আরিফ রববানীঃ
ময়মনসিংহে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পরে নিখোঁজ হওয়া মহিলা কে উদ্ধার করে তার স্বজনদের কাছে পৌছে দিলেন ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। গত ১৫ই জুলাই বাস যোগে বাড়ী ফেরার পথে বাসে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন ত্রিশাল উপজেলার বৃদ্ধা রহিমা খাতুন। পরে তিনি বাসায় না ফেরায় তার স্বজনরা পুলিশকে অবগত করলে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি শাহ কামাল আকন্দের নেতৃত্বে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে উদ্ধার করে বাড়ীতে পৌছে দেন।
সুত্ মোতাবেক জানা যায়- ত্রিশাল উপজেলার ৫৫ বছর বয়সী রহিমা খাতুন ঢাকায় তার মেয়ের বাসায় বেড়াতে গেলে সেখানে বদ্ধ পরিবেশ তার কাছে অনীহা লাগলে সে ১৫ই জুলাই মেয়ের বাসায় থেকে নিজ বাড়ী ময়মনসিংহের ত্রিশালের উদ্দেশ্যে বাসযোগে রওনা করেন।
করোনা পরিস্থিতিতে বাসে সীমিত লোকজন তোলা হয়েছে। রহিমা বেগম যেই সিটে বসেছেন তার দুই ছিট পেছনে বসেছেন একজন অল্পবয়স্ক লোক। দেখতে মনে হয় ভদ্র গোছের মানুষ। লোকটি নিজে থেকে এসেই রহিমা বেগমের সাথে কথা বললেন এবং পরিচিত হলেন। রহিমা বেগম খুব নরম স্বভাবের ও গল্পপ্রিয় মানুষ। তাই তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠতে সময় লাগলো না। লোকটি রহিমা বেগমকে মা বলে সম্বোধন করেন। কিন্তু তখনও তিনি বুঝতে পারেননি তার সাথে কি ঘটতে চলেছে।
গাড়ি গন্তব্যের দিকে চলতে থাকে। তাদের আন্তরিকতা আর গল্পও জমে উঠতে থাকে। গল্প করতে করতে গাড়ি ময়মনসিংহ ত্রিশালে এসে পৌঁছলে লোকটি রহিমা বেগমকে বলে, যেহেতু মা বলে ডেকেছি, তাই আমি আপনাকে কিছু কিনে দিতে চাই। রহিমা বেগম মায়ায় পরে আর বাধ সাধতে পারেননি। লোকটি রহিমাা বেগমকে নিয়ে রিক্সায় চড়ে ময়মনসিংহ শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথিমধ্যে লোকটি ব্যাগ থেকে কিছু খাবার আর পানীয় বের করে দেয় রহিমা বেগমকে। রহিমা বেগম সরল মনে সেগুলো নিয়ে খেতে শুরু করেন। তারপর কিছু দূর যাবার পরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। হ্যাঁ, অজ্ঞান পার্টির ক্ষপ্পরে পরেছেন তিনি। লোকটি তার কাছে থাকা টাকা পয়সা, মূল্যবান সামগ্রী সব নিয়ে কেটে পড়ে।
এদিকে রহিমা বেগমের মেয়ে কোনভাবেই তার মায়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। তার মা কোথায় কিভাবে আছেন তাও জানতে পারছেন না। দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যান তিনি। এক সহকর্মীর সহায়তায় ঢাকায় পুলিশকে জানান বিষয়টি। দ্রুত নির্দেশনা পৌঁছে যায় ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের কাছে। কাল বিলম্ব না করে রহিমা বেগমকে উদ্ধারের জন্য নেমে পড়ে পুলিশ। অবশেষে একজন রিক্সাচালকের দেয়া তথ্যকে ভিত্তি করে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করে পুলিশ। শহরের একটি স্থানে পথের পাশে অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিলেন তিনি। রহিমা বেগমকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শেষে বৃদ্ধাকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেয় পুলিশের দলটি।
প্রতারক অজ্ঞান পার্টির সদস্যকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ ওসি শাহ কামাল আকন্দ। একই সাথে তিনি সকলকে একাকী যাত্রাপথে অজ্ঞান পার্টি হতে সাবধান থাকার আহবান জানান।