স্টাফ রিপোর্টারঃ
হালুয়াঘাটে ৪৬০ জনের তালিকায় ৫৪ বার একই নম্বর, নেপথ্যে চেয়ারম্যান পরিবার
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ১০ নং ধুরাইল ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত নগদ অর্থ সহায়তা তালিকায় ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তালিকায় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ওয়ারিছ উদ্দিন সুমনের একাধিক নিকট আত্মীয়র মোবাইল নম্বর অর্ন্তভূক্ত থাকায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তালিকায় রয়েছে সহদোর ভাই, মামাতো ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী’র নাম ও একাধিক মোবাইল নম্বর।
কোভিড-১৯ মহামারীর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে চলমান লকডাউনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারকে ঈদ উপলক্ষে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা দিচ্ছে সরকার। তবে ১০ নং ধুরাইল ইউনিয়নের প্রনীত তালিকায় অসংগতির কারণে একাধিকবার সংশোধন করা হলেও তা এখনও চূড়ান্ত করা যায়নি। এতেকরে ইউনিয়নটির উপকারভূগীরা প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার থেকে বঞ্চিত থাকছে ঈদের পূর্বে।
অভিযোগে জানা যায়, গত ১০ মে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত অর্থ সহায়তার আওতায় ১০ নং ধুরাইল ইউনিয়নে ৪৬০ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করে হালুয়াঘাট উপজেলা প্রশাসন। এতে চেয়ারম্যানের মামাতো ভাই আব্দুর রহিমের ব্যবহৃত মোবাইল ০১৯৭৩০৪৯৭৯৭ ও ০১৭২৩৪০৯৭৯৭ নাম্বার দুটি ৫৪ বার ওঠানো হয়। এছাড়াও তালিকায় আরও বেশকয়েটি নম্বর একাধিকবার অন্তর্ভূক্ত করা, উপকারকারী নাম ঠিকানা থাকলেও নম্বর দেয়া হয়েছে অন্যকারও এমন অনিয়ম রয়েছে বিস্তর। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্ন মাধ্যমে সমালোচনা মূখর হয়ে উঠলে গত ১৬ মে তা সংশোধন করে উপজেলা প্রশাসন পূনরায় নতুন তালিকা প্রকাশ করে। সংশোধিত এই তালিকায়ও একই রকম অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়। যা নিয়ে জেলাব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
সংশোধিত তালিকায় চেয়ারম্যানের ভাই মোঃ শফিক উদ্দিন রিপনের ৩টি নম্বর যথাক্রমে ০১৭৩৯১৫৯২৮৪, ০১৬৪৩৮৫২০৪০, ০১৮২১২৭৪৪৪৫, ১২ বার অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। মামাতো ভাই আব্দুর রহিমের ০১৯৭৩০৪৯৭৯৭ নম্বর ৩ বার, তার স্ত্রী হালিমা খাতুনের নম্বর ০১৭৬০৪৫২২২৫ অন্তর্ভূক্ত হয়েছে একবার। তবে, একাধিকবার ব্যবহৃত প্রতিটি নম্বরের প্রেক্ষিতে উপকারভোগীর নাম ও ঠিকানা স্থানীয় জনগন হলেও তারা এই বিষয়ে অবগত নন বলে সূত্র জানায়।
১০নং ধুরাইল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ ফারুক মিয়া অভিযোগ করে বলেন, প্রকাশিত তালিকার ১২৩নং ক্রমিকে তার নাম ও পিতার নাম ঠিক থাকলেও মোবাইল নম্বর দেয়া আছে অন্যকারো। তার নাম তালিকায় আছে তিনি সেটিও জানতেন না। সম্প্রতি তিনি বিষয়টি জেনে হতবাক।
এ বিষয়ে হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রেজাউল করিম বলেন, প্রাধনমন্ত্রী ঘোষিত মানবিক অর্থ সহায়তা কার্যক্রমের তালিকাটি অতি অল্প সময়ে প্রনয়ন করা হয়। এক্ষেত্রে কিছু ভূল ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে তা পূনরায় সংশোধন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ১০ নং ধুরাইল ইউনিয়নের সংশোধিত তালিকায় চেয়ারম্যানের পরিবারের কারও নাম বা নম্বর আছে কিনা সেটি তার জানা নেই। যদি থাকেও থাকে তারা পাবে না। এক্ষেত্রে পূর্বের তালিকা অসংগতি থাকায় ট্যাগ অফিসার ও ইউপি চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছেন বলেও তিনি জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, সরকার ঈদের পূর্বে এই অর্থ সহায়তা প্রদান করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তবে ভূল ত্রুটির জন্য যথাসময়ে তালিকা প্রেরণ করতে না পারলে এটি ঈদের পরে দেয়া হবে। এক্ষেত্রে তালিকা সম্পূর্ণ সঠিক থাকেল উপকারভোগীরা ভাতা পাবে নচেত পাবে না।
অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ওয়ারিছ উদ্দিন সুমন বলেন, তালিকাটি অতি দ্রুত প্রণয়ন করায় কিছু ভূল ত্রুটি হয়েছে যা সংশোধন করা হয়েছে। আমার পরিবারের কারও নাম বা মোবাইল নাম্বর তালিকায় থাকলে তা আমার জানা নেই। একটি পক্ষ আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চক্রান্ত করছে।
এদিকে প্রকাশিত তালিকায় বিস্তর অনিয়ম ও অপকৌশলে উপকারভোগীদের টাকা আত্মসাতের পায়তারা করায় ইউনিয়ন যুবলীগ তথা যুব সমাজ প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, র্যাব-১৪ বরাবর অভিযোগ দিয়েছে ১০নং ধুরাইল ইউনিয়ন যুবলীগ আহবায়ক প্রভাষক মোঃ জসিম উদ্দিন তালুকদার। তিনি অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার আত্মসাৎকারীদের বিরূদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে জোড় দাবী জানিয়েছেন।