পদ্মা সেতু চালু হলে এলাকায় কলকারখানা হবে, চাকরি হবে, অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন স্থানীয় বাসিন্দরা, এমনটাই প্রত্যাশা করছেন তারা।
সেতুর মাধ্যমে ঢাকার সাথে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হলে যাতায়াতের পাশাপাশি গ্যাস-বিদ্যুতেরও সংযোগ হবে।
আর তাতে খরচ কমাতে সেখানে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার আশা করে ঢাকা নির্ভরতা কমে যাবে বলেও আশা তাদের।
আগামী ২৫ জুন পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে। স্থানীয়রা এ নিয়ে কী ভাবছেন, তা উঠে এসেছে তাদের কথায়।
বুধবার (০১ জুন) বিকেলে জাজিরা পয়েন্টে কথা হয় ফেরিওয়ালা শহীদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আর তো কয়েকটা দিন। পদ্মা সেতু হলে কলকারখানা হবে, আমরা কাজ করতে পারবো। ব্যবসাও বাড়বে।
সেতু সংলগ্ন এলাকায় ভাঙন রোধে নদী শাসনের জন্য বসানো ব্লকগুলোর ওপর দিয়ে পর্যটকদের হেঁটে বেড়ানোর মনোরম পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সেখানে পড়ন্ত বিকেলে স্থানীয়দের, এমনকি ঢাকা থেকে অনেক পর্যটককেও বেড়াতে আসতে দেখা যায়।
সেই পর্যটকদের দেখিয়ে শহীদুল ইসলাম বলেন, ওই দ্যাখেন। মানুষ বেড়াতে এসেছে। শুক্র-শনিবার আরও বেশি পাবেন। দিন দিন মানুষ আরও বাড়ছে।
মাওয়া পয়েন্টে কুমারভোগ এলাকার ট্রলার চালক বাচ্চু মিয়া বলেন, সেতু চালু হলে দক্ষিণের ২১/২২ জেলার মানুষের উপকার হবে। সেতু চালু হলে ট্রলার বন্ধ হবে এটা ভুল ধারণা, এখানে পর্যটনকেন্দ্র হবে। ট্রলারের চাহিদা আরও বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে প্রায় একশ ট্রলার থাকলে তার মধ্যে নিবন্ধিত ৭০টি। আর স্পিড বোটের সংখ্যা প্রায় তিনশ। আমরা পর্যটকদের নিয়ে ফুরুৎ করে যাই, ফুরুৎ করে আসি।
পদ্মায় ট্রলার চালক রিপনের বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায়। মাওয়া পয়েন্টের কুমারভোগ এলাকায় শ্বশুরবাড়ি তার। দীর্ঘদিন এখানেই থাকছেন তিনি। রিপন বলেন, সেতু হলে মানুষের উপকার হবে।
তবে আরেক শ্রমিক জানান, এখানে হাজার হাজার ঘাট শ্রমিক। তাদের জন্য কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না সরকার। তাদের জন্য কিছু করা দরকার।
সেতু চালুর আগেই মাওয়া ঘাটে অনেক দোকানপাট বিশেষ করে টং ঘরগুলো ভেঙে দেওয়া হয়েছে, কেউ কেউ নিজেরাই চলে গেছেন।
সেতু চালু হলে ব্যবসায় প্রভাব পড়বে কিনা এমন প্রশ্নে ২ নং শিমুলিয়া স্পিড বোট ঘাটের চা বিক্রেতা মো. রফিক বলেন, যখন যে ভাও, চলতে পারবো। তবে আগের চেয়ে দোকানপাট কমে গেছে।
মাওয়া ঘাটের চন্দের বাড়ি বাজার এলাকার সমীর রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। কাজের অবসরে দুপুরের দিকে মাওয়াঘাটে নিজের গাছের আম বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন। পদ্মা সেতু হলে লাভ না ক্ষতি, এ নিয়ে তিনি বলেন, যারা কাজ হারাবেন তাদের তো একটা লাইন বের হয়ে যাবে।
মাঝির ঘাট ফেরি বাজারে ষাটোর্ধ্ব ইসহাক মোল্লা বলেন, ঢাকা চলাচল তৈরি হলে আমাদের জন্য উপকার।
স্থানীয় সাংবাদিক হৃদয় মোল্লা বলেন, শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আজ পদ্মা সেতু বাস্তবে রূপ নিয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাভবান শরিয়তপুর। ফেরিতে যে ভোগান্তি, বিশেষ করে রোগীদের ঢাকায় পৌঁছাতে ভোগান্তি। এখন ৫ মিনিটে পদ্মা পার হয়ে দুই ঘণ্টায় ঢাকা পৌঁছে যাবো।
ওই এলাকার অর্থনৈতিক উন্নতির বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, এখানে ১০ বছর আগে যে জমির দাম ছিল ৫০ হাজার, তা আজ ৬-৭ লাখ। অর্থনৈতিকভাবে অনেক লাভবান হয়েছি।
হৃদয় মোল্লা বলেন, সেতু হওয়ায় শরিয়তপুরে অনেক কলকারখানা করার পরিকল্পনা নিয়েছে। তাতে এই অঞ্চলের বেকার যুবকদের চাকরি হবে। এতে শরিয়তপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে।