
ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
ময়মনসিংহ সদরে রাজগঞ্জ (সাহেব কাচারী) বাজারে অবস্থিত পীরে কামেল হযরত আয়েত আলী শাহ (রঃ) মাজার শরীফে ১০৪তম বার্ষিক ওরছ মাহফিল আগামী ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারী বাংলা ১৩ ও ১৪ই ফালগুন রোজ রবি ও সোমবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এলাকাবাসীর স্বমন্নয়হীন স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের মনগড়া বিতর্কিত কমিটি গঠন এবং মাজার নিয়ন্ত্রণ করে মাজারে বাৎসরিক ওরশ মাহফিলের ভক্তদের দানকৃত লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ ও মাজারের দৈনিক দান বাক্সে জমাকৃত টাকা দিয়ে মাজার প্রাঙ্গণে পাঠাগার স্থাপন করে ব্যাক্তি নামে নাম করনের নানান অভিযোগের কারনে এলাকায় সাধারণ ভক্তসহ এলাকাবাসীর মাঝে চাঁপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিরাজমান উত্তপ্ত পরিবেশের কারনে যেকোনো সময় ঘটতে পারে অপৃতিকর ঘটনা। ইতিপূর্বে মাজারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সূত্রপাতে একাধিক ব্যাক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। এব্যপারে হত্যা মামলা হলেও নিহতের পরিবার তাদের উপার্জনক্ষম অভিভাবক হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে পরিবারের সদস্যরা।
মাজারকে কেন্দ্র করে কোন প্রকার সংঘাত মুক্ত ওরশের দাবীতে এলাকার শান্তি প্রিয় মানুষ এবিষয়ে ইতিমধ্যে গণস্বাক্ষরসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর, জনপ্রতিনিধি, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী, অধ্যাপক, অবঃ সেনা সার্জেন্টসহ সচেতন মহলের একাধিক ব্যাক্তি ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এদিকে প্রশাসনের অনুমতির কোন তোয়াক্কা না করে মাজার কমিটি পেশী শক্তি ও বাহু বলে লিফলেট বিতরণ, আলোকসজ্জায় সজ্জিত করে প্রশাসনের অনুমতি থাকুক বা না থাকুক বাৎসরিক ওরছ মাহফিল হবেই বলে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে কাফেলার নাম করে অস্লীল গানের আয়োজন, মেলায় দোকান বসানোর জন্য প্রতি হাত জায়গা এক হাজার টাকা হারে ভাড়ার নামে চাঁদাবাজি, মাজার প্রাঙ্গণ থেকে কিছু দুরে জুয়ার আসর ও নিরাপদে গাঁজা সেবনেরমত জগণ্য কাজের সফল বাস্তবায়নের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
মাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে এলাকাবাসী জানান, মাজারকে কেন্দ্র করে মানুষ হত্যারমত জগণ্যতম ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে স্থানীয় পর্যায় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সর্ব সম্মতিতে পরিচালনা পরিষদ ও রক্ষণাবেক্ষণের বেশকিছু নিয়ম কানন পালনের সিদ্ধান্ত হয়। নিয়ম অনুযায়ী যিনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থাকবেন তিনিই পদাধিকার বলে মাজার কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। এবং সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতি সপ্তাহে মাজারের দান বাক্স খুলে যে অর্থ আসে তা মাইকে ঘোষণা করে এলাকাবাসীকে অবগত করবেন। কিন্তু ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার প্রায় ৪বছর অতিবাহিত হলেও তাদেরকে কোন প্রকার দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে অভিযুক্ত স্বাধীনতা বিরোধী রফিকুল ইসলাম তার অসাধু চক্রের কূটকৌশল অবলম্বন করে সাবেক চেয়ারম্যান, জেলা বিএনপি নেতা নুর মুহাম্মদ মীরকে সভাপতি ও সাবেক মেম্বার ছালামকে ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব দিয়ে নিজেকে সাধারণ সম্পাদক পদে বলিয়ান রেখেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মাজারের আশেকান, জাকেরান, ভক্তগনের মানত ও দানকৃত নগদ অর্থ, হাঁস, মুরগী, গরু, ছগল, অলঙ্কারাদীসহ প্রতি সপ্তাহে প্রায় পনের থেকে বিশ হাজার টাকা এবং বাৎসরিক ওরছ মাহফিলে প্রায় আট থেকে দশ লাখ টাকা আয় হয, সেই টাকা মাজারের নামে ব্যাংক একাউন্টে না রেখে বা মাজারের উন্নয়নমূলক কোন কাজে অর্থ ব্যয় না করে এই চক্রটি নানান কৌশলে মাজারের অর্থ আত্মসাৎ করে থাকেন। এব্যপারে যারাই প্রতিবাদ করেন তাদেরকে বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমাসহ অসৎ উপায়ে পারিবারিক কাজে খরচ করে থাকেন।
এবিষয়ে স্থানীয় ৫নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, একতরফা কমিটি করে, দান বাক্স এবং ওরছ উপলক্ষে দানের টাকা কোথায় যায় আমরা তা অবগত নই। মাজারের নিয়ন্ত্রণ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকলে এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে আসত।
স্থানীয় ৭নং চর নিলক্ষীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ ফারুকুল ইসলাম রতন জানিয়েছেন, মাজারের বিতর্কিত কমিটির কারনে এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আমি কমিটিকে বলেছি, সকলের সাথে সমন্বয় করে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে ওরছ করতে পারেন তাবে ওরছের নামে গাঁজার সেবনের আড্ডা, জুয়ার আসর, কাফেলার নামে অস্লীল গান বাজনার আয়োজনের কারনে কোন ধরনের অপৃতিকর ঘটনার ঘটলে এর সমস্ত দায় মাজার কমিটিকে বহন করতে হবে।
এব্যপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফ হোসাইন জানান, মাজারের ওরছকে কেন্দ্র করে কয়েকটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে। ওরছের পক্ষে বিপক্ষে উভয়েই এসেছিল, তাছাড়া ঐ এলাকার অনেকেই ফোন করেছে। আগামী ১১ই মার্চ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহে আসবেন। এর আগে কোন বিতর্কিত অনুষ্ঠানে অনুমতি যেন না দেওয়া হয সে ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করবেন বলে জানান তিনি।
এবিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহ কামাল আকন্দ’র মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, না না কোন মেলার অনুমতি দেইনি আমরা, মেলা, বাউল গানের কোন অনুমতি নাই, এগুলো হবে না।