ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
টানা ভারী বর্ষণে ময়মনসিংহের সদর উপজেলায়
আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দাগণসহ প্রায় আড়াই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া পানি ও ভাঙ্গনের ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এলাকায় পরিদর্শন করছে উপজেলা প্রশাসন।
উপজেলা প্রশাসন সুত্র জানিয়েছে- ২৯ টি আশ্রয়ন স্পটের মধ্যে ৬ টি স্পটে পানি উঠেছে। তবে কোন স্পটেই ঘরের কোনরূপ ক্ষতি হয়নি। মাটি সরে গিয়েছে ২ টি স্পটে, গাইডওয়াল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভারী বর্ষণের কারণে সদর উপজেলায় পানির ফলে এসব এলাকায় থাকা ফিসারী ও পুকুর ভরাট হয়ে লক্ষলক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতিসহ বিষাক্ত সাপ বিচ্ছুতে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীরা।
প্রশাসন ও স্থানীয়রা জানান, উপজেলার ভাবখালী ইউনিয়নের ভাবখালী,বড়বিলা,নেহালিয়া কান্দা,ভাবখালী নামাপাড়া,দড়িভাবখালী,চকবন পাথালিয়া, খাগডহর ইউনিয়নের মাইজ বাড়ী, মিজ্জাপুর, রহমত পুর, গনেশ্যামপুর,বাহাদুরপুর, বরিয়ান,কালিকাপুর, কল্যানপুর,তারা গাই, চর জেলখানা এলাকায় বেশি ভাগ মাছের ফিশারী, বাড়ি ঘরের ভিটাতে পানি উঠেছে, এসব এলাকায় সাপের ভয়ে আতংকে আছে মানুষ।
প্রায় ২০হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। পাশাপাশি ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের গাঙ্গিনার পাড়,সি কে ঘোষ রোড,আকুয়া,নতুন বাজার, বাঘমাড়া,
চড়পাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ঝুঁকিতে রয়েছে নগরের বাসিন্দারা।
খাগডহর ইউনিয়নের পানিবন্ধীরা বলেন, ‘টানা বৃষ্টির কারণে ভয়ে আছি, নির্ঘুম রাত কাটে। অন্য সময় তেমন একটা ভয় কাজ করে না। তাছাড়া ফিসারী, বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ক্ষেত, ধানক্ষেতের ব্যপক ক্ষতি,পানির নিচে তলিয়ে গেছে বহু ধান ক্ষেত।
ভারী বর্ষণে পারিবন্দি হয়ে পড়েছেন মাইজবাগ এলাকার কয়েকজন বলেন, ‘ভারী বর্ষণে বাড়িতে পানি ঢুকেছে। ঘরের সব কিছু পানিতে তলিয়ে গেছে। সকাল থেকে শুধু চানাচুর-মুড়ি খেয়ে দিন পার করছি।ইউএনও স্যার ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ বাদল ভাই ছাড়া আমাদের খোঁজ নিতে কেউ আসেনি।
এ বিষয়ে খাগডহর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু সাঈদ বাদল বলেন, ‘ভারী বর্ষণের কারণে আমার এলাকার ১০ টি গ্রামের কয়েক হাজার পরিবারের মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। মূলত বৃষ্টির পানি বের হতে না পারায় এসব এলাকা পানিবন্দি হয়ে পড়ে। আমরা তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছি।’ড্রেন-খাল দখলের কারণে পানি চলাচলের জায়গা বন্ধ হয়ে পড়েছে। যার কারণে এসব মানুষের এ করুণ দশা।’
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভারী বর্ষণে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তবে বজ্রপাতে অথবা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে এখন পর্যন্ত কেউ মারা যাই নি। আমরা তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছি। তিনি আরো জানান- সকল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেছেন তিনি।
ইউএনও আরো জানান-কোন ইউনিয়ন ভূমি অফিস অতিবর্ষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয় নি। তবে কেওয়াটখালি ভূমি অফিস সংলগ্ন এলাকায় নদীর যে বাধ রয়েছে তাতে ভাংগন দেখা গিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে।সকল ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক আছে।রাস্তায় ভেংগে পড়ে থাকা গাছপালা সরানো হয়েছে। তবে LGED এর পাকা রাস্তার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মর্মে রিপোর্ট করা হয়েছে। বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রস্তুতের কাজ চলমান আছে। প্লাবিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। চরাঞ্চলের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় খাবার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলিতে জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
৮. নিরাপত্তা জোরদারকরণের জন্য গ্রাম পুলিশদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইউএনও জানান-২৯ টি আশ্রয়ন স্পটের মধ্যে ৬ টি স্পটে পানি উঠেছে। তবে কোন স্পটেই ঘরের কোনরূপ ক্ষতি হয়নি। মাটি সরে গিয়েছে ২ টি স্পটে, গাইডওয়াল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যেকোন প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসনের পাশে থেকে জরুরি কাজের জন্য জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধ করেছেন বলে জানিয়ে নতুন করে বৃষ্টিপাত না হলে আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে নিমজ্জিত জমি থেকে পানি সরে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।