Header Image

লামায় কর্মরত পুলিশ অফিসার (ডিএসবি) এএসআই আলমগীর বাদশার সহযোগিতায় তাহমিনা এখন স্কুলে

 

ইসমাঈল হোসেন সোহাগঃ

 

বান্দরবান জেলার লামা থানা পুলিশের ডিএসবি অফিসার এএসআই আলমগীর বাদশার সহযোগিতায় বিয়ের পিরি থেকে ফিরে তাহমিনা এখন স্কুলে গিয়ে লেখা-পড়া করার সুযোগ হয়েছে।১৩ জানুয়ারি”
২০২০ইং রাতে সদ্য পিএসসি পাশ তাহমিনা (১৫)এর বিয়ের খবর জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, নূর-এ-জান্নাত রুমি ও লামা থানার অফিসার ইনচার্জ অপ্পেলা রাজু নাহার তৎপরতায় ভেঙ্গে দেয়া হয় বিয়ে।

গত ১৪ জানুয়ারি”২০২০ইং সকাল ১০.৩০ ঘটিকায় সোর্সের মাধ্যমে লামায় কর্মরত ডিএসবি অফিসার এএসআই আলমগীর বাদশা খবর পেয়ে সরজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখতে পান, তাহমিনারা ৬ বোন সে সবার বড় ,দিন মজুর বাবার অভাবের কারণে স্কুলে পড়াতে না পারায় বিয়ের ব্যবস্থা করেছে।

মেয়ের সাথে কথা বলে জানতে পারে তার লেখা পড়া করার খুবেই আগ্রহ এবং সে লেখাপড়া শিখে একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চায়। সে ২০১৯ সালে মধুঝিরি সরকারি বিদ্যালয় থেকে পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.১৭ পেয়ে পাশ করেছে কিন্তু পিএসসি’র প্রসংশাপত্র তুলেনি, অর্থাভাবে স্কুলেও ভর্তি হতে পারে নাই।জানতে পেরে এএসআই আলমগীর বাদশা তাহমিনাকে তার বাবা ও খালু সহ নিয়ে গিয়ে ওর শিক্ষা সনদ উত্তোলন করে লামা বালিকা উচ্চ বিদ্যায়ালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে সেখানে ভর্তির ব্যবস্থা করে দিয়ে তার হাতে বই তুলে দেয়।এরপর তার খাতা কলম, গাইড বই,স্কুল ড্রেস,স্কুল ব্যাগ,সবকিছুই ব্যবস্থা করে দেন, সেই এএসআই আলমগীর।

লামা থানার কর্মরত ডিএসবি অফিসার এএসআই আলমগীর বাদশা সাংবাদিকদেরকে জানান, আমার অনুভূতি আসলে আমি একটা ক্ষুদ্র দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র, কারণ আমি পড়ালেখা করতে গিয়ে অনেক কষ্ট করেছি,আমার মত করে এতটা কষ্ট করে কেউ লেখাপড়া করতে চাইবে না। আমি যখন নবম শ্রেণীতে উটি তখন আমার লেখাপড়া অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গেছিল প্রায়, আমি তখন কুমিল্লায় গিয়ে মানুষের বাড়িতে ৪৫ দিন দিনমজুর বদিল্লার কাজ করে টাকা ইনকাম করে নিয়ে গিয়ে ক্লাস নাইনের বই কিনে পুনরায় লেখাপড়া শুরু করি। তখন আমাকে অনেক মানুষ সাহায্য করতে চেয়েছিল কিন্তু আমি নেইনি, নিজে পরিশ্রম করেছি, মানুষের সেবা করা আমার একটা নেশা, আমি চাই আমার মত লেখাপড়ায় যেন কেউ এতটা কষ্ট না পায়।মানুষের করতে পারলে আমার ভাল লাগে, আমার এক ছেলে আব্দুল্লাহ ৮ বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী তাকে নিয়ে স্ত্রীসহ অনেক কষ্ট করছি, আর এক মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা -৩ সে ভাল আছে, বৃদ্ধ অসুস্থ্য বাবা-মা আছে ,সবার জন্য দোয়া চাই।

তাহমিনা ও তার বাবার অনুভূতি, তাহমিনার সাথে কথা বলে জানা যায়, সে পুনরায় স্কুলে ভর্তি হতে পেরে স্কুলে জীবনে ফীরে যেতে পেরে কতটা আনন্দিত তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।সে বলে আমি কখনও ভাবিনি আমি আবার স্কুলে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করতে পারবো। আমার স্কুল জীবন ফীরে পাবো, আলমগীর স্যার আমার জন্য যা করেছেন তা অতুলনীয়।

তাহমিনার বাবার সাথে কথা বলে জানা যায়, তার মেয়ের বিয়ে ভেঙ্গে গিয়ে আজ সে নতুন করে স্কুল জীবন ফিরে পেল আলমগীর স্যারের প্রচেষ্টায় এতে আমার পরিবারের সকলেই অনেক খুশি।মেয়ে আবার স্কুলে যেতে পেরে সেও অনেক খুশি হয়েছে। আমি ভুল করেছি, আমি সকলের সহযোগিতা চাই যাতে আমার সব মেয়ে গুলোকে লেখাপড়া করাতে পারি।

জানা যায় এএসআই নিরস্ত্র আলমগীর ১৫ বছর ধরে পুলিশের চাকুরী করে আসতেছে, তিনি চাকুরীতে আসার কয়েক মাস পরেই একটা নার্সিং কোর্স করার পর থেকে প্রায় ৯-১০ বছর পুলিশ হাসপাতাল ময়মনসিংহ,কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগ ঢাকা, লেভেল ওয়ান হাসপাতাল আলজেনিনা সুদান( জাতিসংঘ মিশনে) মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করে সুনাম অর্জন করেছেন এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা পদক ও সনদ পেয়েছেন।

এই মানবপ্রেমিক আলমগীর বাদশা ভাইয়ের জন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!