
রাকিবুল হাসান ফরহাদ
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ব্যস্ততম ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড এলাকাটি এখন কার্যত একটি অবৈধ বাজারে পরিণত হয়েছে। মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠেছে শতাধিক ভ্রাম্যমাণ দোকান, যেখানে প্রতিনিয়ত চলছে ফলমূল ও কাঁচামাল বিক্রি। জনসাধারণ ও যানবাহনের চলাচলে তৈরি হয়েছে মারাত্মক দুর্ভোগ, আর এর আড়ালে সক্রিয় রয়েছে এক ভয়াবহ চাঁদাবাজির চক্র।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কের জায়গায় দোকান বসাতে ব্যবসায়ীদের এককালীন ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। এরপর প্রতিদিন দিতে হয় ২০ থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা। এই চাঁদাবাজির নেতৃত্বে রয়েছেন পৌর বাজার ইজারাদার শহীদ মিয়া। দোকানিরা অভিযোগ করেন, প্রশাসনের লোকদেখানো উচ্ছেদ অভিযান হলেও মূল সিন্ডিকেট থেকে যায় অক্ষত। “উচ্ছেদ অভিযান এলেও কিছুদিন পর আবার শহীদের লোকজন এসে বসতে বলে,” জানান এক দোকানি।
নজরুল কলেজ মার্কেটর রাজধানী হোটেলের সত্যাধিকারী গোলাম মোস্তফা আজকের পত্রিকাকে বলেন, “এসব অবৈধ দোকানের কারণে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে যেয়ে গাদাগাদির কারণে এখানে নিয়মিত চুরি-ছিনতাই হচ্ছে। অনেক সময় নারীরা পড়ছে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। প্রশাসন যদি চাই তবে আমরা বৈধ ব্যবসয়াীরা প্রয়োজনে মাসে ত্রিশ হাজার টাকা তুলে দেবো, যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সবসময়ের জন্য এখানে আনসার বা পুলিশ নিয়োগ করে।”
এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শহীদ মিয়া দাবি করেন, তিনি মহাসড়ক ইজারা নিয়েছেন, তবে পরে বলেন, “প্রতিদিন কিছু টাকা নিই, তবে জায়গা কোন কর্তৃপক্ষের আওতায় তা সঠিক জানি না। পৌর প্রশাসক জানেন।”
অন্যদিকে, ত্রিশাল পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারী বলেন, “মহাসড়ক ইজারার আওতায় নয়। আমি শহীদকে একাধিকবার ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। সে দায় স্বীকার করেনি। আমরা দ্রুতই অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করবো।”
তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—যেখানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় থাকা মহাসড়কে কোনো ইজারা না থাকার কথা, সেখানে বছরের পর বছর কীভাবে চাঁদা আদায় হয়? প্রশাসনের নীরব ভূমিকা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় এ চক্র বেপরোয়াভাবে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে বলেই মনে করেন সচেতন মহল।
এক বৃদ্ধ দোকানি বলেন, “আমি ৪০ বছর ধরে এখানে দোকান করতে দেখছি। কেউই আমাদের উঠাতে পারেনি।” এটি প্রমাণ করে, সড়কটি যেন আর জনগণের নয়—বাজার দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে।
সড়কজুড়ে এমন অবৈধ বাজার স্থাপন শুধু জনভোগান্তি নয়, বরং বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণও হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। তারা বলছেন, এ অবস্থার দ্রুত অবসান না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
ত্রিশালের এই মহাসড়ক যেন এখন একটি দৃষ্টান্ত—কিভাবে প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও প্রভাবশালী চক্রের যোগসাজশে একটি মহাসড়ক বাজারে পরিণত হয়। এখনই যদি কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে জনদুর্ভোগ ও আইনশৃঙ্খলার অবনতির দায় প্রশাসনকে নিতেই হবে।