খায়রুল আলম রফিক :
আমাদের কিছু লক্ষ্য এবং স্বপ্ন থাকে, যদি প্রতিনিধিত্ব করা না যায়, তবে সেগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। আর জনগণের বাইরে থেকে রাজনীতি করে সব কাজ করাও সম্ভব নয়। মানুষ আমাকে ভালোবাসে, ভালো জানে তাই এ নিয়ে ত্রিশাল পৌরসভার জনগন তৃতীয়বার আমাকে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। ভবিষ্যতের বিষয়ে আগাম কিছু বলা ঠিক না, কতো মানুষ বলে আপনি এটা হবেন সেটা হবেন। আমার এতো দরকার নাই, আমি যে অবস্থানে আছি সে অবস্থান নিয়েই চিন্তা করি। ভবিষ্যতের কথা ভবিষ্যতেই বলা ভালো।
ত্রিশাল পৌরসভাকে নিয়ে আমি না সবাই স্বপ্ন দেখেন। প্রথমবার যখন দায়িত্ব পেয়েছি তখন থেকেই কিছু কাজ করার চেষ্টা করেছি, এবার আরো ভালো কাজ করার চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ ।
মেয়র আনিছ বলেন, অনেকে বলি আধুনিক, অনেকে বলে ডিজিটাল আবার আলোকিত। কিন্তু আমি বলতে চাই আধুনিক হোক আর ডিজিটাল হোক সবধরনের নাগরিক সুবিধা সম্পন্ন একটি পৌরসভা গড়তে চাই।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এমন কথাই বলেন ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব এবিএম আনিসুজ্জামান আনিছ।
তিনি বলেন, আমরা তো কতো কিছু বলি তিন তলা রাস্তা দেবো পাঁচ তলা বাড়ি দেবো কিন্তু আসলে এটা ঠিক না, নাগরিক সুবিধা বলতে যেটা দরকার সেটাই দিতে আমি চেষ্টা করবো। মেয়র আনিছ বলেন, চলতি মাস থেকে আমি যে অনারিয়ামটা পাবো অর্থাৎ ১৫ হাজার টাকা এইটা দিয়ে পৌর এলাকার স্কুলের শিশুদের জন্য কাজ করবো। এর একটি অংশ আমি এতিমখানা/ হেজবুতখানায় দিয়ে থাকি। বাকি অংশ স্কুলের শিশুদের মাঝে ব্যয় করবো। তিনি বলেন, বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান করা, সময়মতো স্কুলে যাওয়া, বিদ্যুৎ অপচয় না করা, বিদ্যালয় অঙ্গণ ও নিজ বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার রাখাসহ বিভিন্ন নিয়মানুবর্তিতামূলক কাজে শিশুদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। এ চিন্তা ভাবনা অনেক আগে থেকেই আমার নেওয়া, কিন্তু নির্বাচন ও করোনার কারণে পারিনি তবে চলতি মাস থেকেই এ কাজগুলো শুরু করবো। পৌরসভায় স্কুল খুললে এক্ষেত্রে ঝুঁড়িসহ যাবতীয় জিনিসপত্র ব্যক্তিগত উদ্যোগে আমি সরবরাহ করে দেবো। এর পাশাপাশি পুরস্কারের ব্যবস্থাও করা হবে। যে ভালো করবে তাকে পুরস্কৃত করা হবে, তাতে শিশুরা অনুপ্রাণিত হবে। শিশুদের যদি নৈতিকভাবে গড়ে তোলা যায়, তাদের মাথায় যদি একবার ঢুকিয়ে দেওয়া যায় সে কিভাবে চলাফেরা করবে, দেশ ও দশের উপকারে আসবে তাহলে ভবিষ্যতের জন্য অনেক কাজই হয়তো আমাদের করতে হবে না। তিনি বলেন, স্কুল লাইফ থেকেই আমি রাজনীতি করি। সব সময়ই মাদকের বিরুদ্ধে ছিলাম। আমি পান, সিগারেট খাই না। কর্মীরা আমাকে দেখে যেনো অনুসরণ করে, আমি সে চেষ্টা করি।
মেয়র আনিছ বলেন, আমি সবসময় মাদকের বিরুদ্ধে স্বোচ্চার ছিলাম এখনো থাকবো। দুই/তিনটা বিষয়ে আমি কোনদিন থানায় সুপারিশ করিনি। সত্য হোক-মিথ্যা হোক মাদক নিয়ে কেউ আটক হলে আমি তাদের ব্যাপারে কখনো সুপারিশ করি নাই, পাশাপাশি নারী ঘটিত বিষয়সহ চুরি-ডাকাতির বিষয়েও না।
মেয়র বলেন, আগের মাস্টার প্লানকে ফলো করেই আমি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আমাদের পৌরসভার যে খালগুলো বেদখল হচ্ছে সেখানে রিটার্নিং ওয়াল এবং পাশ থেকে যদি রাস্তা তৈরি করি তাহলে মানুষের চলাচলের রাস্তারও হোল আমাদের খালও রক্ষা হলো।
মেয়র বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে ত্রিশাল পৌরসভা অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে, ইতোমধ্যে পানির বিল, ট্যাক্সসহ প্রায় সব কাজ অনলাইনের মাধ্যমে করা হয়। ভবিষ্যতে এগুলোর পুরো প্রক্রিয়াই অনলাইনের মাধ্যমে সম্পাদন করা হবে। আগে আমাদের লোক গিয়ে টাকা নিয়ে আসতো। আর এখন বিল দিয়ে আসে গ্রাহকরা গিয়ে ব্যাংকে জমা দিয়ে আসেন। ভবিষ্যতে এগুলো অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। তবে সময় লাগবে। ত্রিশাল পৌরসভার কার্যক্রমকে আরো বেগবান করতে কিছু কম্পিউটার, প্রিন্টারসহ যাবতীয় জিনিস সরবরাহ করার চেষ্টা করছি। মেয়র বলেন, আগে মনে করতাম নেতারা এসে পৌরসভাকে উন্নীত করেছেন। কিন্তু আমি মেয়র হওয়ার পর বুঝলাম সবই ভাওতাবাজি। আমি প্রথমবার দায়িত্ব নেওয়ার পর পৌরসভাকে খ গ্রেডে উন্নীত করেছি। পৌরসভাকে খ শ্রেণীতে উন্নীত করতে হলে প্রতিবছর ৬০ লাখ টাকা আয় দেখাতে হবে। আর প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত করতে হলে পর পর তিন বছর কোটি টাকার উপরে আয় দেখাতে হবে। সরকার একটা নিয়ম করছে পাঁচ বছর পর পর ট্যাক্স বাড়াতে হবে। আমি এসে তিন বছর এর মাথায় একবার পেয়েছিলাম। প্রথমে যারা মেয়র হিসেবে কাজ শুরু করেছেন তারা এমন জায়গায় ট্যাক্সটা রেখেছেন বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে কম। আসলে ট্যাক্সের উপরই চলে পৌরসভা। মেয়র বলেন, পৌর শহরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে জলাবদ্ধতা হবে না। আর রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। যে সব প্রকল্প হাতে নিয়েছি সে কাজ যাতে সঠিক সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারি তাই পৌরসভাতেই বেশি সময় দেই। সংস্কৃতি ও খেলাধুলা অঙ্গণে আমি সর্বদা ছিলাম আছি।