Header Image

মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদ চত্বরের পুকুর ভরাট কাজ বন্ধের দাবীতে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন

 

মফিদুল ইসলাম লাভলু (ময়মনসিংহ)

মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদ চত্বরের পুকুর ভরাট কাজ বন্ধের দাবীতে ১৬ আগষ্ট বেলা ১১ টায় ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলন এর সমম্বয়ক আবুল কালাম আজাদ।

তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন অবিলম্বে মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদ চত্বরের পুকুর ভরাট কাজ বন্ধ করে সংস্কার করুন, নিরাপদ পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করুন প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
প্রীতি, শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা নিবেন
আপনারা জানেন, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও প্রাণপ্রকৃতি রক্ষায় পুকুর জলাশয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। জলাশয় নগরীর জন্য আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জলাবদ্ধতা নিরসন এবং বাসযোগ্য নগরের পূর্বশর্ত পর্যাপ্ত খোলা জায়গা, খেলার মাঠ, প্রশস্ত নদীখাল, বৃক্ষরাজি এবং পুকুর ও জলাশয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, সরকারি বেসরকারি এবং ব্যক্তিউদ্যোগে এগুলো দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে নগর হচ্ছে দূষিত, বসবাসের অযোগ্য এবং সমস্ত প্রাণপ্রকৃতির হুমকিতে পড়ছে।

এরকম সময়ে আমরা এই খবরে আতঙ্কিত হয়েছি যে, ময়মনসিংহের জনবহুল মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রায় এক একরের অধিক জায়গা জুড়ে থাকা ঐতিহ্যবাহী পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে। নাগরিক সমাজ উদ্বেগ প্রকাশ করে আপত্তি জানানোর পরেও দিনরাত ট্রাকের পর ট্রাক মাটি ফেলে সিংহভাগ পুকুর ভরাট করা হয়েছে। কাজটি করছে স্বয়ং উপজেলা পরিষদ। এডিবির ১৪ লক্ষ টাকায় এই ভরাট চলছে। পাশাপাশি আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি যে, মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ির সামনে জলটুংগি পুকুর পাড়ে সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়েছে ‘এই পুকুর প্লট আকারে ভরাট করে বিক্রয় করা হবে’ (সাইনবোর্ডের ভাষ্য)। এছাড়াও, ত্রিশাল থানা কম্পাউন্ডে থাকা একটি পুকুর ভরাট করা হয়েছে। আপনারা জানেন, ময়মনসিংহ শহরে অনেক পুকুর ছিল। রাজরাজেশ্বরী পুকুর সহ বেশিরভাগ পুকুর ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে ছোটবড় বেশ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের সময় পানির অভাবে ফায়ারসার্ভিস কর্মীর আগুন নিভাতে হিমশিম খেয়েছেন। শহরের প্রাণকেন্দ্রে বেসরকারি ল্যাবরেটরি স্কুলের পুকুরটি সিংহভাগ ভরাট করা হয়েছে। কিছুদিন আগে পুকুরের একপাশে নতুন করে মাটি ফেলা হয়েছে। এইসব ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন এবং আতঙ্কিত বোধ করছি। আমরা মনে করছি পুকুর ভরাট করা অন্যায়। প্রকৃতির ওপর নিপীড়ন।মহামান্য হাইকোর্ট গত ২২ অক্টোবর ২০২০ তারিখে ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর-জলাশয় রক্ষায় ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন। রায়ে বলা হয়েছে, ‘সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা এলাকায় থাকা কোন পুকুর জলাশয় ভরাট করা যাবে না। জলাধার সংরক্ষণ আইন,২০০০ এর ধারা ২(চ) অনুসারে ব্যক্তিগত পুকুরও প্রাকৃতিক জলাধার-এর অন্তর্ভুক্ত ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায় প্রকাশিত হয়েছে।

ওই রায়ে আগামি ১ বছরের মধ্যে ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ডিয় পুকুরগুলি জলাধার আইন ২০০০ এর ধারা ২(চ) এ উল্লেখিত প্রাকৃতিক জলাধারের সংজ্ঞাভুক্ত হিসেব গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান এর আদালত রায় প্রদান করে রুল এ্যাবসলিউড করেন এবং (সংশ্লিষ্ট) পুকুরটির সীমানা বেআইনীভাবে অতিক্রম ও মাটিদ্বারা ভরাট করা থেকে বিরত থাকা এবং পুকুরটি রীতিমত সংস্কার ও নিরাপদ পানি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।

এছাড়া, বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে পুকুর জলাশয় রক্ষার কথা গুরুত্বের সাথে উচ্চারিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় আইনকানুন, আন্তর্জাতিক রীতিনীতি এবং বাংলাদেশের সংকটাপন্ন পরিবেশ প্রতিবেশ বিবেচনায় আমরা মনে করছি, মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদ চত্বরে পুকুর ভরাট করাটা অন্যায়্য, প্রকৃতিবিরোধী কাজ এবং মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলন, লিগ্যাল এ্যাসিস্ট্যান্স ফর ভালনারেবল সোসাইটি, ডিভিশনাল ব্লাড সোসাইটি ময়মনসিংহ, রাষ্ট্রচিন্তা ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সম্মিলিত ভাবে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে আবেদন করছি, মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদ চত্বরের বিশাল পুকুরটি থেকে মাটি সরিয়ে নিন, পুকুরটি সংস্কার করে নিরাপত্তা পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিন। এবং দেশের সমস্ত পুকুর জলাশয় রক্ষায় যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করুন। পাশাপাশি, পুকুর জলাশয় ভরাটের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ও বিভাগীয় পদক্ষেপ নিন। যেন আর কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পুকুর জলাশয় ভরাট করতে নিরুৎসাহিত হয়।প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আমাদের ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রাণ, কৃষিকৃষ্টি ও মানুষের জীবন-জীবিকার বৃহৎ উৎস ব্রহ্মপুত্রে নদী খনন প্রকল্প চলছে। ইতোমধ্যে, শিডিউলে উল্লেখিত খননের সময়সীমা অতিক্রান্ত হয়েছে। নদীটিকে চেপে ধরে খাল বানানো হচ্ছে। নদীর একাধিক প্রবাহ বন্ধ করা হয়েছে। পাড়ে দখলকারী বাড়ছে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের উৎসমুখ খোলার কোন উদ্যোগ এখনও দৃশ্যমান নয়। ব্রহ্মপুত্রের সবগুলো শাখা-প্রশাখা মরে যাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রকে বাঁচান।

ধন্যবাদ সবাইকে। এ সময় আরোও বক্তব্য রাখেন লিগ্যাল এসিসটেন্স ফর ভালনারেবল সোসাইটি এর সভাপতি অঞ্জন সরকার, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, রাস্ট্র চিন্তার সদস্য কবি এসসান হাবিব সহ প্রমূখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!