Header Image

স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে পরিবেশসম্মত উপায়ে মুরগির নিরাপদ ডিম ও মাংস উৎপাদন

জাহাঈীর আলমঃ

বাজারে যে ডিম ও মুরগি পাওয়া যাচ্ছে তা সাধারনত এন্টিবায়োটিক মুক্ত নয়। এই এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয় মূলত মুরগি পালনের সময় এবং এর কার্যকারিতা থেকে যায়।

এইসব ডিম ও মাংস গ্রহণের ফলে মানব শরীরেও তার প্রভাব বিস্তার করে। এর ফলে আমাদের শরীর এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্ট হয়ে যাচ্ছে। এই ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্য ময়মনসিংহ জেলার মল্লিকবাড়ি, ভালুকা ও ত্রিশাল উপজেলা এবং গাজীপুরের শ্রীপুর ও কাপাসিয়া উপজেলায় এন্টিবায়োটিক মুক্ত ডিম ও মুরগি পালন শুরু হয়েছে।

প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা এখন নিরাপদ উপায়ে ডিম ও মুরগি পালন করছে। জানা গেছে উক্ত উপজেলাগুলোতে প্রায় ৪৫০ জন খামারী সকল ধরনের জীবনিরাপত্তা মেনে নিরাপদ ডিম ও মুরগির মাংস উৎপাদন করছে।

আর এই মহৎ উদ্যোগের সুযোগ করে দিয়েছে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রকল্প এবং “পোল্ট্রি খাত থেকে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি হ্রাস করতে পরিবেশগত ভাবে টেকসই অনুশীলনগুলি গ্রহণ করে গাজীপুর ও ময়মনসিংহ জেলার ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো নিশ্চিতকরন প্রকল্প” শীর্ষক উপপ্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পিদিম ফাউন্ডেশন। উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন সময়ে পরিবেশসম্মতভাবে নিরাপদ ডিম ও মাংস উৎপাদনের জন্য প্রশিক্ষণ, কারিগরি সহায়তা, বিনা মূল্যে বিভিন্ন জীবনিরাপত্তা উপকরণ সামগ্রী বিতরন করা হয়েছে। তাদের এই উদ্যোগকে আরও বেগবান করতে পিদিম ফাউন্ডেশন তাদেরকে সহজ শর্তে ঋণ দিচ্ছে। শুধু তাই নয় এইসব ডিম ও মাংস গবেষণাগারে পরীক্ষার মাধ্যমেও নিশ্চিত হওয়া গেছে যে এগুলো এন্টিবায়োটিকমুক্ত।

প্রকল্প শুরুর সাথে সাথেই খামারীদের কারিগরি প্রশিক্ষণের পাশাপাশি নিয়মিত ভ্যাক্সিন প্রদানের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়। দেখা গেছে খামারীদের ৯৪ শতাংশ এখন নিয়মিত ও সঠিক উপায়ে ভ্যাক্সিন করে থাকে যা আগে ছিলো মাত্র ৭৩ শতাংশ। ফলশ্রুতিতে ব্রয়লার মুরগির মৃত্যুহার  ৭ শতাংশ থেকে কমে ৩ শতাংশে নেমেছে এবং লেয়ার মুরগির ক্ষেত্রে তা ৫ শতাংশ থেকে কমে ২ শতাংশে নেমেছে।

প্রকল্পের পক্ষ থেকে উৎপাদিত ডিম ও মুরগি বাজারজাতকরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে উদ্যোক্তাগণ বাড়িতে বসেই তাদের উৎপাদিত পন্য ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারছে। ইতোমধ্যেই বাজারে তাদের নিরাপদ ডিম ও মাংসের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষই এইসব ডিম ও মাংসের মূল ক্রেতা। তাদের দেখে অনেক খামারী এখন নিরাপদ ডিম ও মাংস উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে।

ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ চানপুর গ্রামের খামারী শাহ আলম বলেন, পিদিম ফাউন্ডেশন থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে আশি হাজার টাকা ঋণ নিয়ে পরিবেশসম্মত লেয়ার মুরগির খামার গড়ে তুলেছেন। প্রশিক্ষণ গ্রহণের আগে নিরাপদ ডিম উৎপাদন বিষয়ে তার কোন ধারনাই ছিলো না।

আরেক উদ্যোক্তা জাকারিয়া জানান, শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি তিনি লেয়ার খামার গড়ে তুলেছেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে খামারের বিভিন্ন উন্নয়ন সাধন করেন যার মধ্যে রয়েছে নিপল ড্রিংকিং সিস্টেম ও বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। ফলে তার মুরগির লিটার এখন আর পরিবেশ দূষণ করছে না বরং তিনি রান্নার জন্য নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস পাচ্ছেন। আর নিপল ড্রিংকিং এর ফলে তার পরিশ্রম কমে যাওয়ার পাশাপাশি পানির অপচয় কম হচ্ছে। উল্লেখ্য যে নিরাপদ ডিম বিক্রি থেকে তাদের মাসে প্রায় ৪০ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে।

পিদিম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এডভিন বরুন ব্যানার্জী বলেন, “পোল্ট্রি খাত থেকে স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাস করতে এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মানুষকে এন্টিবায়োটিকমুক্ত ডিম ও মাংস সরবরাহ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। আর এই লক্ষে আমরা উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছি।“

প্রকল্পের ফোকাল পারসন কৃষিবিদ সমীর রঞ্জন বড়াল জানান, প্রকল্পটি আমরা বাস্তবায়ন করছি মানুষের কাছে এন্টিবায়োটিকমুক্ত ডিম ও মাংস সরবরাহ করার জন্য। খামারীদের সকল প্রশিক্ষণ ও উপকরন সরবরাহ করে দক্ষ করে গড়ে তোলা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী খামারীরা ডিম ও মাংস উতপাদন করে লাভবান হচ্ছেন।

ভালুকা উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মতিউর রহমান জানান, পরিবেশসম্মত উপায়ে ডিম ও মাংস উৎপাদনে যেমন খামার টেকসই হবে তেমনি খামারী আগের সনাতন প্রথার চেয়ে লাভবান হবে। আর এতে করে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও হ্রাস পাবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!