ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ
ময়মনসিংহের ছাত্রলীগ কর্মীরা নিজেদের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে সমন্বয়কদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শহরের টাউন হল মোড় এলাকার ফুটপাত সংলগ্ন স্থানে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, গত ৯ সেপ্টেম্বরর ময়মনসিহে সাগর হত্যা মামলার বিরুদ্ধে মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন সায়েব এ রাকাত। শুক্রবার বিকেলে সায়েবের সাথে ছাত্র লীগের পূনর্বাসনের অপচেষ্টার ইস্যুতে কথা হচ্ছিল। তখন কথাবার্তার একপর্যায়ে সায়েবের সঙ্গে কথা বলতে আসেন সহ সমন্বয়ক আসিফুর রহমান আসিফ। এসময় আসিফের সাথে সায়েবের বিভিন্ন ইস্যুতে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ করেই ১০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাকিব হাসান রিমন ও ছাত্রলীগকর্মী মো. সিফাতসহ ৪-৫ জন হট্টগোল শুরু করে। একপর্যায়ে কথা-কাটাকাটি, হাতাহাতিসহ মারামারির ঘটনা ঘটে। এসময় আশপাশের লোকজন এসে তাদের ফেরান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, ঘটনার পর সায়েবের নেতৃত্বে একদল ছাত্রলীগ কর্মী আসিফকে খোঁজে বের করে আনার ঘোষণা দেয়। টাউনহলে দেশীয় অস্ত্রসহ তারা জড়ো হয়। আসিফকে কিছু করতে না পেরে তার ছোট দুই ভাইকে তুলে নিয়ে যায় এবং যতক্ষণ না আসিফ আসবে ততক্ষণ তারা তার ছোট দুই ভাইকে ছাড়বে না বলে জানায়। খবর পেয়ে রাত ৯টার দিকে সেনাবাহিনী তাদের উদ্ধার করে থানা হেফাজতে দিয়ে আসে। পরবর্তীতে শোনা যায়, সায়েবের জড়ো করা ছেলেদের ছুড়িকাঘাতে এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
আন্দোলনের সংঘটকদের কাছ থেকে জানা যায়, সায়েব আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া কোনো ব্যক্তি নন, বরং তার সাথে সবার পরিচয় হয় আন্দোলন পরবর্তী সময়ে। কিন্তু ইদানিং ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রলীগের পদধারী এক নেতার পক্ষের কর্মীদের সংঘটিত করতে তৎপরতা চালাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্নয়কদের একজন বলেন, হাতাহাতি ঘটনা ঘটেছে ছাত্রলীগ এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভিতর। কিন্তু কেউ ভাবছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই গ্রুপের সঙ্গে হাতাহাতি হয়েছে। এটি সত্য নয়। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে সাধারণ ছাত্রদের ঐক্য ভাঙ্গতে বিভিন্নভাবে অপতৎপরতা চালাচ্ছে।
বক্তব্য জানতে চাইলে সায়েব ও সহ-সমন্বয়ক আসিফের নাম্বারে ফোন করলেও তারা রিসিভ করেননি।
অভিযুক্ত সায়েব কি সমন্বয়কদের কেউ কিনা জানতে চাইলে ময়মনসিংহ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক গকূল সূত্রধর মানিক বলেন, সে সমন্বয়কদের কেউ না।
তিনি বলেন, সহ-সমন্বয়ক আসিফ ও সায়েব কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তারা নিজেদের মধ্যে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে সায়েব তার লোকজন নিয়ে এসে সহ-সমন্বয়ক আসিফকে খোঁজে না পেয়ে তার সহোদর ছোট দুই তুলে নিয়ে এসে দীর্ঘ সময় মারধর করে ও আটকে রাখে। পরে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী এসে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে এনে আসিফের দুই ভাইকে মুক্ত করে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরে আসিফের দুই ভাইকে পুলিশ বাসায় পাঠিয়ে দেয়।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল একজন ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আহত শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে গেছেন। তবে, ওই আহত শিক্ষার্থীর নাম জানাতে পারেননি পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ান হোসেন বলেন, এ ঘটনায় কোন পক্ষই লিখিত কোন অভিযোগ দেয়নি। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা সামাল দিতে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।