আরিফ রববানী, ময়মনসিংহ।।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধে সারাদেশের ন্যায় ময়মনসিংহেও প্রশাসনের কঠোরতার মধ্য দিয়ে প্রথম সপ্তাহের লকডাউন শেষ হয়ে হয়েছে। এরই মাঝে লকডাউনের সময়সীমা বৃদ্ধি করেছে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ।
ময়মনসিংহে গত এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউনে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে মানুষকে ঘরের ভিতরে রাখতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা সহ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে প্রশান। লকডাউনে ময়মনসিংহে প্রশাসনের শক্ত অবস্থান ছিল চোখে পড়ার মতো। কঠোর লকডাউনের মধ্যে রাস্তাঘাটে মানুষ বের হলেই ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। প্রয়োজনে জরিমানাও আদায় করা হয়েছে।
গত এক সপ্তাহের লকডাউনে নিধি নিষেধ অমান্য করায় ২৮৩৪ টি মামলায় প্রায় ১৯,৪৯,৪৬০ উনিশ লক্ষ উনপঞ্চাশ হাজার চার শত ষাট টাকা জরিমানা আদায় করেছে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন।
প্রতিদিন সকাল থেকে ময়মনসিংহ জেলা সদরসহ প্রত্যেক উপজেলার শহরের ব্যস্ততম সড়ক ও মোড়গুলোতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। ভোর থেকে দৈনন্দিন কাজে মানুষ বের হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে মানুষের চলাচল কমে যায়। সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন প্রতিপালনে প্রতিদিন সকাল থেকেই জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ৫২টি টিম ময়মনসিংহের প্রধান নগরীসহ বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় টহল অব্যাহত রেখেছে। মাঠে রয়েছে র্যাব, থানা, ডিবি ও ট্রাফিক পুলিশ।
এছাড়াও বিভিন্ন এলাকা এবং সড়কগুলোতে সেনাবাহিনীর কয়েকটি টিম টহল দিচ্ছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা রিকশা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে জানতে চাচ্ছেন কে কোথায় যাবেন। যথাযথ কারণ দর্শাতে না পারলে গাড়ীর যাত্রী, চালক ও পথচারীদের গন্তব্যে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলে গুনতে হচ্ছে জরিমানা অথবা হতে হচ্ছে আটক। তবে জেলার কিছু গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন বাজারগুলোতে আইন অমান্য করে অনেকেই দোকান খোলা রেখেছেন। যেখানে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্য বিধি। তবে প্রথম,২য়,৩য়, ও ৪র্থ দিনের তুলনায় ৭ম দিনে মামলা ও জরিমানার পরিমাণ অনেকটাই কমে এসেছে।
প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক জানা গেছে- কঠোর লকডাউন’র সপ্তম দিনে দিনে সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য মতে ময়মনসিংহ জেলায় মাত্র ২২৯ মামলায় ১,৩৯,৬২০ (এক লক্ষ উনচল্লিশ হাজার ৬শত বিশ) টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়াও বিনা কারণে বাইরে বের হওয়ায় একাধিক ব্যক্তিকে মুচলেকা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে লকডাউনের প্রথম দিনে- ৫২৫টি মামলায় ৩,৯৭,৪৮০/- (তিন লক্ষ সাতানববই হাজার চারশত আশি)টাকা অর্থদন্ড ও লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে- ৫৭০টি মামলায় ৪,০৬,৬৯৫ (চার লক্ষ ছয় হাজার ছয়শত পঁচানববই) টাকা, ৩য় দিনে ৩৪৩ মামলায়- ২,০৯,৮৩০ (দুই লক্ষ নয় হাজার আটশত ত্রিশ) টাকা,৪র্থ দিনে ৫১২ মামলায়-৩,৮১,৫৭৫ (তিন লক্ষ একাশি হাজার পাঁচ শত পচাত্তর) টাকা, ৫ম দিনে ৩৪৯ মামলায়- ২,০৯,৯৬০ (দুই লক্ষ নয় হাজার নয়শত ষাট) টাকা, ষষ্ঠ দিনে- ৩০৬ মামলায়-২,০৪,৩০০ (দুই লক্ষ চার হাজার তিনশত) টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
এই নিয়ে সাত দিনে সর্বমোট-২৮৩৪ (দুই হাজার ৮শত চৌত্রিশ) মামলায়- ১৯,৪৯,৪৬০ ( উনিশ লক্ষ উনপঞ্চাশ হাজার চার শত ষাট) টাকা জরিমানা আদায় হয়েছে। লকডাউন এবং স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করায় এসব অর্থদন্ড-জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আয়েশা হক এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং সরকারি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে নৌবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশ এবং ব্যাটেলিয়ন আনসার নিয়ে ১৩ উপজেলায় ৫২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়মিত পরিচালনা করা হচ্ছে। জনস্বার্থে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে কঠোর লকডাউনের সপ্তম দিনেও ছিল রাজপথ ছিলো ফাঁকা। ছিল না কোনো গণপরিবহন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পুলিশের চেকপোস্ট ও ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছেন। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, বিজিবি, ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের টহল চলেছে।
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের পক্ষে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ ওসি শাহ কামাল আকন্দ জানান, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট ও পুলিশের টহল রয়েছে। এদিকে শহরের দোকান-পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সড়কে চলছে না কোনো গণপরিবহন।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) বুধবার (৭ জুলাই) মধ্যরাত পর্যন্ত ‘কঠোর বিধিনিষেধের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আরো এক সপ্তাহের ’ কঠোর বিধিনিষেধের মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে সরকার। এ সময় জরুরি সেবা দেওয়া দফতর-সংস্থা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস, যন্ত্রচালিত যানবাহন, শপিংমল-দোকানপাট বন্ধ থাকছে। তবে গণমাধ্যমসহ কিছু জরুরি পরিষেবা এ বিধিনিষেধের বাইরে রয়েছে।