আরিফ রববানীঃ
করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে দেশের নিম্ন বিত্ত ও মধ্যবিত্ত সহ সর্বস্তরের মানুষের। এমতাবস্থায় নিম্নবিত্তরা বিভিন্নস্থানে মানুষের দ্বারে – দ্বারে গিয়ে ত্রাণের জন্য দ্বারস্থ হতে পারলেও বেকায়দায় পড়েছে মধ্যবিত্তরা। তারা না পারছে কারো কাছে চাইতে আবার না পারছে ক্ষুধার জ্বালা সইতে। তাদের নিরভ আর্তনাদ নিরসনে অবশেষে ময়মনসিংহের মানবিক পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামানের কানে গেলে পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে জেলা পুলিশ রাতের আধারে অতি গোপনে এসব মধ্যবিত্তদের ঘরে ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌছে দিচ্ছে।১২ই মে মঙ্গলবার রাতে বিভাগীয় নগরীর খাগডহরের তালতলা ও ঢোলাদিয়া ও কোতুয়ালী মডেল থানা,নগরীর ১নং ফাঁড়ি,২নং ফাঁড়িসহ পুলিশের সকল কার্যালয়ের পক্ষ থেকে এই খাদ্য সহায়তা পৌছে দেয়া হয়।
তাছাড়া করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় টানা সরকারী ছুটিতে মানুষজনকে ঘরে অবস্থান নিশ্চিত, সকল হাট-বাজার নতুন করে ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখা, জরুরি বা বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হলে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং লকডাউন কঠিনভাবে মান্য করতে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ মানবিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে। এছাড়া নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ সকল ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলারও পরামর্শ দিয়ে পুলিশ মুজিব বর্ষে নিজেদেরকে জনগণের পুলিশ হিসাবে পরিচয় বহন করে তুলার যে অঙ্গীকার ছিলো তা বাস্তবায়নে সক্ষম হন।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে টানা সরকারি ছুটি ও লকডাউনে সর্বস্তরের পেশার মানুষ বেকার হয়ে পড়ায় এই সব নতুন বেকার ও কর্মহীন মানুষদের সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তা দিলেও ব্যক্তি পর্যায়ে এবং দলগতভাবে এগিয়ে আসে জেলা পুলিশ। পুলিশ সুপারের নির্দেশে নিজস্ব অর্থায়নে সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী কৃষি শ্রমিক, দিনমজুর, রিক্সা/ভ্যান চালক, কুলি, নাপিত, বেদে পরিবার, পরিবহন শ্রমিক, ভিুক, প্রতিবন্ধী, পথশিশু, স্বামী পরিত্যক্তা/বিধবা নারী এবং হিজড়া সম্প্রদায়কে খুজে খুজে নিয়মিত খাদ্য সহায়তা বিতরণ করে আসছে। এপর্যন্ত প্রায় তিন হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করে জেলা পুলিশ। অনেক ক্ষেত্রে রেঞ্জ ডিআইজি ব্যারিস্ট্রার হারুন অর রশিদ, অতিরিক্ত ডিআইজি ডঃ আক্কাস উদ্দিন ভুইয়া, পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারগণ এই ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তা বিতরণ কাজ উদ্বোধন করেন।
এছাড়াও পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে রান্না করা প্যাকেট খাবার রাতে নিজ হাতে হাতে পৌছে দেয় অসহায়, অভাবগ্রস্ত ছিন্নমুলদের ঘরে ঘরে। পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত আর্থিক সহযোগিতায় ডিবি ওসি শাহ্ কামাল আকন্দের সরাসরি উপস্থিতি ও তত্বাবধায়নে ঘুরে ঘুরে এই খাবার প্যাকেট বিতরণ করা হয়। রাতের বেলায় যে সকল ছিন্নমুল, বয়স্ক, অসহায়, রিস্কা চালক অটো চালক সামান্য এক বেলা খাবার না পেয়ে অনাহারে পার করছে তাদের হাতে হাতে খাবার পৌছে দিতেই গোয়েন্দা পুলিশের এই উদ্যোগ।
ডিবি ওসি শাহ্ কামাল আকন্দ জানান, জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে রাত্রিকালে নগরীতে টানা দশ দিনে প্রায় হাজারো ভাসমান ছিন্নমুল, হতদরিদ্র অসহায় মানুষের মাঝে রান্নাকৃত খাবার বিতরন করা হয়েছে। নগরীতে ঘুরেঘুরে এই রান্নাকৃত খাবার বিতরনও করেছেন ডিবির ওসি শাহ কামাল আকন্দসহ ডিবি পুলিশ। ওসি ডিবি আরো জানান, মুজিবর্ষের অঙ্গিকার পুলিশ হবে জনতার এই প্রতিপ্রাদ্য বাস্তবে রূপ দিতে ময়মনসিংহ পুলিশ কাজ করছে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে নতুন করে অভাবগ্রস্থ ও বেকার হয়ে পড়া মধ্যবিত্ত যারা লোকলজ্জার ভয়ে মানুষের কাছে এবং মানুষের সামনে কোন ধরণের সহায়তা চাইতে পারছেনা তাদেরকে সহায়তা করতে পুলিশ সব সময় কাজ করছে। মোবাইল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকেও তথ্য পেয়ে মধ্যরাতে খাদ্য পৌছে দিচ্ছে জেলা পুলিশ। যা চলমান রয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে অসহায়, বেকার ও কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষকে সহায়তা করা যেন ময়মনসিংহের পুলিশ সুপারের নেশায় পরিণত হয়েছে এমনটাই মনে করছেন ময়মনসিংহ রাজনেতিক ও সামাজিক বিশ্লেষকরা।