আরিফ রববানী,(ময়মনসিংহ)=
ময়মনসিংহ সদরের অষ্টধার ইউনিয়নে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (EGPP) কাজের শ্রমিক মুজুরীর টাকা বিতরণ কার্যক্রম চলছে। শতভাগ স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে ইউনিয়নের কর্মরত ৪২১ জন শ্রমিককে ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গনে অবস্থিত মধুমতি ব্যাংকের শাখা হতে তাদের কাজের মুজুরীর ৮হাজার টাকা থেকে ২হাজার টাকা সঞ্চয় জমা রেখে ৬ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। বিতরণের ধারাবাহিকতা হিসাবে ১০ই মার্চ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের শ্রমিকদের মাঝে ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে স্বচ্ছতার সাথে এই কর্মসুচীর মুজুরীর অর্থ বিতরণের মাধ্যমে এই কর্মসুচীর উদ্ভোধন করেন ইউপি চেয়ারম্যান তারেক হাসান মুক্তা। ।
নিজের আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে ইউনিয়নের কর্মহীন ও অতিদরিদ্ররা তাদের মুজুরীর টাকা বুঝে পেয়ে খুশিতে সরকার ও ইউপি চেয়ারম্যান এবং প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অতিদরিদ্র পরিবারে কাজ কর্ম করতে অক্ষম হয়ে উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়া ও অনত্র কাজ না পাওয়ায় শ্রমিকদের আর যেন অলস সময় পার করতে না হয়, সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ৪০ দিনের অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (EGPP) গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের দেওয়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ ও কাজের মুজুরী পেয়ে ওই পরিবারের অভাব অনটন দূর হয়েছে, ফলে পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফুটেছে।
সুত্র জানায়- ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মোট ১১ টি ইউনিয়নে মোট ৯৯ টি প্রকল্পের মাধ্যমে মোট ৬ হাজার ১শত ১৬ জন অতিদরিদ্র শ্রমিক কাজ করেছে এই কর্মসূচিতে। তার মধ্যে অষ্টাধর ইউনিয়নে মোট ৪২১
জন শ্রমিক কাজ করেন।
মধুমতি ডিজিটাল ব্যাংক অষ্টধার শাখার এজেন্ট নাহিদ হাসান জানান- ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে অষ্টাধর ইউনিয়নে কর্মরত অতিদরিদ্র দের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির কাজের মজুরি মধুমতি ডিজিটাল ব্যাংকের মাধ্যমে ওয়ার্ড ভিত্তিক শ্রমিকদের মাঝে প্রদানের শুভ উদ্ভোধন করা হয়েছে। প্রথম দিন ১নং ওয়ার্ডের শ্রমিকদের মাঝে মুজুরির বিতরণ কর্মসুচীর উদ্ভোধন করেন করেন সম্মানিত চেয়ারম্যান মোঃ তারেক হাসান। তিনি জানান-৪২১জন শ্রমিককে ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে সনাক্ত করে প্রতিজনের থেকে সঞ্চয় বাবদ ২০০০টাকা জমা ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাবে জমা রেখে ৬হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সকল ওয়ার্ডের শ্রমিকদের কে একই ভাবে কর্মসুচীর কাজের মুজুরী বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এতে যার টাকা সেই উত্তোলন করতে পারবে।
প্রকল্পের আওতাধীন ১নং ওয়ার্ডের শ্রমিক ফাতেমা বেগম জানান, ভারী কাজ করতে না পারায় কেউ কাজে লয় না,তাই অনেক কষ্ট করতে হয়েছিলো । ৪০ দিনের এ কাজ পেয়ে আমার সংসারের অভাব দূর হয়েছে। তাছাড়া এই প্রকল্পে কাজ করতে কাউকে কোন ঘুষ দিতে হয়নি। মধুমতি ব্যাংকের মাধ্যমে আমি আমার আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে নিজের টাকা নিজে তুলেছি,এ জন্য কাউকে কোন দালালী ও ঘোষ দিতে হয়নি।
১নং ওয়ার্ডের রিনা রানী রাজভর নামের আরেকজন শ্রমিক বলেন, সংসারের উপার্জন করার মত কেউ নেই, মহিলা বলে কেউ কোন কাজে লয়না, অনেক কষ্টে ছিলাম,তবে এই কাজটি পেয়ে ও স্বচ্ছ ভাবে আমার পারিশ্রমিক আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে আমার হাতে পেয়েছি,পরিবারের মুখে দু’মুটো ভাত তুলে দিতে পারছি। এতেই আমরা খুশি।
অষ্টাধর ইউনিয়নে সরকারের এই প্রকল্পের কাজের মুজুরীর টাকা স্বচ্ছ ভাবে দেওয়া হয়েছে বলে স্বীকার করে রিনা রাণী ও ফাতেমা বেগম বলেন-হুনছি মাইনসে কয় কর্মসৃজন এই কাজের বেতনের টাকা নাকি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের অর্ধেক দেহালাল লাগে,কই আমিতো আমার টাকা আমার হাতেই তুললাম,কাউকে তো কোন টাকা-পয়সা দেওয়া লাগেনি। হুদাই খালী চেয়ারম্যান-মেম্বারগর বদনাম করে।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান তারেক হাসান মুক্তা
বলেন, কর্মহীন ও অবসর সময়ে শ্রমিকরা যাতে বেকার না থাকে সরকার সে জন্য এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। একজন শ্রমিক শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত একটানা মোট ৫দিন কাজ করেছেন। প্রতিদিন ২শত টাকা হারে তাদের মজুরী প্রত্যেক সপ্তাহে নিজ নিজ ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসেবে জমা করা হয়েছিলো। জমাকৃত সেই মুজুরীর টাকা মধুমতি ব্যাংকের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন-এ প্রকল্পের মাধমে এলাকায় রাস্তা, ড্রেন, কবরস্থান, ঈদগাঁ মাঠ, খেলার মাঠ, জলাধারসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাটি কাটা ও সংস্কার কাজ করা হয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন গ্রামীণ এলাকার রাস্তাঘাট উন্নত হয়েছে, অন্যদিকে বেকার সময়ে বসে না থেকে কাজ পেয়ে শ্রমিকরাও আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন।