রংপুর প্রতিনিধি :
অবৈধভাবে টাকা আয়ের নেশায় অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার নতুন রেকর্ড তৈরি করে তড়িঘড়ি করে আগাম স্বেচ্ছায় অবসরে গেলেন পরিচালক ফরিদুল হক চৌধুরী। এতে করে হাসপাতালের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হত্যা মামলায় এজাহারনামীয় বরখাস্তকৃত ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী সন্ত্রাসী আশিকুর রহমান নয়ন ওরফে ভাঙ্গা নয়নের সিন্ডিকেটেসহ পরিচালক হাতিয়ে নিলেন কয়েক কোটি টাকা।
সুত্র জানায়, রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (রমেক) এ আধিপত্য বিস্তারসহ নানান ঘটনায় কয়েকটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ইং সালে রমেক হাসপাতাল ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী সমিতি তৎকালীন সাধারণ সম্পদক মোখলেছার রহমান খুন হন। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে রংপুর কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন। এজাহারে নাম থাকায় হাসপাতালের কর্মচারী মশিউর রহমান বকুল, আশিকুর রহমান নয়ন, শাহিনুর ইসলাম, আলী আহম্মেদ মজুমদার বাবু, মামুনুর রশিদ বিপ্লব, আব্দুর রউফ সরকারকে শৃঙ্খলা ও আপিল বিধি মালা ১৯৮৫ এর অনুচ্ছেদ বিসিডি ধারা মোতাবেক স্মারক নং ১৯৯৩.১৯৯১.১৯৯৪.১৯৯২, তারিখ- ১২/০৬/২০১৭ইং তাকে হাসপাতালের চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এ সময় থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৩ বছর হাসপাতালে কর্মচারীদের কোন কমিটি বা সিন্ডিকেট তৈরি করতে দেয়নি তৎকালীন পরিচালক অজয় কুমার। এরপর অজয় কুমার অবসরে গেলে ২০১৯ইং সালের শেষের দিকে পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন ফরিদুল হক চৌধুরী। যোগদানের কিছুদিন যেতে না যেতেই হত্যা মামলায় এজাহারনামীয় বরখাস্তকৃত ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীদের সাথে নিয়ে শুরু করে দেন মাত্রাতিরিক্ত স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম। সন্ত্রাসী ভাঙ্গা নয়নের নেতৃত্বে হাসপাতালের বড় ছোট টেন্ডারবাজি, ৫ম তলার পত্তর শাখা, ব্লাড ব্যাংক, জরুরী বিভাগ, পুলিশের কেসের ডেড বডি, সাধারণ কর্মচারীদের হয়রানীমূলক বদলি, মাঠের গাছ বিক্রি, ডাস্টবিন পরিস্কার, বিভিন্ন রিপিয়ারিং কাজ, ডাক্তারের রুম মেরামত, এসি মেরামত, হাসপাতাল ফ্রিজ, স্ট্যান্ড ফ্যান্, সিলিং ফ্যানসহ সবকাজেই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন তারা। এছাড়াও হাসপাতালের সুইপাার ও পিয়নদের মধ্যে ২১জনকে নিজ বেতনে প্রমোশন, করোনাকালে হোমকোয়ারেন্টাইনে খাওয়া ও শ্রমিকদের বিল, হাসপাতালের সামনে অস্থায়ী ৩২টি দোকান, ক্যান্সার হাসপাতালে ভিটি বালু, পাথর, খোয়া সাপ্লাইসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে সহযোগিতা করেছেন হাসপাতাল পরিচালক ফরিদুল হক চৌধুরী। এতে করে উভয় পক্ষকেই আর্থিকভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান।
সুত্র আরও জানায়, হত্যা মামলার কারণে দীর্ঘ দিন থেকে হাসপাতালের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী সমিতির কার্যক্রম স্থগিত ছিল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হঠাৎ করে হাসপাতাল পরিচালক ফরিদুল হক চৌধুরী মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আইসিইউ ইনচার্জ জামাল উদ্দিন মিন্টুকে সাথে কোন নিয়মনীদির তোয়াক্কা না করে নির্বাচন আয়োজন করেন। এতে করে বরখাস্তকৃত কর্মচারীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি ও সম্পাদকসহ সকলেই নির্বাচিত হয়ে আসেন। বরখাস্ত হয়েও পরিচালকসহ হাসপাতালের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ক্ষমতায় এসে দাপটের সাথে রমেক হাসপাতালের বিভিন্ন কাজে আরও নিয়ন্ত্রণ নেন তারা। তৈরি হয় বিশাল একটি সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট। ৪র্থ শ্রেণী ১৭-২০ গ্রেড সরকারি কর্মচারী সমিতির রংপুর মেডিকেল ইউনিট শাখার সাধারণ সম্পাদক পরিচয়দানকারী শীর্ষ সন্ত্রাসী আশিকুর রহমান নয়ন । সন্ত্রাসী নয়ন ও বিএনপি নেতা করিমের কাছে রয়েছে ছোট চায়না রিভলভার। যার কারণে সিন্ডিকেট তৈরি করে হাসপাতালের কর্মচারীদের সবসময় জিম্মি করে রাখা হয়। এদের সিন্ডিকেটের সদস্যরা হলো- ঠিকাদার জয়নালের ভাই জালাল ও ঝান্টু, বাবলু ঠিকাদারের ছোট ভাই রুপম, ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমিনুল, ভায়রা মোস্তফা, পূর্বগেটের বিএনপি নেতা করিম, মেডিকেল কলেজের সুইপার দাড়িয়া সাজু, হাসপাতালের ক্লিনার আউয়াল, সর্দার আশরাফুল ইসলাম খোকন, হামিদুল ইসলাম, পিয়ন রউচ, পিয়ন ভানু, প্রচার সম্পাদক সুমন, বরখাস্তকৃত সর্দার আব্দুর রউফ সরকার, মশিউর রহমান বকুল, জামায়াত নেতা ইলেক্ট্রিশিয়ান রোকন, হাসপাতাল কর্মচারী নাঈম, জরুরী বিভাগের কর্মচারী বাদল, ব্লাড ব্যাংকের কর্মচারী পলাশ, বিপ্লব, আজিজ, কাওছার, ছাত্রদল নেতা ব্লাড সুমন, নয়নের ভাগ্নে ক্যাডার স্বপন, চুক্তিভিত্তিক ক্যাডার মুকুল, ডিসি অফিসের মোজাহার ও খান বাবু। এই সদস্যরা হাসপাতালে কোন কাজ করে না। তারা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চাঁদাবাজিসহ মাস্তানি কার্যক্রম চালিয়ে বেড়ায়। তারা চুক্তিভিত্তিক জনবল দিয়ে তাদের পরিবর্তে কাজ করিয়ে নেন।
আরও জানা গেছে, হাসপাতাল পরিচালক ফরিদুল হক চৌধুরীর অনিয়ম, দুর্ণীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়টি ফাঁস হওয়া তিনি তড়িঘড়ি করে স্বেচ্ছায় আগাম অবসরের আবেদন করেন। সেই মোতাবেক ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ইং তারিখ শেষদিন অফিস করে বিদায় নিয়ে নিজ বাড়ি ফরিদপুর চলে যান। তিনি যাওয়ার দিন তড়িঘড়ি করে সরকারি চাকরির বিধি লঙ্ঘন করে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে কিছু কাগজপত্রাদি স্বাক্ষর করে যান। এ নিয়ে হাসপাতালে শুরু হয়েছে তুলকালাম কান্ড।