আমার জন্য নয়- কার জন্য পড়ব” -এ কথার মাঝে যে কতটুকু ব্যাথা জড়িয়ে আছে যদি তুমি শুনতে!

বাবাকে আজ বড্ড মনে পড়ছে- পড়ালেখার জন্য তুমি কত শাসন দিতে মাঝে মধ্যে মার দিতে, পরক্ষনেই আদর করে ‘বাবু’ বলে ডাকতে, গোসল করিয়ে দিতে, গল্প শুনাতে, …বাবা কতদিন হল তোমার হাতে কোন মার খাইনা, খুব ইচ্ছা হচ্ছে মার খেতে, শুনেছি বাবা-মায়ের হাতে মার খেলে নাকি শরীরের ঐ অংশ বেহেস্তে যায়। জানো বাবা, তোমার স্নেহ আর শাসন, আর আদর্শে বড় হওয়া তোমার বড় ছেলে এ, এস, এম নেওয়াজ নিশাত এখন তোমার মতোই জনগণের সেবা করে যাচ্ছে সে এখন তোমার মতো তোমার ইউনিয়নের স্বর্নপদকপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ।

বাবাকে আজ বড্ড মনে পড়ছে- মনে হয়, আমার মাথার উপর বটবৃক্ষের ছায়াটা নেই। সন্তানের একটু ব্যাথা ও কষ্ট হলে তোমার সহ্য হতোনা। বাইরে থেকে বাড়ি ফিরতে একটু দেরি হলে ব্যাকুল হয়ে পড়তে। সব সময় আগলে রেখেছিলে অক্টোপাসের মত ।

বাবাকে আজ বড্ড মনে পড়ছে- আমার বাবা মরহুম শফিয়ার রহমান ( চেয়ারম্যান ) ছিলেন একজন আদর্শবান ও কর্তব্যপরায়ন মানুষ । মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজ করে গেছেন। অপরের দু:খে তিনি দূ:খিত হতেন, হাত বাড়িয়ে দিতেন অনায়াসে। তিনি নিজের সন্তানের চেয়েও অপরের সন্তানকে বেশি ভালবেসেছেন।জনপ্রতিনিধি হওয়ায় এলাকার সবাই বাবাকে খুব ভালোবাসতো ।
বাবা তুমি ছাড়া আমি একজন অসম্পূর্ণ মানুষ। তুমি থাকলে যা শিখতাম, তা হয়নি আর আমার জীবনে। তবে বাবা তোমার আদর্শ যেন জীবনে প্রতিফলিত হয় আর তোমার এ আদর্শ নিয়েই আগামী পথগুলো যেন চলতে পারি সে দোয়া কর।

বাবাকে আজ বড্ড মনে পড়ছে- বাবা তোমাকে নিয়ে লিখলে শেষ হবে না আমার হৃদয়ের হার্ডডিস্কের এক মেগাবাইট । ডিলেট করতে পারিনা তোমার হাজারো স্মৃতিরফাইলটা । স্মৃতিপটে রয়ে যাবে তোমার স্মৃতি চিহ্নটা । শুধু মন খারাপ হয়ে যায়- হাত বাড়ালে তোমাকে আর ছোঁয়া যাবে না, পা ছুঁয়ে সালাম করা হবে না, কোনদিন আর আদর করবে না, খুশী হবে না আমার সাফল্যে। মনে পড়ে, একবার তুমি কোনো একটা ভুলের কারণে আমাকে খুব মেরে ছিলে তারপর আমি খুব কান্না করলে তুমি আমাকে বাজারে নিয়ে গিয়ে একটা ফুলের তোড়া কিনে দিয়েছিলে সৃষ্টিকর্তা তোমাকেও এভাবে ফুলের তোড়া দিয়ে জান্নাতে রাখুন ।-আমীন!!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!