মোঃআল-আমিন, গাজীপুর প্রতিনিধিঃ
অবশেষে র্যাব-১ এর অভিযানে গাজীপুর মহানগরীর বাসন সড়ক এলাকা হতে অপহৃত শিশু সাব্বির হোসেন(০৬) কে ১৮ ঘন্টার মধ্যে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার, সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের ০৪ সদস্য গ্রেফতার।
তারা হলো নেত্রকোনার বেতাগী গ্রামের মৃত আলী মর্তুজার ছেলে নাজমুল হুদা ওরফে শামীম ও তার স্ত্রী আবু মিয়ার মেয়ে সুমা আক্তার(২৫) একই জেলার বরহাট্রা থানার চয়াহাল গ্রামের মৃত আফজাল হোসেনের ছেলে নয়ন মিয়া ও তার স্ত্রী আবুল কালামের মেয়ে সুরাইয়া আক্তার শিউলি(২৬)।
পুলিশ জানায়, গত ১০ মে ২০২০ ইং তারিখ গাজীপুর মহানগরীর বাসন সড়ক এলাকার ভাড়াটিয়া মোঃ আবু বকর ছিদ্দিক এর একমাত্র শিশু সন্তান মোঃ সাব্বির হোসেন(০৬) নিজ বাসা থেকে নিখোঁজ হয়। পরিবারের সদস্যরা সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখোজি করে।একপর্যায়ে হঠাৎ নিখোঁজের
বাবার মোবাইল ফোনে অজ্ঞাতনামা নম্বর থেকে ফোনে জানানো হয় তার শিশু সন্তান মোঃ সাব্বির হোসেন(০৬) কে তারা অপহরণ করেছে এবং মুক্তিপণ হিসেবে ০৫ লক্ষ টাকা দাবি করে। অন্যথায় অপহরণকারীরা তার ছেলেকে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলার কথা বলে।
ঘটনায় নিখোঁজের পরিবার রাতে বাসন থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অপহরণের মামলা দায়ের করেন।
র্যাব জানায়,অপহৃতের পরিবারের পক্ষে থেকে র্যাব-১, স্পেশালাইজড কোম্পানী, পোড়াবাড়ী ক্যাম্প, গাজীপুর এর কাছে অপহৃতকে উদ্ধারের জন্য আইনগত সহায়তা কামনা করেন।অভিযোগ পেয়ে অপহৃতকে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব-১, স্পেশালাইজড কোম্পানী, পোড়াবাড়ী ক্যাম্প কমান্ডার লেঃ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল-মামুন, (জি), বিএন দ্রুততার সাথে ছায়া তদন্ত শুরু করেন এবং গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করেন।পাশাপাশি আভিযানিক একটি দল জিএমপি গাজীপুর ও রাজধানীর উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে।এসময় তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অপহরণকারীদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চীত হয়।কিন্তু অপহৃতের প্রাণনাশের সঙ্কা থাকায় কৌশল করে অবশেষে মুক্তিপণের টাকা লেনদেনের সময় অপহরণকারী চক্রের মূলহোতা নাজমুল হুদাকে ১১ মে ২০২০ ইং তারিখ রাত আনুমানিক ০৩.০৫ ঘটিকায় গ্রেফতার করে।পরে তার দেয়া তথ্যমতে অন্য আসামীদের গ্রেফতার করা হয়।
আটককৃত আসামীদের দেওয়া তথ্যমতে র্যাব রাজধানীর উত্তরা এলাকার একটি ফ্ল্যাটের পরিত্যাক্ত গোপন কক্ষ হইতে মুমূর্ষ অবস্থায় অপহৃত মোঃ সাব্বির হোসেন(০৬), উদ্ধার করে।
এসময় আসামীদের নিকট হতে ০৪ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। অপহরণকারী চক্রের ২জন অপহৃতদের সাথে একই বাড়ীতে ভাড়া থাকত। প্রতিবেশী ভাড়াটিয়া মোঃ নাজমুল হুদা অরফে শামীম ও তার বন্ধু নয়ন মিয়ার পারস্পারিক যোগসাজসে সাব্বিরকে নিয়ে একটি বাসায় লুকিয়ে রাখে এবং তারা স্বাভাবিক কাজকর্ম করে। সন্ধ্যায় তারা বাসা পরিবর্তন করে ।
র্যাব অভিযান শুরু করলে রাতে তারা উত্তরার ৯নং সেক্টরের নির্মাণাধীন বাসায় শিশুটিকে লুকিয়ে রাখে এবং ধরা পড়ার ভয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে বলেও জানায় র্যাব
র্যাব-১, স্পেশালাইজড কোম্পানী, পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লেঃ আবদুল আল মামুন জানান, আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘ দিন ধরে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অপহরণ, চুরি ও ছিনতাইসহ নানাবিধ অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত। তারা পরস্পর যোগসাজসে মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে শিশু সাব্বির কে অপহরণ করেছিল বলে স্বীকার করে।
ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা পেশায় গার্মেন্টস কর্মী। তাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল যেকোন উপায়ে বিপুল টাকা উপার্জন করে গাজীপুর শহরে একটি ফ্ল্যাট বাসা ক্রয় করে সুন্দর ভাবে জীবন-যাপন করবে। তাদের এই স্বপ্ন পূরণ করার জন্য তারা এই অপহরণ করেছে বলে স্বীকার করে এবং তারা ধনী পরিবারের শিশুদেরকে টার্গেট করে কার্যক্রম করতে থাকে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
উল্লেখ্য, গাজীপুরে পর পর দুইটি শিশু অপহরণের ঘটনা ঘটেছে।গত এপ্রিল মাসের ৯ তারিখে কোনাবাড়িতে অপহরণের একটি ঘটনা ঘটে।পরে চলতি মাসের (মে-৪ তারিখে) মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে অপহরণকারীরা শীশু আলিফ (৫) কে হত্যা করে এবং পরবর্তীতে অপহরণকারী জুয়েল র্যাব এর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নীহত হয়।