
গৌরীপুর প্রতিনিধিঃ
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে যৌতুকের টাকার জন্য শুধু বউ নয়, শ্বশুরকে পিটিয়ে প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহবুব রহমান এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। শ্বশুর বাড়ি
থেকে নেয়া যৌতুকের টাকার ভিডিও ভাইরাল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক
আর মোবাইলে মোবাইলে ছড়িয়ে যাচ্ছে সেই ভিডিও। এ ঘটনায় গৌরীপুর থানায়
নির্যাতিত গৃহবধূ আফরোজা আক্তার রেখা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। ঘটনার
প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে নিশ্চিত করেন গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ
মোঃ বোরহান উদ্দিন। তিনি জানান, এ ঘটনায় শনিবার ৬ জুন রাতে ২০২০ তারিখে
গৌরীপুর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।
অভিযোগ, ভিকটিম ও প্রতিবেশীদের সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের
রামকৃষ্ণপুর গ্রামের আব্দুল কদ্দুছের কন্যা আফরোজা আক্তার রেখা নেত্রকোনা সরকারি কলেজে
হিসাব বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স উর্ত্তীণ হন। একই সঙ্গে প্রতিবেশী গ্রাম
পাজুহাটির মোঃ আব্দুর রহিমের পুত্র মোঃ মাহাবুব আলম লেখাপড়া করেন। সঙ্গে লেখাপড়ার
সূত্র ধরে দু’জনের মাঝে দীর্ঘদিন যাবত প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। মাহাবুব আলমের
২০১৮সালে সহকারী শিক্ষক হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের
ধারাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। সরকারি চাকুরী পাওয়ার পরেই
বেঁকে বসেন মাহাবুব। রেখাকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয় ‘হয় চাকুরী-নয় টাকা’ ছাড়া
বিয়ে করা সম্ভব না। এ নিয়ে গ্রাম্য মাতাব্বর ও আত্মীয়-স্বজনের উপস্থিতিতে
মাহাবুবকে বিয়ে করতে রেখার পরিবার সাড়ে ৪লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন। সেই টাকাও বুঝে
নেন আবুল বাসার, মতিউর রহমান মন্ডল ও আব্দুল বারেকের মাধ্যমে। এ যৌতুকের টাকা গ্রহণ
ও প্রাপ্তীস্বীকারের রয়েছে একাধিক ভিডিও। যা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর
মোবাইলে মোবাইলে ছড়িয়ে যাচ্ছে সর্বত্র।
যৌতুকলোভী এ পরিবারের একাধিকবার নির্যাতনের শিকার হন আফরোজা আক্তার রেখা।
মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে রেখার বাবা আরও একাধিকার যৌতুকের টাকা দিতে বাধ্য
হন। এবারও দাবী এক লাখ টাকা। টাকা ছাড়া বাড়িতে প্রবেশ করতেও নিষেধ করে দেয়া হয়।
বৃহস্পতিবার ৪জুন,২০২০ রেখা তার বাবা আব্দুল কদ্দুছকে সঙ্গে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে যান।
টাকা ছাড়া যাওয়ায় আবারও শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হন রেখা। নিজের মেয়েকে
বাঁচাতে গেলে তিনিও নির্যাতনের শিকার হন। রেখাকে উদ্ধার করে গৌরীপুর উপজেলা
স্বাস্থ্য কমপে-ক্সে ভর্তি করা হয়েছে। মেয়ের জামাতা মোঃ মাহাবুব আলমের নেতৃত্বে হামলা
সংঘটিত হয়। হামলায় অংশ নেন মোঃ আব্দুর রহিম ও তার বড় ছেলে মোঃ আল্লাদ মিয়া,
তোফাজ্জল হোসেন।
এ ঘটনা সম্পর্কে মোঃ মাহাবুব আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে এ প্রতিনিধির সঙ্গে কথা
হয়। স্ত্রী’র সঙ্গে কি হয়েছে? এ প্রশ্ন করতেই মুঠোফোনের সংযোগবিচ্ছিন্ন করে
দেন। এরপর একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।
এ দিকে যৌতুকের টাকা গ্রহণের ৪টি ভিডিওতে দেখা যায়, গ্রাম্য মাতাব্বর বিষমপুর
গ্রামের আবুল বাসার, পাজুহাটি গ্রামের মতিউর রহমান মন্ডল ও বড়ইকান্দার আব্দুল বারেক
টাকা গণনা করে নিচ্ছেন। সেখানে বিয়ের ডকুমেন্টের বিষয়টিও ফয়সালা হয়। টাকা
গ্রহণের পর সাদা কাগজে লিখিত প্রাপ্তীস্বীকার করেন। সেই কাগজে উল্লেখ রয়েছে বিয়ের
পর ভবিষ্যতেও সমস্যা হলে তারা দায়-দায়িত্ব নিবেন।
অপরদিকে ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গৌরীপুর
উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মমতাজ বেগম। তিনি বলেন, যৌতুকের কারণে একজন
শিক্ষক এভাবে তার স্ত্রীর ওপর নির্যাতন করতে পারে-তা মেনে নেয়া যায় না। নির্যাতিত নারীর
আইনী সহযোগিতা ও অধিকার নিশ্চিতে পাশে থাকবে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
