Header Image

কবি নজরুলের ১২৬তম জন্ম জয়ন্তী উৎসব সমাপ্ত প্রধান অতিথি উপদেষ্টাগণ ও সভাপতি সংস্কৃতি সচিব না আসায় ক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার :

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে কবির কৈশোর স্মৃতি বিজরিত ময়মনসিংহের ত্রিশালে তিনদিনব্যাপী নজরুল জন্ম জয়ন্তী উৎসব গতকাল মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সহযোগিতায় ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে দরিরামপুর নজরুল মঞ্চে ৩দিনব্যাপী অনুষ্ঠান ও ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ২দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সমাপনী দিনে দুজন উপদেষ্টা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তারা কেউ উপস্থিত হননি। ফলে অনেকটাই সাদামাটা অনুষ্ঠান ঘিরে ক্ষোভ ছিল ত্রিশালবাসীর। তা ছাড়া জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠান না হওয়ায় আগেই ক্ষুদ্ধ ছিল ময়মনসিংহবাসী। তবে নজরুল ভক্তদের উপস্থিত ছিল নয়ন জুড়ানো। গতকাল মঙ্গলবার সমাপনী অনুষ্ঠান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী কিন্তু তিনি না আসায় প্রধান অতিথি হন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম। এমনকি অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব মো.মফিদুর রহমানের। তিনিও উপস্থিত হননি। সভাপতিত্ব করেন ময়মনসিংহের জেলা মুফিদুল আলম। অন্যদিকে কবির ১২৬তম জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ২দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সমাপনী দিন সোমবার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. সি আর দত্তের। ওই অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত হননি। ফলে সেখানের অনুষ্ঠানে উৎসবের আমেজে ভাটা পড়ে।
২৫মে ত্রিশালের নজরুল মঞ্চে তিনদিনের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রনালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা। তখন মূষলধারে বৃষ্টির মধ্যেই প্রাণবন্ত উপস্থিত ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। পানির মধ্যে চেয়ারে বসে শ্রোতার আলোচনা অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মধ্যরাত পর্যন্ত উপভোগ করেন।

ওদিকে ত্রিশালে নজরুল জন্ম জয়ন্তী উৎসবে কে ঘিরে তিনদিনই ত্রিশালের সর্বত্র বিরাজ করেছে আনন্দ উৎসব। জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠান না হলেও লাখো মানুষের পদচারনায় মুখরিত ছিল ত্রিশালের কয়েক কিলোমিটার এলাকার। প্রতিটি ঘরে ঘরে চলছে আনন্দ আয়োজন। প্রতিটি পরিবার এখন আত্মীয়-স্বজনের পদচারনায় মুখরিত ছিল। তিনদিনব্যাপী নজরুল মেলা ২৫ মে শুরু হওয়ার নিয়ম থাকলেও ২দিন আগে থেকেই মেলা অঙ্গন হয়ে ওঠে জমজমাট। ত্রিশাল সরকারী নজরুল একাডেমী থেকে শুরু করে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যেন উৎসবের যাত্রা শুরু হয়েছিল। হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও নজরুল ভক্তদের পদচারণা রয়েছে এখানে। জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠান না হওয়ায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনদিনের কয়েক কোটি টাকার বিকিকিনি হয়েছে। ত্রিশাল সরকারি নজরুল একাডেমী মাঠে বিশাল মেলায় ক্রেতা উপস্থিত ,বিকিকিনি ও দর্শনার্থী ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে মেলার ইজারা মূল্য নিয়ে অনেকে কষ্টের কথা জানিয়েছেন।

মেলায় উপস্থিতির কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড থেকে পুরো পৌর এলাকার দুই কিলোমিটার জুড়েই মানুষ,রিক্সা জট আর যানযট ছিল।
মেলায় আগত বিখ্যাত রাজা চা স্টলের মালিক আজাহার উদ্দিন জানান, দশফুট জায়গার ইজারা ৫০হাজার টাকা। এত বেশী টাকা একটা চাপ হয়ে যায়। বিকিকিনি নিয়ে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। একই সাথে সরু রাস্তা হওয়ায় নারী ক্রেতারা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।

নজরুল জন্ম জয়ন্তী উৎসবে হাজার হাজার দর্শনার্থীর পদচারনায় মুখরিত ত্রিশাল। এবার নজরুল মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অন্তত ৫শ স্টল বসে। নান্দাইল থেকে আসা ক্রেতা নাসরীন আক্তার বলেন,এ মেলায় আমি প্রথমবার এসেছি। অনেক ভালো লেগেছে। এখানকার মানুষের নজরুলের প্রতি ভালবাসা দেখে মুগ্ধ হয়েছি। তবে জাতীয় পর্যায়ে না হওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মুক্তাগাছা থেকে আগত ডা,শাহরিয়া জাহান সিনথি জানান,মেলায় অত্যাধিক ভীড়। মানুষের ভীড়ে কেনাকাটা করা দায়। তবুও কিনেছি। নজরুল উৎসবে এসে অনেক ভাল লেগেছে। এ এক নতুন অভিজ্ঞতা।
দর্শনার্থী ফরহাদ হোসেন জানান,আমরা হতাশ হয়েছি। জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠান ত্রিশালে হয়নি। আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। আমরা চাই যেন ত্রিশালে প্রতিবছর জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠান হয়। নজরুল আমাদের ত্রিশালের সন্তান। আমরা ত্রিশালেই চাই নজরুল জয়ন্তী হোক। দেখেন কত হাজার হাজার মানুষ এখান্ েএসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ত্রিশালে জাতীয় পর্যায়ে মূল অনুষ্ঠান না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শফিউল আজম বিপু ফেইস বুকে লিখেছেন, ক্ষমা করো কবি নজরুল। এ অপরাধ ত্রিশালের আম জনতার না। এটা নেতৃত্বের দুর্বলতা,অদক্ষতা। কুমিল্লাবাসী তোমাকে কষ্ট দিল আজ সেখানেই নজরুলের মূল জন্ম জয়ন্তী। আহা আফসোস!
মেলার ইজারাদার সাব্বির আহমেদ রনি জানান,দেশের বিভিন্ন স্থানে থেকে স্টল এসেছিল। নিরাপত্তার সাথে ক্রেতা-বিক্রেতারা আসতে পেরেছেন। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
নজরুল জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে ত্রিশাল সদরের সকল প্রতিষ্ঠানে রং ও আলোক সজ্জা করা হয়েছিল। রাতের বেলায় এক অন্যরকম আলোকসজ্জা ছিল। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানসহ পৌর এলাকায় আলোক সজ্জা করা হয়েছিল।

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন,আমি জানতাম না ত্রিশালের মানুষ নজরুলকে এত ভালোবাসে। বৃষ্টির মধ্যে মধ্যেও এত মানুষের আগমন। এখানে আমি ও ইউএনও দুজনই নতুন। নজরুলের প্রতি এখানকার মানুষের ভালবাসার বিষয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা নেই। আমি মুগ্ধ হয়েছি এখানকার মানুষের নজরুলের প্রতি ভালবাসা দেখে। এখানে জাতীয় পর্যায়ে নজরুল জন্ম জয়ন্তী আয়োজনের জন্য দাবীদার। আগামী বছর সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে ত্রিশালে জাতীয় পর্যায়ে নজরুল জন্ম জয়ন্তী করবো বলে আশা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!