সাইফুল ইসলাম তরফদার, ময়মনসিংহ :
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ময়মনসিংহের চার বার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য কিংবদন্তির রাজনীতিক বীরমুক্তিযোদ্ধা খুররম খান চৌধুরী। তিনি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) থেকে তিনবার ও ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসন থেকে একবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ্ প্রিন্স। তিনি জানান, শনিবার (১৭ জুলাই) বিকেল পৌনে ৬ টায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এর আগে অসুস্থতার কারণে গত ৮ জুলাই সাবেক এমপি খুররম খান চৌধুরীকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে করোনা পরীক্ষায় তার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে পরদিন তাকে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়।
পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থান শনিবার বিকেলে মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, মরহুমের নামাজে জানাযা (১৯ জুলাই) সোমবার ঈশ^রগজ্ঞ খেলার মাঠে দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিন বেলা আড়াইটায় নান্দাইল শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রী কলেজ মাঠে দ্বিতীয় জানাযা এবং বিকেল ৩টায় ৩০মিনিটে খররুম খান চৌধুরী ডিগ্রী কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। অবশেষে নিজ গ্রাম মোয়াজ্জেমপুর সাহেব বাড়ী ঈদগাহ মাঠে জানাযা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে মরহুমের দাফন করা হবে।
বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবন : বীলমুক্তিযোদ্ধা খুররাম খান চৌধুরী নান্দাইলের একটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য থেকে ইউপি চেয়ারম্যান হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর মোট চারবার জাতীয় সংসদ সদস্য নিবাির্চত হন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ময়মনসিংহ উত্তর ইউনিটের আহŸায়ক ছিলেন। এর আগে তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন।
জানা যায়, ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসাবে তৎকালীন ময়মনসিংহ-৫ (নান্দাইল) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসন থেকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৯১ সালের প ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আবার বিএনপিতে যোগ দেন।
সর্বশেষ ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ধানের শীষের প্রার্থী হিসাবে ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়াও ১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসাবে ময়মনসিংহ-৯ আসন থেকে পরাজিত হয়ে ছিলেন।
শোক প্রকাশ :
সাবেক এ সংসদ সদস্যের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ্ প্রিন্স গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
এছাড়াও পৃথক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করেছেন ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক নান্দাইলের কৃতি সন্তান আবু ওয়াহাব আকন্দ, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম সরকার, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা যুবদলের সভাপতি ভিপি শামসুল হক শামছু, সাধারন সম্পাদক রবিউল করিম বিপ্লব। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, কিংবদন্তি এ রাজনীতিকের মৃত্যুতে দেশ ও জাতীর অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
মহান আল্লাহ মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের এক শোক বহনের ক্ষমতা ও রহমত দান করুন।