
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার বড়গ্রাম ইউনিয়নের প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হারাতে বসেছে তার ঐতিহ্য।
বাহেংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একসময় এলাকার শিক্ষার বাতিঘর ছিল। ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয় আজ শিক্ষক সংকট, শিক্ষার্থী হ্রাস ও ভাঙা অবকাঠামোর কারণে টিকে থাকার লড়াই করছে।প্রায় ১৫ বছর ধরে বিদ্যালয়ে নিয়মিত প্রধান শিক্ষক নেই।
সরেজমিনে স্কুলে গিয়ে দেখা যায় স্কুলের নতুন ভবন না থাকায় পুরাতন ভবন ও টিনের তৈরী ছোট রুমে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের সাথে কথা হলে তারা বলেন,গত ১৫ বছর ধরে স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই। দেশের সকল স্থানে প্রাইমারী স্কুলের নতুন ভবন হলেও এইখানে পুরাতন ভবন ছাড়া আর কোন ভবন তৈরী হয়নি।
ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা বলেন,টিনের ঘরে ক্লাস করতে তাদের কষ্ট হয়। গরমের সময় প্রচন্ড গরমের তাপ এবং বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি পড়ে ক্লাসরুমে এতে করে বই ভিজে যায়। এমন বেহাল অবস্থার কারনে স্কুলে শিক্ষার্থী সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান,ঐই এলাকাটি বিএনপি পন্থী ভোটার বেশি থাকায় তৎকালীন পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের এমপির এই এলাকার প্রতি বিরূপ মনোভাব ছিল।যা প্রভাব স্কুলের উপরও পড়েছে বলে জানান তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান,বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তার স্থানে কাওকে আসতে দিতে চান না। বিগত সময়ে অনেকেই এখানে জয়েন করলেও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের মর্জি মত না হলে তাকে কৌশলে চলে যেতে বাধ্য করা হতো। একসময় এই স্কুলে তিন চার শতাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও বর্তমানে সংখ্যা নেমে এসেছে ১৩০-৫০ জনে।
তিনি আরও বলেন,পনের বছর ধরে স্থানীয় একজন জুনিয়র শিক্ষক পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট মন্ত্রী খালিদ বাবুর আত্মীয়ের পরিচয়ে দুই মেয়াদে পনের বছরের বেশি সময় ধরে কর্মরত আছেন, বর্তমানে তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। আরও দুইজন সহকারী শিক্ষকও এক যুগের বেশি সময় ধরে কর্মরত।
যার ফলে জবাবদিহীতার বাহিরে ছিল স্কুলের শিক্ষকেরা, যতটা না স্কুলের পাঠদান ও স্কুল নিয়ে মনযোগী, তার চেয়ে বেশি মনোযোগী ছিল এলাকার স্থানীয় রাজনীতি ও দেনদরবার নিয়ে।অভিভাবকেরা অভিযোগ করেন, শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতা ও রাজনীতিতে সম্পৃক্ততার কারণে শিক্ষার মান ভেঙে পড়েছে।
এ বিষয়ে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাকফিজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিগত সময়ে রাজনীতির বিষয়টি অস্বীকার করেন।
তিনি আরও দাবি করে বলেন, দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষক নেই সেই তাই তিনি এই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নতুন শিক্ষক নিয়োগ ও নতুন ভবন নির্মান হোক সেটা আমিও চাই।
বড়গ্রাম ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার শামছুদ্দোহা বলেন,আমাদের চাওয়া প্রধান শিক্ষক নিয়োগ এবং নতুন ভবন নির্মাণ করা হোক।তাহলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়বে। স্কুলটি তার পূর্বের ঐতিহ্য ফিরে পাবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ ওবায়দুল্লাহ বলেন,আমরা বিষয়টি জেনেছি এবং বিষয়টি নিয়ে আমরা মিটিং করছি।বিষয়টি উর্ধ্বতনে জানিয়েছি আশা করি সমস্যার সমাধান হবে।