ময়মনসিংহের সদরে চরাঞ্চলে মসজিদ-মাদরাসা নিয়ে দ্বন্দ্বে সংঘর্ষের ঘটনায় দুই ভাই নিহত হওয়ার পর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। এ ঘটনায় এক পক্ষের বাড়িতে চলছে স্বজন হারানোর আহাজারি। অপর পক্ষের বাড়িতে হয়েছে ব্যাপক ভাংচুর। ভাংচুরের পর নিয়ে গেছে গরু, ছাগল। এমনকি ভাঙচুর করা হয়েছে খাট, সুকেস। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে কম্বল, লেপ, তোষক। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকা জুড়ে। এদিকে জানাজা মরহুমের জানাজা নামাজের সমাবেশে সকলকে সকলকে শান্ত থাকার আহবান জানিয়েছে আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিরা।
শনিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে স্বরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, শুক্রবার বেলা ১২ টার দিকে উপজেলার চর সিরতা ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই এলাকার আলী আকরের দুই ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩৫) ও সফিকুল ইসলাম (৩০) মারা গেছেন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত দুই বছর যাবত স্থানীয় তালেবিয়া জামে মসজিদ ও মাদ্রাসার জমি নিয়ে আলী আকবর গং ও হাসিম মেম্বার গংদের সাথে বিরোধ চলে আসছে। এই নিয়ে সম্প্রতি কমিটি ভেঙ্গে আলী আকবর গং ও হাসিম মেম্বার গং দুটি কমিটি গঠন করে। দুই কমিটির হাসিম মেম্বারের পক্ষ গত ২৪ নভেম্বর মাদ্রাসার মাঠে ইসলামী সভার আয়োজন করে। এই দিয়ে এলাকায় উত্তেজনাকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ দুই পক্ষের সংঘর্ষ ঠেকাতে ইসলামী সভা বন্ধ করে দেয়।
ঘটনাটি স্থানীয় ৫ নম্বর সিরতা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু সায়িদ দুই পক্ষকে মিমাংসা করার কথা বলে পরিবেশ শান্ত করেন। তবে, হাসিম মেম্বার গং ঘটনার দিন সকালে দেশিয় অস্ত্র ও লাঠিসোঠা নিয়ে আলী আকবর ও তার দুই ছেলের উপর হামলা চালায়। হামলায় আলী আকবর ও তার দুই ছেলে রফিকুল ইসলাম ও সফিকুল ইসলাম গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথে রফিকুল ইসলাম মারা যায়। সফিকুল ইসলামকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করেন। পরে সেখানে রাত ৯ টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সফিকুল ইসলাম মারা যান।
এদিকে, মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে হাসিম মেম্বার গংদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে ও গরু ছাগল নিয়ে যায় উত্তেজিত জনতা।
স্থানীয় ইউনুস মিস্ত্রী নামে একজন জানান, সম্প্রতি মসজিদ কমিটির এক পক্ষ ইসলামী সভার আয়োজন করেন। কিন্তু অপরপক্ষ সভা করতে দিবে না বলে পুলিশের কাছে আবেদন করে। পরে পুলিশ সভা বন্ধ করে দেয়। এই নিয়ে দুই পক্ষের মারামারিতে দুই জন মারা গেছে।
কাছম আলী নামে আরেকজন জানান, মুলত মসজিদের জমি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত দুই পক্ষের মাঝে বিরোধ চলে আসছে। জমির বিরোধ নিয়ে কমিটি ভেঙ্গে মসজিদ ও মাদ্রাসার নাম পাল্টে দিয়ে হাসিম মেম্বার গং ইসলামী সভার আয়োজন করে। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে সভাটি বন্ধ হয়।
তবে, কেউ পরাজয় মানতে নারাজ। তাই এই এই ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে আলী আকবর জানান, বিষয়টি চেয়ারম্যান মিমাংসা করে দেয়ার কথা বলেছিল। তবে, হাসিম মেম্বার ও তার লোকজন হামলা চালিয়ে আমার দুই ছেলেকে খুন করেছে। এ বিষয়ে জানতে হাসিম মেম্বারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। কারন, তারা পলাতক আছেন।
এ বিষয়ে ৫ নম্বর সিরতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সায়িদের নাম্বারে কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ জানান, হাসিম মেম্বারের লোকজন মসজিদ ও মাদ্রাসা মাঠে ইসলামী সভার আয়োজন করে। এ নিয়ে আলী আকবরের লোকজনের সাথে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির তৈরী হয়।
স্থানীয়দের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইসলামী সভা বন্ধ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, দুইজন নিহতের ঘটনায় দুইজনকে আটক করা হয়েছে। এদিকে দুইজন নিহতের ঘটনায় এলাকায় সৃষ্ট উত্তেজিত পরিবেশ শান্ত রাখতে শনিবার জানাজা নামাজের পূর্বে বক্তব্যে কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি মো. শাহা কামাল আকান্দ জনসাধারণ কে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আইনগত ব্যবস্থা যথাযথাভাবে পালিত হবে।
ওসি আরও বলেন, এ ঘটনায় যারা মূল আসামী এরা যত শক্তিশালীই হোক তাদের দ্রুত পুলিশ খুঁজে বের করবে। এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় যারা জড়িত সকল আসামীদের গ্রেফতার করা হবে ইনশাআল্লাহ। আপনারা কেও নিজের হাতে আইন তুলে নিবেন না। পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা ও Rab সহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।
কেউ যাতে উশৃংখলতা করে আইন হাতে তুলে না নেন সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেখানে ওসি (তদন্ত) ফারুক আহমেদ, চর ঈশ্বরদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোর্শেদুল আলম জাহাঙ্গীর, ৫নং সিরতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ সাইফুদ্দিন আহমেদ (বকুল) ৪নং পরানগঞ্জ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু হানিফ সরকার সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এলাকাবাসীকে শান্ত থাকতে অনুরোধ জানান উপস্থিতি গণ্যমান্য ব্যক্তিরদের বক্তব্যে এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি কামনা করেন।