Header Image

নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে বাধ্য করা হবে-মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

 

সাইফুল ইসলাম তরফদার, ময়মনসিংহ:

আওয়ামী লীগ সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামীলীগকে দেশ থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করা হবে। বাংলাদেশের মানুষ আজ জেগে উঠেছে। তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত যে আন্দোলনের জোয়ার উঠেছে সেই জোয়ারে আওয়ামীলীগ ভেসে যাবে। আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।


ময়মনসিংহ নগরীর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রাবাস মাঠে শনিবার বিকেলে বিএনপির বিভাগীয় গনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার দেশের সব কিছুকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা দেশে ত্রাস সৃষ্টি করেছে। আওয়ামীলীগ কখনও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা গণতন্ত্র নষ্ট করে দিয়েছে। এই সরকার দেশের ভোট ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কখনই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। তাই এই সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে।

তিনি বলেন, একটা বিষয়ে আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, দলীয় সরকার থাকলে কোনো নির্বাচন কোনোদিন সুষ্ঠু হবে না। সেটা প্রমাণ হয়েছে। এ সময় গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ১৩৮০টা সিসি ক্যামেরা ছিল, পর্যাপ্ত নাকি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল, পুলিশ-র‌্যাব পাহারায় ছিল, তারপর ওই নির্বাচন দুপুরের মধ্যে বন্ধ ঘোষণা করতে হয়েছে। এ থেকেই প্রমাণ হয়, দলীয় সরকারের অধীনে কখনও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। তাই এই সরকারকে হটিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে বাধ্য করা হবে।

এই বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান, এই দেশের জন্য শিশু তারেক রহমানকে নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া পাকিস্তানী কারাগারে বন্দি ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেই বাংলাদেশের জন্য বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন আমরা সেই বাংলাদেশ ফেরত চাই।

আওয়ামীলীগ একটি চুরের দল মন্তব্য করে মির্জা ফকরুল বলেন, দেশটাকে আওয়ামীলীগ তলাবিহিন ঝুড়ি বানিয়েছিল। ১৯৭৪ সালে আওয়ামীলীগের দুঃশাসনে দেশে দুর্ভিক্ষ লেগেছিল। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল তারা ১০টাকা কেজি দরে চল খাওয়াবে। সেই চলের দাম এখন ৯০ টাকা হয়েছে। তারা বলেছিল ঘরে ঘরে চাকরি দেবে এখন চাকরি পেতে হলে আওয়ামীলীগের লোকজন ২০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়। দেশে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির দাম বাড়িয়েছে। তারা উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করে, লুট করে বিদেশে টাকা পাচার করে। তারা কানাডা, লন্ডনে, বেগম পাড়ায় বাড়ি করে, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম বানায়। আর আমার দেশের মানুষ না খেয়ে থাকি।

এই সরকার গণতান্ত্রিক নয়, তারা বাক স্বাধীনতার কথা বলে কিন্তু বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তাই জনগণকে নিয়ন্ত্রন করতে এই সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বানিয়েছে। সেই আইন দিয়ে মানুষকে ইচ্ছে মত জেলে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এই সরকার এবং সরকারের প্রধানমন্ত্রী সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। কেন, শেখ হাসিনা কি গড, ঈশ্বর, বিধতা ? যে তাকে নিয়ে সমালোচনা করা যাবে না ! যারা ক্ষমতায় থেকে নিজেদেরকে গড, ঈশ্বর, বিধাতা মনে করে তাদেরকে হটিয়ে দেশে মানুষের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বক্তব্যে মির্জা ফকরুল এই সরকারকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়ার দাবী জানান। তিনি বলেন, মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে জেল দেয়া হয়েছে। তারেক রহমানকে দেশে আসতে দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। তারেক রহমানের সব মামলা প্রত্যাহার করে নিরাপদে দেশে ফিরতে দিতে হবে। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে তিনি বিএনপি নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান বাবরেরও মুক্তি দাবী করেন।

খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, জ্বালানি তেল, চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের গুলিতে হত্যা, হামলা এবং মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে বিএনপির এই বিভাগীয় গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করে ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলাম। এ সময়
সমাবেশটি যৌথ ভাবে সঞ্চালনা করেন মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ, অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জাকির হোসেন বাবলু, আলমগীর মামুদ আলম ও উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার।

এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়মারম্যান ডা: এজেড এম জাহিদ হোসেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, মশিউর রহমান।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুন, শরীফুৃল আলম, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন, মহিলাদল নেত্রী আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাধারন সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, সাধারন সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের সভাপতি শ্রাবণ, সাধারন সম্পাদক জুয়েল’ সহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও ফুলবাড়িয়া উপজেলা বি এন পির সদস্য আব্দুল করিম সরকার,উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এড,আজিজুর রহমান, আশিকুল হক আশিক, এড,রেজাউল করিম চৌধুরী।

সমাবেশে সমাবেশে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, শেরপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলার নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!