ময়মনসিংহ প্রতিনিধি:
ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরী করতেন মোশাররফ হোসেন নামে এক যুবক। হঠাৎ একদিন কাজ করার সময় পেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করেন তিনি। গার্মেন্টস থেকে ছুটি নিয়ে চলে আসেন ময়মনসিংহে। সেখানে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি হয় মোশাররফ। ভর্তি হতেই ক্লিনিক কতৃপক্ষ জানায়, মোশাররফের পেটে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা, অপারেশন করাতে হবে। পরে কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা না করেই অ্যাপেন্ডিসাইটিসের অপারেশন করেন চিকিৎসক। অপারেশন করে পায়খানায় রাস্তায় টিউমার পায় চিকিৎসক। পরে চিকিৎসক পায়খানা প্রস্রাবের রাস্তা বন্ধ করে পলিথিন লাগিয়ে দেন চিকিৎসক। ওই পলিথিন নিয়ে চিকিৎসকদের ধারে ধারে প্রায় দেড় বছর ঘুরে বেড়াচ্ছেন মোশাররফ।
এই ঘটনায় মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) বিকালে ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন মোশাররফ হোসেন।
মোশাররফ হোসেন জেলার গৌরীপুর উপজেলার শালিহর গ্রামের মৃত মোকশেদ আলীর ছেলে।
অভিযোগে মোশাররফ হোসেন উল্লেখ্য করেন, গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারী পেটের ব্যথা নিয়ে ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া এলাকার ব্রাহ্মপল্লী এলাকার ভিশন ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হন মোশাররফ। পরে ওই দিন রাতেই ক্লিনিক কতৃপক্ষ ও সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডা. কাজী শরীফুর রহমান সজীব অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা মনে করে অপারেশন করেন। তবে, অ্যাপেন্ডিসাইটিসের কোন সমস্যা না পেয়ে ভিতরে টিউমার পায়। তখন চিকিৎসক টিউমারের কিছু অংশ কেটে বের করে পায়খানা-প্রস্রাব বের হওয়ার জন্য আলাদা রাস্তা বের করে পলিথিন লাগিয়ে দেন। এমতাবস্থায় রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়া সত্তেও ১১ ফেব্রুয়ারী ছুটি দিয়ে তিন মাস পর হাসপাতালে গিয়ে অপারেশন করাতে হবে। কিন্তু তিন মাস পর ওই ক্লিনিকে পরামর্শ নিতে গেলে ক্লিনিক ম্যানেজার আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করে বের করে দেয়।
পরে নিরুপায় হয়ে ওই বছরের ২০ জুন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি হয়। কিন্তু ভর্তি হলে দেখতে পারি, ওই চিকিৎসক কাজী শরীফুর রহমানের অধিনে তিনি ভর্তি হয়েছেন। পরে মোশাররফ হোসেন ডা. কাজী শরীফুর রহমানের কাছে অনুরোধ করলেও কোন চিকিৎসা না দিয়ে দুই দিন পর ছুটি দিয়ে দেন। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে নিরুপায় হয়ে আবারও ওই বছরের ২২ আগস্ট ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি হন। তখনও কোন চিকিৎসা না দিয়ে ক্লিনিকে দেখা করার কথা বলে পরদিন আবারও ছুটি দিয়ে দেন। পরে তিনি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা করলে ডা. কাজী শরীফুর রহমান সজীব কোন পাত্তা না দিয়ে খারাপ আচরণ করে বের করে দেন।
পরে তিনি নিরুপায় হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের জেনারেল সার্জারী বিভাগে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যান। সেখান থেকে আমাকে বলেন, আগে যেসব অপারেশন হয়েছে সব ভুল। এর চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই বলে আপনি আইনী ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেন।
মা নুরজাহান বেগম বলেন, ডাক্তাররা আমার ছেলের ভুল অপারেশন করে তার জীবন শেষ করে দিয়েছে। ছেলের চিকিৎসা করাতে করাতে ভিটা মাটি পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছি। এখন আমি আর ছেলের চিকিৎসা করাতে পারছি না। আমি বিচার চাই না, ছেলের জীবন ফেরত চাই।
মোশাররফ হোসেন বলেন, ভিশন ক্লিনিকে ভর্তি হতেই ক্লিনিক কতৃপক্ষ কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা মনে করে আমাকে অজ্ঞান করার ইনজেকশন দিয়ে অপারেশন করা শুরু করে। তবে, আমাকে পেটের নিচ থেকে অজ্ঞান করায় আমি সব দেখছিলাম। হঠাৎ ডাক্তাররা একজন আরেক জনের সাথে কথা বলে আমাকে আরও একটা ইনজেকশন দেয়। পরে কি হয়েছে আমি কিছু বলতে পারি না। পরে জ্ঞান ফিরলে আমি মা’কে কাঁদতে দেখে জিজ্ঞাসা করি আমার কি হয়েছে। এই কথা শুনে মায়ের কান্না আরও বেড়ে যায়। পরে আমি পেটের নিচে চেয়ে দেখি নল আর একটা ব্যাগ। ওই ব্যাগ নিয়ে প্রায় দেড় বছর অনেক ডাক্তারের কাছে গিয়েছি। কোন সমাধান হয়নি। সবাই বলছে, আমার ভুল অপারেশন করেছে।
তিনি আরও বলেন, অ্যাপেন্ডিসাইটিসের মনে করে অপারেশন করে যে টিউমার পায়। সেই টিউমারের কিছু অংশ পরীক্ষা করলে টিভি রোগ ধরা পরে। এখন নিয়মিত টিভি রোগের ঔষধ খেয়ে যাচ্ছি। আমার সব সময় মনে হয় আমি মারা যাব। আমি মারা গেলে দুইটা ছেলে এতিম হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাগের অনেক দাম। ব্যাগ কিনতে না পেরে পলিথিন বেধে নিয়েছি। দেড় বছরে একদিন রাতেও আমি ঘুমানে পারিনি। আমি যা খাই, তার কয়েক মিনিট পরেই ব্যাগে সব খাবার জমা হয়। ২০ জনের খাবার খেলেও আমার পেট ভরে না। ওই ডাক্তার ও ক্লিনিকের মালিক টাকার জন্য আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে। আমি তাদের কঠিন বিচার চাই।
এবিষয়ে জানতে ভিশন ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেলে মালিক গোলাম মোহাম্মদ ওরফে গোলাম মওলা কোন কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এবিষয়ে ডা. কাজী শরীফুর রহমান সজীব বলেন, অপারেশন আমি একা করিনি, আরও চিকিৎসক ছিল। যে অপারেশন করা তার ভাল’র জন্য করা হয়েছে। তাছাড়া হাসপাতালে বা ক্লিনিকে কোথাও কোন খারাপ আচরন করিনি। ক্লিনিকের সাথে কি হয়েছে সে বিষয়টি আমার জানা নেই।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।