Header Image

করোনায় ভাইয়ের লাশ ফিরিয়ে দিয়ে অনুতপ্ত ভাই

নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনাকালে অনেক অমানবিক ঘটনার সাক্ষী মানুষ। করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে লাশ দাফনে বাধা দেয়া, মসজিদের খাটিয়া না দেয়া, কোন ইমাম জানাযা পড়ালে তাকে মসজিদ থেকে বহিষ্কার করা। স্বয়ং করোনায় মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরাও  প্রাণভয়ে অমানবিক ঘটনা ঘটিয়েছেন। কেউ করোনা আক্রান্ত হলে তাকে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে পরিবার সহ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া। করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধ পিতা মাতাকে বনে-ডাস্টবিনের কাছে ফেলে দেয়া। করোনা আক্রান্ত হলে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া। করোনায় রাস্তায় থেকে মানবিক কাজ করা ও ভাড়া দিতে না পারা ভাড়াটিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। তবে, বর্তমানে এমন অমানবিক ঘটনা কম শুনা যায়।
করোনার ভয়ে যে বা যারা মানুষের সাথে অমানবিক আচরণ করেছেন ও লাশ দাফনে বাধা দিয়েছেন। সামাজিকভাবে বয়কট করেছেন এমন একটি ঘটনার খোঁজখবর নিতে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে গেলে আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশি, এলাকাবাসী বন্ধুবান্ধব আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। কেন এমন করেছেন জানিয়েছেন তার কারণ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরসভার ৫ নং সাতুতি ওয়ার্ডের বাসিন্দা
বাসিন্দা আব্দুল হাই গাজীপুরের স্কোয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় সপরিবারে বসবাস করতেন। সেখানে তার করোনার উপসর্গ দেখা দিলে গত মে (সোমবার) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরিক্ষা করে নিজ বাড়িতে বাড়ি ফেরার পথে মারা যান আব্দুল হাই। করোনায় মারা গেছে ভেবে লাশ নিয়ে এলাকাকে আসতেই বাধে বিপত্তি। অ্যাম্বুলেন্স দেখেই চটে বসেন এলাকাবাসী ও তার ভাই বাতিজারা। কোনোভাবেই লাশ নামতে না দিয়ে নিহতের স্ত্রী-সন্তানকে মারধর করে। বাধ্য হয়ে বাবার লাশ নিয়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয় ছেলে। লাশ দাফনের অনুমতি চাইতে মামার বাড়িতে গিয়েও প্রত্যাখ্যাত হয়। ওই অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্স চালক চালক লাশ গাড়ি থেকে নেমে চলে যায়। বাবার লাশ ভ্যান গাড়িতে নিয়ে রাতভর গৌরীপুরের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ঘুরেন মা-ছেলে। এমন খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন লাশ উদ্ধার করে এলাকাবাসী ও পরিবারের লোকজনদের বুজিয়ে লাশ দেয়। পরদিন ৫ মে (মঙ্গলবার) স্থানীয় প্রশাসন উপস্থিত থেকে তার লাশ দাফন করেন।
করোনায় সাধারন মানুষ বর্তমানে কতটুকু সচেতন হয়েছেন বা এমন অমানবিক ঘটনা নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া কি জানতে গৌরীপুর পৌরসভার সাতুতি এলাকায় গেলে উঠে আসে ভিন্ন এক চিত্র।
কেন আপনার ভাইয়ের লাশ বাড়িতে ডুকতে দেননি এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল হাইয়ের ভাই আব্দুল কাশেম বলেন, আমরা তো জানতাম না, আমার ভাই কিভাবে মারা গেছে। তখন তো ছিল করোনায় ভয়, তাছাড়া এলাকাবাসীও আমাদের ভয় দেখিয়েছে। তাই প্রথমে আমার ভাইয়ের লাশ প্রথমে বাড়িতে ডুকতে দেইনি। পরে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সেজুতি ধর (তৎকালীন) ও পুলিশ আমাদের আমাদের বুজিয়ে লাশ দিলে পরদিন গোসল দিয়ে দাফন করি। আগে যদি বুজতে পারতাম তাহলে আমরা এমন করতাম না। আমরা যা করছি আর কেউ যেন এমন অন্যায় কাজ না করে।
অপর ভাই আব্দুল কাঈয়ুম বলেন, আমরা আমাদের ভাইয়ের প্রতি অন্যায় করেছি। আমার ভাই যদি আমাদের মাফ না করে স্বয়ং আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করবে না।
এ ঘটনায় এলাকাবাসীও দুঃক প্রকাশ করছেন, বুজতে পেরেছেন তাদের ভুল। স্থানীয় উজ্জল মিয়া বলেন, এটা খুব দঃখজনক ঘটনা। এ ঘটনার পর থেকে এলাকাবাসী অনুতপ্ত। যা আমাদের করা মোটেও ঠিক হয়নি।
এ বিষয়ে হারুনুর রশিদ বলেন, আব্দুল হাইয়ের সাথে যা হয়েছে, তা অন্যায়। এমন যে আর কেউ না করে এজন্য তিনি এলাকাবাসীকে সচেতন করবেন।
গৌরীপুর পৌরসভার ৫ নং সাতুতি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আতাউর রহমান বলেন, আব্দুল হাইয়ের লাশ বাড়িতে ডুকতে দেয়নি এমন সংবাদ পাওয়ার পর গভীর রাতে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় পৌরসভার কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে। তবে, এটি গৌরীপুরের জন্য একটি কলঙ্কিত ঘটনা। এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে জন্য এলাকাবাসীকে সচেতন করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর তার পরিবার ও এলাকাবাসী অনুতপ্ত।
গৌরীপুর থানার ওসি মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, লাশ বাড়িতে ডুকতে না দেয়ার খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে পরিবারকে বুজিয়ে লাশ দেয়ার পরদিন উপস্থিত থেকে লাশ দাফন করা হয়। তবে, এর জন্য এলাকাবাসী ও পরিবারের লোকজন অনুতপ্ত।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিভিল সার্জন এবিএম মসিউল আলম বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা মোকাবেলায় সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে করতে কাজ করেছি। করোনা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করেছি এবং সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে এখনো কাজ করে যাচ্ছি। তবে, প্রথম প্রথম জেলার গৌরীপুর, ত্রিশাল ও ফুলপুরে কিছু অনাকাংখিত কিছু ঘটনা ঘটেছে। তা যেন আর না ঘটে, সেজন্য প্রশাসন কাজ করছে
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা মেনে ওয়ার্ড পর্যায় থেকে ইউনিয়ন থেকে উপজেলা পর্যন্ত মানুষকে সচেতন করার কাজ করেছি। তাছাড়া করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া ও হোমকোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করেছি। যে কারনে আমরা সঠিক ভাবে করোনা মোকাবের করতে পেরেছি। তবে, সচেতনতার অভাবে যে সব অনাকাংখিত ঘটনা ঘটেছে। এমন ঘটনা যেন না ঘটে, সে জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!