মফিদুল ইসলাম লাভলু (ময়মনসিংহ)
শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবা’র আশ্রমের প্রাক্তন সভাপতি শ্রী প্রানতোষ চন্দ্র পাল ও প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক শ্রী আশিষ সরকার কতৃক সাংবাদিক সম্মেলনে মিথ্যা বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত বক্তব্যের প্রতিবাদে ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবা’র আশ্রম ও মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দ সহ সদস্যগণ। গত ১৪ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক সম্মেলনে শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবার আশ্রম এর সাবেক কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের প্রতিবাদে উক্ত সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবা’র আশ্রম ও মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে সকলকে জানাই অগ্রীম শারদীয় শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আপনারা ইতিমধ্যে অবগত হয়েছেন যে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১১ টায় স্থানীয় রিয়াজ মার্কেট, স্টেশন রোড, ময়মনসিংহে শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবা’র আশ্রম নিয়ে সাবেক কমিটির সভাপতি শ্রী প্রানতোষ চন্দ্র পাল এবং সাধারন সম্পাদক শ্রী আশীষ সরকার সহ কতিপয় ব্যক্তিবর্গ তাদের মন গড়া, মিথ্যা ও বানোয়াট কথা সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। যাহা কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এই ধরনের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে আজকের এই ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক প্রেসক্লাবের সম্মানিত সাংবাদিকবৃন্দের কাছে আমি শংকর বসাক, সাধারণ সম্পাদক শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবা’র আশ্রম ও মন্দির এর পক্ষ থেকে সকলের উপস্থিতিতে আমাদের লিখিত প্রতিবাদ বক্তব্য উপস্থাপন করছি। বক্তব্যের প্রারম্ভেই শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবার আশ্রম নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা শ্রী রাধেশ্যাম দাস সহ বর্তমান সভাপতি শ্রী অমল পাল, সাধারন সম্পাদক শ্রী শংকর বসাক ও সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী উত্তম চক্রবর্তী রকেট এর বিরুদ্ধে যে অসত্য, কুরুচিপূর্ণ, মিথ্যা ও বানোয়াট বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তার প্রেক্ষিতে আমি এবং শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবা’র আশ্রম ও মন্দির কমিটিসহ মন্দিরের সকল ভক্তসেবকবৃন্দ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাছি। তাছাড়া এ ধরণের মানহানিকর বক্তব্য প্রদানের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা শ্রী রাধেশ্যাম দাস এর নেতৃত্বে সকল উপদেষ্টা ও তৎকালীন কমিটি শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবার আশ্রমের বিভিন্ন ভক্তবৃন্দের অনুদানে ও আর্থিক সহায়তায় বিগত ২৫/০৫/১৯৯৮ ইং তারিখে আশ্রমের নামে একটি জমি খরিদ করে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে যার হোল্ডিং নং ১২/বি, বড় কালীবাড়ি রোড, ময়মনসিংহ। পরবর্তীতে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ও প্রধান উপদেষ্টা শ্রী রাধেশ্যাম দাস সহ ৭ (সাত) সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা মন্ডলী নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে সাবেক সভাপতি শ্রী প্রানতোষ চন্দ্র পাল এবং সাধারন সম্পাদক শ্রী আশীষ সরকার। এখানে উল্লেখ্য যে, মন্দিরের প্রধান উপদেষ্টা শ্রী রাধেশ্যাম দাস-কে মন্দির পরিচালনার ক্ষেত্রে যে কোন উদ্ভব পরিস্থিতিতে এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সর্বময় ক্ষমতা অর্পণ
করা হয়। উক্ত গঠিত কমিটি বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও মন্দির উন্নয়নের জন্য অনুদান সংগ্রহ করে মন্দির প্রতিষ্ঠায় কিছু উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করেন যা প্রাপ্ত অনুদানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। প্রাপ্ত অনুদান কর্মকান্ডের অন্তরালে সাবেক আশ্রম কমিটির নিজেদের মধ্যে অর্থ আত্মসাৎ, দলাদলি সহ অন্তঃকলহের সৃষ্টি হয়ে সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারি সংগঠিত হয়। একপর্যায়ে মন্দির উন্নয়নের টাকা পয়সা দিয়ে সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির কতিপয় সদস্য মন্দিরের ভিতরে বিভিন্ন রকম অসামাজিক কার্যকলাপ করিতে থাকে যাহা এলাকাবাসী ও ভক্তবৃন্দ প্রত্যক্ষ করে প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টামন্ডলীর অন্যান্য সদস্যবৃন্দকে অবগত করে এবং নিন্দা জ্ঞাপন করে। এমতাবস্থায়, মন্দিরের কার্যক্রম পরিচালনায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হওয়ায় সম্মানিত প্রধান উপদেষ্টা শ্রী রাধেশ্যাম দাস সহ উপদেষ্টামন্ডলী সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সাধারন সভা ডেকে মন্দিরের আয়-ব্যায়ের হিসাব উত্থাপন এবং মন্দিরের ভিতরের অশালীন ও অনৈতিক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানান। বারংবার অনুরোধ করা সত্বেও সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কোন ধরনের সভা না ডাকায় সম্মানিত উপদেষ্টামন্ডলী গত ০৯/১০/২০০৯ ইং রোজ শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা শ্রী রাধেশ্যাম দাস মহাশয়ের সভাপতিত্বে মন্দিরে সভা করিয়া সকলের সম্মতিক্রমে উক্ত কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন এবং শ্রী অমল পালকে আহ্বায়ক করে ২১ (একুশ) সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করেন। আহবায়ক কমিটি গঠন করার পরের দিন অর্থাৎ গত ১০/১০/২০০৯ ইং ভ্রাতৃসংঘের পূজা পূর্নমিলনী অনুষ্ঠান তাজ বেঙ্গল কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। সেই অনুষ্ঠানে তৎকালীন মাননীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব অধ্যক্ষ মতিউর রহমান স্যার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। আমরা নবগঠিত আহবায়ক কমিটির সকলে মিলে ঐ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে পূর্বের কমিটির অনৈতিক ও ন্যাক্কারজনক কার্যকলাপ মাননীয় সংসদ সদস্যকে অবহিত করি এবং আহবায়ক কমিটির নাম লিখিতভাবে উপস্থাপন করি। তখন তিনি সকলের সম্মুখে নব গঠিত আহবায়ক কমিটির সকল সদস্যবৃন্দের পরিচয় হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন এবং পরিচিত হন। তিনি মূল পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার জন্য মৌখিক নির্দেশনা প্রদান করেন। তখন থেকেই নবগঠিত আহবায়ক কমিটি সুন্দর ও নিষ্ঠার সাথে মন্দিরের পূজা অর্চনাসহ বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান পরিচালনায় থাকা অবস্থায় গত ১৩/১০/২০০৯ ইং এ সাবেক সভাপতি শ্রী প্রানতোষ চন্দ্র পাল ঈর্ষান্বিত হয়ে আহবায়ক কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা করে জেলা ময়মনসিংহের বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ‘ক’ অঞ্চল আদালতে মোকদ্দমা নং- ১১১৯/০৯ দায়ের করেন। উক্ত মোকদ্দমায় প্রধান উপদেষ্টা শ্রী রাধেশ্যাম দাস সহ ১৯ (উনিশ) জনকে বিবাদি করা হয়। পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালতের আদেশক্রমে ময়মনসিংহ কোতোয়ালী থানার তৎকালীন এস আই ষষ্ঠিচরণ বাবু ও সার্ভেয়ার মোঃ রফিকুল ইসলাম সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক মন্দিরের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতের নিকট পৃথক পৃথক ভাবে রিপোর্ট দাখিল করেন। বাদী পক্ষ সাবেক সভাপতি শ্রী প্রাণতোষ চন্দ্র পাল কর্তৃক আনিত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় বিজ্ঞ আদালত উক্ত মোকদ্দমা ১৩/১০/২০১০ ইং তারিখে খারিজ করে দ্বিতীয় পক্ষকে অব্যহতি প্রদান করেন।
অতঃপর আহ্বায়ক কমিটি ২০১২ সনের ১লা জানুয়ারি শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবার মন্দিরে নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সাধারণ সভার আয়োজন করেন। সেই সভায় উপস্থিত সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি শ্রী অমল পাল ও সাধারণ সম্পাদক শ্রী শংকর বসাক সহ ২৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি এবং ১৮ জন উপদেষ্টাকে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। যার মেয়াদকাল ৫ বৎসর।
উল্লেখ্য যে, উক্ত কমিটি মন্দিরের সার্বিক কার্যক্রম সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সুনামের সাথে পরিচালনা করিয়া বিভিন্ন ভক্তের অনুদানের টাকা দিয়ে মন্দিরের জড়াজীর্ণ টিনশেড অবস্থা থেকে দ্বিতীয় তলায় উন্নতি করে বাবার মূল মন্দির নির্মান করে পুনঃরায় বাবার বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা হয়। মন্দির পরিচালনাকালীন সময়ে কমিটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে সরকারি অনুদান (ধর্ম মন্ত্রণালয় ও জেলা পরিষদ) দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োজিত করে অবশিষ্ট কাঠামো চারতলা বিশিষ্ট মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মন্দিরের উন্নয়নের কাজ ভক্তদের অনুদান সংগ্রহপূর্বক ধীরে ধীরে সম্পন্ন করা হচ্ছে যা এখনো চলমান রয়েছে। আরোও উল্লেখ্য যে, মন্দিরের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার স্বার্থে গঠিত মন্দির কমিটির মেয়াদান্তে অর্থাৎ ২০১৭ ইং সালের ১লা জানুয়ারি থেকে পরবর্তী ৫ (পাঁচ) বছরের জন্য ১৬/১২/২০১৬ তারিখের সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমিটি পূর্ণগঠন করা হয়।
কমিটির সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবার আশ্রমকে ‘শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবা’র আশ্রম ও মন্দির’ নামকরণ করা হয়েছে। মন্দিরে নিত্য পূজা অর্চনা সহ চতুর্থ তলায় শ্রীশ্রী প্রিয়নাথ শিব মন্দির স্থাপন এবং বাৎসরিক দুর্গাপূজা, কালীপূজা, লক্ষ্মী পূজা, স্বরস্বতী পূজাসহ সকল ধরনের পূজা-অর্চনা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এবং পূজা অর্চনায় শহরের অসংখ্য ভক্ত সমাগম হয়ে পূজায় অংশগ্রহণ করে মহাপ্রসাদ গ্রহণ সহ আনন্দ উপভোগ করে আসছে। বর্তমানে মন্দিরে সকালে বাল্যভোগ, দুপুরে রাজভোগ এবং রাতে সন্ধ্যা আরতী শেষে বাবার মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হচ্ছে। প্রতিবেলায় আনুমানিক শতাধিক ভক্তবৃন্দ বাবার ভোগ আস্বাদন করার সুযোগ পাচ্ছে। পুনরায় মন্দিরের অসমাপ্ত উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ২৪/১২/২০২১ইং এ সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে সভাপতি শ্রী অমল পাল ও সাধারণ সম্পাদক শ্রী শংকর বসাক পদ বহাল রেখে অন্যান্য পদের কিছু পরিবর্তন এনে উপস্থিত সকলের কন্ঠ ভোটে ২০২২ ইং সালের ১লা জানুয়ারি থেকে পরবর্তী ৫ (পাঁচ) বছরের জন্য কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। বর্তমান কমিটির মেয়াদ আগামী ৩০/১২/২০২৬ ইং পর্যন্ত বলবৎ রয়েছে। আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কোন ধরনের যাচাই-বাছাই না করে মন্দিরের সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী উত্তম চক্রবর্তী রকেট কে উদ্দেশ্য করে স্থানীয় কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফলাও করে অসত্য ও ভিত্তিহীন নিউজটি প্রচার করে। দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে এধরণের লেখনীতে আমরা সত্যিই মর্মাহত।
শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবা’র আশ্রম ও মন্দিরের পক্ষ থেকে উপস্থিত সবাইকে মন্দির পরিদর্শনসহ মন্দিরের সার্বিক কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।