নিজস্ব প্রতিবেদক:
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামের নাম কাদিগড়। পড়াশোনার দৌড়ে কোন রকমে এসএসসি পাশ করা ওই গ্রামের আলামিন নামে এক মোটরসাইকেল চোরের দাপটে অতিষ্ট এলাকাবাসী। এলাকার সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবী, সাংবাদিক কেউই রেহাই পাচ্ছেন না আলামিনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও দাপটের হাত থেকে। চিহ্নিত একজন মোটরসাইকেল চোর হয়েও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নিজ বাড়িতে লাগিয়েছেন সরকারী স্কুল/মাদ্রাসার জন্য বরাদ্দকৃত সোলার প্যানেল, ব্যবহার করছেন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দকৃত পানি তোলার মোটর। অল্প বয়সেই বর্তমান স্ত্রীকে পরপর দু বার ভাগিয়ে এনে বিয়ে করার রেকর্ডও করেছেন তিনি। এই সবকিছুকে ছাপিয়ে যে বিষয়টি আজকের এই প্রতিবেদনের মূল প্রতিপাদ্য তা হচ্ছে এই আলামিন একসময়ের আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবির) হাতে কয়েকবার গ্রেফতারও হয়েছেন, পরে সেইসব মামলা ধামাচাপা দিতে সহায়তা করেছেন ভালুকার এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা। উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, অসহায় গরীবদের জন্য বরাদ্দকৃত পানির মোটর এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি সোলার প্যানেল ওই নেতার সহায়তায় বাগিয়ে নিয়ে নিজ বাড়িতে ব্যবহার করছেন আলামিন।
মোটরসাইকেল চুরি করতে গিয়ে ডিবির হাতে হাতেনাতে ধরা পড়ার পর ফোন করে ডেকে নেয়া ২ জনের বক্তব্য (প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে) অনুযায়ী ছোটবেলাতেই কিশোরগঞ্জের এক মোটরসাইকেল চোরের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে আলামিনের, ধীরে ধীরে সেও জড়িয়ে পড়ে ওই সিন্ডিকেটে। প্রথমে চোরাই গাড়ি আনা নেয়ার কাজ করলেও পরে স্বল্প পরিসরে বেচা কেনা ও নিজেই ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পরে আলামিন। সর্বশেষ ভালুকার হাজিরবাজার এলাকায় অবস্থিত ড্রিম ওয়ার্ল্ড পার্কের সামনে মোটরসাইকেল চুরি করতে গিয়ে ডিবির হাতে হাতেনাতে গ্রেফতার হয় আলামিন। পরে সে নিজে বাঁচতে পার্শ্ববর্তী এলাকার এক শিক্ষক ও আরেক কাঠ ব্যবসায়ীকে ফোন করে ডেকে এনে ফাঁসায়। ওই দুজনের ভাষ্য অনুযায়ী, তাদেরকে মেয়েলি সমস্যার কথা বলে ডেকে এনে এই অপরাধের সাথে জড়িয়ে দেয় আলামিন। যদিও ডিবি পুলিশের তদন্তে পরে ওই দুজন নির্দোষ প্রমানিত হয়। কাদিগড় জাতীয় উদ্যান এলাকায় বাড়ি হওয়ায় সেখানে রাতের আধারে নারীদের দিয়ে দেহ ব্যবসা, মাদক ব্যবসা, বনের গাছ চুরি, ঘুরতে যাওয়া দম্পতিদের কৌশলে আটকে ছিনতাই সহ আলামিনের বিরুদ্ধে নানা অপরাধের বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এলাকায় পান থেকে চুন খসলেই যে কারও বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেয়া, দোষীদের পক্ষ নিয়ে নিরীহদের নির্যাতন করা সহ প্রায় সব ধরনের অপকর্মের সাথে যুক্ত এই আলামিন। আলামিনের মাথার উপর রক্ষাকর্তা হয়ে আসীন ওই রাজনৈতিক নেতা ও রমিজ খান নামে এক ঠিকাদারের ভয় ও প্রভাবের কারনে স্থানীয়দের ভিতর ক্ষোভ দানা বাধলেও প্রকাশ্যে কিছু বলতে ভয় পান তারা। এলাকায় কোন উন্নয়ন কাজ হলে সেখানেও চাঁদাবাজি করতে ওস্তাদ এই আলামিন, চাহিদামত চাঁদা না পেলে সেখানেও হুমকি ধামকি ও হয়রানি শুরু করেন তিনি। এসব বিষয়ে জানতে তার ০১৭******৭৩ নাম্বারে ফোন দিলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে ফোন রেখে দেন। এরপর থেকে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সম্প্রতি খোরশেদ আলম নামে এক স্বনামধন্য সাংবাদিককে হুমকি ধামকি দেয়ায় আলামিনের বিরুদ্ধে ভালুকা মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই সাংবাদিক। স্টুডিও ব্যবসায় সহকারী হিসেবে চাকরির সুবাদে মেয়েদের অজান্তে আপত্তিকর ছবি তুলে তা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল, কাদিগড় জাতীয় উদ্যান এলাকায় নারী ও মাদক ব্যবসা, নারী কেলেংকারী, ভুমিদস্যুদের হয়ে নিয়মিত চাঁদাবাজি সহ দুর্ধর্ষ এই মোটরসাইকেল চোর আলামিনের বিভিন্ন অপরাধের সচিত্র (ছবি, ভিডিও, অডিও) প্রতিবেদন নিয়ে বিস্তারিত থাকছে পরবর্তী পর্বে।