Header Image

গাজীপুর যেন মশার নগরী  (প্রথম পর্ব)

 

মোঃ আল-আমিন, গাজীপুর :

 

 

সারাদেশে বিভিন্ন ধরনের স্বপ্নপূরি থাকলেও মশার স্বপ্ন পূরনে গাজীপুর সবার উর্ধে। সকাল সককল ঘুম থেকে উঠেই চললাম স্বপ্নপূরীর উদ্দেশ্যে। মশা যেনো এখানে তাদের স্বপ্নপূরনে শতভাগ সফল। কোন ধরনের বাঁধা বিঘ্ন ও তাদের জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ কিছু না থাকায় পরম সুখে পরিবার পেতে সন্তান উৎপাদন করছে তারা। পঙ্গপালের নাম রূপকথার মনে হলেও কিছুটা স্বস্তি পায় গাজীপুরের মানুষ। কারন পঙ্গপালের খাবার শস্য। মশার মত উড়ে উড়ে কৃষকের শস্য সাবাড় করে এই ক্ষতিকর পোকাটি। কিন্তু সেই পঙ্গপালের আক্রমনের কথা শুনলেও মানুষ অতটা ভীত হয় না যতটা মশার আক্রমনে ভীত হয়। সবাই যেনো তাদের কাছে অস্ত্র সমর্পন করেছে। ঘরের ভেতরে বা বাইরে সব জায়গায়তেই গাজীপুরের সব স্থানই এখন মশার অভয়াশ্রম। ঘর, মসজিদ, থানা, হাসপাতাল, চায়ের দোকান অথবা বিনোদনের স্থান কোথাও যেনো তার হারিয়ে যেতে নেই মানা। যখন যেখানে যাকে খুঁশি তাকে কাছে পেলেই রক্ত চুষে নিচ্ছে দাপুটে এ মশা। সর্ব স্থানে মশার দলগত এমন প্রকাশ্য হামলায় সবকিছু যেনো স্থবির হয়ে যেতে চায়।

 

সরজমিনে তাদের অবস্থান দেখতে স্বপ্নপূরীর নগরীর টঙ্গী পূর্ব থানার গেটে গেলাম। দায়ীত্বরত এক পুলিশ সদস্য এক হাতে অস্ত্র অন্য হাতে কিছু একটা নিয়ে ডিউটি দিচ্ছেন। ভাবলাম ওনার কিসের এত ভয় যে এক হাতে অস্ত্র থাকতেও অন্য হাতে কি নিয়ে সর্বোদ সচেষ্ট! কিসের এত ভয় বাঁধা ডিঙ্গিয়ে কাছে যেতেই দেখি চোখ যেনো ছানাবড়া হয়ে গেলো। গোলাকার একটুকরো মশক নিধনের মাথায় অগ্নি সংযোগ করে ঠায় দাঁড়িয়ে মশার নির্মমতার হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর একটু চেষ্টা। বুঝলাম মশা অস্ত্রকেও পাক্তা দেয় না। থানার অভিজ্ঞতা শেষে চললাম টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের দিকে। যাওয়ার পথে উত্তেজিত ও আক্রমনাত্মক এক পাল বায়ু সেনা হামলা করলো। শত বাঁধা পেড়িয়ে অবশেষে ইমারর্জেন্সী গেলাম। এক হাতে সেলাই করছে ডাক্তার সাহেব অন্য হাতে বাঁধা দিচ্ছে তার উপর হামলে পড়া মশাকে। হাতে ইনজেকশন থাকলেও তিনি যেনো অসহায়। তার অসহায়ত্ব দেখে চলে গেলাম হাসপাতালের বেডে। অসুস্থ রোগীরা শরীর এলিয়ে শুয়ে থাকলেও হাত নাড়াচ্ছেন আপনা গতীতে। প্রশ্ন করার সাহাস না পেয়ে নেমে পড়লাম।

এবারের গন্তব্য টঙ্গীর ব্যাংক মাঠ বস্তি। শুনেছি ওখানে রাজ্যের নিয়ন্ত্রণকারীদের দেখা মিলবে। যেতে যেতে বিকেল গড়িয়ে কিছুটা সন্ধা। কাছাকাছি ধোঁয়া উড়ছে দেখে ভাবলাম যাক স্বপনপূরী তো এমনই হয়। একটু না হয় আমিও ভেঁসে নিবো। বস্তির ভেতরে ঢুকতেই দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। রাজ্যের সেনাপতিসহ সবাইকে তাড়াতে নাকি প্রতিদন ২/৩ বার ধোঁয়া দিতে হয় এখানে জানালেন বস্তির বাসিন্দা জনৈক রহিমা খাতুন। জীবন বাঁচাত দিলাম ভোঁদৌড়। ধোয়া থেকে কখন যেনো আগুন লেগে প্রাণটা যায়। কোলাহল থেকে একটু দীর্ঘ নিশ্বাস নিতে চলেগেলাম নগরীর ৪৭ নং ওয়ার্ডের মরকুন গুদারাঘাট এলাকায়। যাক বাবা চেয়ারে এলিয়ে বসে দোকানী আপেলকে বললাম এককাপ চা দিতে। ওরে বাবা ১০ সেকেন্ড না যেতেই ভালাম ভূল করে অন্যের রাজ্যে চলে এসেছি। পা থেকে মাথা পর্যন্ত কারা যেনো কুট কুট করে কামড়ে দিচ্ছে আমাকে। প্রাণ বাঁচাতে চা ফেলেই ওই এলাকা ছাড়লাম দ্রুত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!