ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার অষ্টধার ইউনিয়ন। একটি উন্নয়ন বঞ্চিত ও অবহেলিত এলাকা। নেই কোন ভাল রাস্তা ঘাট,স্কুল প্রতিষ্ঠান। তবে এই ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশী অবহেলিত মশিউর নগর তথা ঝাপারকান্দা গ্রাম। এই গ্রামে নেই কোন রাস্তা,নেই স্কুল প্রতিষ্ঠান, অপরদিকে স্বাস্থ্য ঝুকিতেও রয়েছে গ্রামের কোমলমতি শিশুরা।
তার উপর আবার নদী ভাঙ্গন। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রামের শতাদিক পরিবার। যেন এদের দেখার কেউ নাই। ১৬সেপ্টেম্বর শনিবার এই এলাকায় গিয়ে তাদের দুঃখ কষ্টের কথা শুনেন সদর উপজেলার মানবিক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও স্থানীয় শিক্ষা বঞ্চিত ও ঝড়ে পড়া শিশুদের স্কুলে ফিরিয়ে আনতে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। প্রায় প্রতিদিনই তিনি প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। সুযোগ পেলেই ছুটে যান প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে। ইতোমধ্যে তিনি উপজেলার প্রায় ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফিরিয়ে আনতে উৎসাহিত করতে তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন চকলেট,শিক্ষা উপকরণ ও পোষাক। ইউএনও'র হাতে দেওয়া পোষাক ও শিক্ষা উপকরণ পেয়ে শিক্ষার্থীরা যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছেন।
তিনি অবহেলিত ঝাপারকান্দা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে খোজ নেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির। যেখানে নেই কোন ভবন,ক্লাশ রুম,যেটুকু আছে টিন শেড ঘর,প্রচন্ড রোধের তাপে শিশুরা হয়ে যায় অসুস্থ।এর ভবন নির্মাণের জন্য জায়গা পরিদর্শন করে দ্রুত ভবন নির্মাণের পদক্ষেপ নেন ইউএনও শফিকুল ইসলাম।
দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে স্কুল ড্রেস, খাতা ও পেন্সিল বিতরণ, টুল বেঞ্চ প্রদান, মেধাবী শিক্ষার্থীদের পুরস্কার প্রদান, খেলাধূলার ব্যবস্থাকরণ, শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করণে মনিটরিং,আইসিটি সামগ্রী বিতরণ, প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন নিব্ন্ধ প্রকাশ, মিড ডে মিল চালু, মাসিক সমন্বয় সভায় অংশগ্রহণ ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে অষ্টধারের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিন্তে অবদান রেখেছেন ইউএনও শফিকুল ইসলাম। একই দিনে উপজেলার ১৪নং চৌয়ানীয় বংশীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ কাজ ও স্কুলের সৌন্দর্য বর্ধনে ফুলের বাগান পরিদর্শন, নগরীর সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে স্কুলে শিক্ষকদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিকের ১নং ভবনটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ভবনটি পুনঃনির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দেন। একই দিনে তিনি সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গণিত অলিম্পিয়াড প্রস্তুতি ক্লাশে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাশ নেন এবং শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করেন।
প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে ইউএনওর উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো.মনিকা পারভীন বলেন, স্যার যেভাবে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে কাজ করে চলেছেন তাতে আমরা সকলে গর্বিত ও অনুপ্রাণিত। স্যারের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে আমি বিশ্বাস করি একদিন প্রাথমিক শিক্ষায় দেশের শ্রেষ্ঠ উপজেলায় পরিণত হবে সদর উপজেলা।
ইউএনও শফিকুল ইসলামের মত যদি দেশের প্রতিটি উপজেলার ইউএনওরা প্রাথমিক শিক্ষায় এগিয়ে আসে, তাহলে এদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা একদিন রোল মডেল হিসেবে দাড়াবে বলেও জানান তিনি। পরিদর্শন কালে তার সাথে ছিলেন জেলা শিক্ষা অফিসার মনিকা পারভীন, সহকারী শিক্ষা অফিসার মেরিনা সুলতানা, অষ্টধার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক আরমান,ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার রাশিদুল ইসলামসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা।
এসময় অন্যান্যদের মাঝে স্ব স্ব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন।