Header Image

চরফ্যাসনে শিশুদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত করলেন প্রধান শিক্ষক

ভোলা প্রতিনিধিঃ

চরফ্যাসন উপজেলার পূর্ব উত্তর চরমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফিরোজ কিবরিয়ার বিরুদ্ধে শিশু শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি এবং বিদ্যালয়ের উন্নয়ন বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। সুবিধাভোগী শিক্ষার্থীর মায়েদের মোবাইল নম্বরের স্থলে নিজ আত্মীয়স্বজনের মোবাইল নম্বর বসিয়ে উপবৃত্তির এসব টাকা আত্মসাত করেছেন বলে সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, অভিযোগটি গুরুতর এবং তদন্তাধীন আছে।
সুবিধা বঞ্চিত অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের মা রোজিনা বেগম ও বকুল বেগম জানান, চলতি বছরের শিশু শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রথম কিস্তির টাকা গত জুলাই মাসে শিওর ক্যাশের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারাসহ ওই বিদ্যালয়ের অন্ততঃ ৩০ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তির টাকা শিওর ক্যাশের মাধ্যমে না পেয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফিরোজ কিবরিয়ার সাথে যোগাযোগ করেন। প্রধান শিক্ষক টাকা না পেলে তার কিছু করার নাই বলে জানান এবং বিষয়টি শিওরক্যাশের ব্যাপার বলে এড়িয়ে যান। পরে অভিভাবকরা খোঁজ খবর নিয়ে নিশ্চিত হন যে, বিভিন্ন শ্রেণির ৩০ জন শিক্ষার্থীর মায়েদের মোবাইল নম্বর বদল করে সেখানে নিজের আত্মীয় স্বজনদের মোবাইল নম্বর বসিয়ে প্রধান শিক্ষক তাদের উপবৃত্তির টাকাগুলো বাগিয়ে নিয়েছেন। এভাবে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের বিষয় নিশ্চিত হওয়ার পর সুবিধাবঞ্চিত অভিভাবকরা গত ১৩ আগস্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
বৃহস্পতিবার অভিবাবকদের অভিযোগ অনুসন্ধানে বিদ্যালয় এলাকায় গিয়ে দেখাগেছে, একতলা বিশিষ্ট পুরাতন জরাজীর্ণ বিদ্যালয়ের দরজা জানালা কিছু নেই। শ্রেণিকক্ষের কোন বেঞ্চ নেই। অফিস কক্ষে নেই চেয়ার টেবিল। দুই জন মহিলাসহ ৪ শিক্ষকের এই বিদ্যালয়ে কোন টয়লেটও নেই। এমন জরাজীর্ণ বিদ্যালয়ের প্রতিবছরের উন্নয়ন খাতের বরাদ্দ কি করা হয়েছে এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেননি প্রধান শিক্ষক। এসময়ে উপবৃত্তির টাকা বঞ্চিত শিশু শিক্ষার্থীর অভিবাবকরা অভিযোগ করেন, ৩০ জন শিক্ষার্থীর মায়েদের মোবাইল নম্বর বদল করে সেখানে নিজের আত্মীয় স্বজনদের মোবাইল নম্বর বসিয়ে প্রধান শিক্ষক তাদের উপবৃত্তির টাকাগুলো বাগিয়ে নিয়েছেন।এর উপযুক্ত বিচারদাবী করেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ম্যানেজিং কমিটির একজন সদস্য অভিযোগ করেন, গত ৫ বছরে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দকৃত একটি টাকাও ব্যয় করা হয়নি। প্রধান শিক্ষক একাই এসব টাকা আত্মসাত করেছেন। উন্নয়ন বরাদ্দের কাজ করা হবে বলে আশ্বাস দিলে ও ওই বিদ্যালয়ে আজও কোন কাজ হয়নি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক ফিরোজ কিবরিয়া জানান, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত ও বিদ্যালয়ের উন্নয়ন খাতের টাকা আত্মসাতের ঘটনা সঠিক নয়। ভুল বসত শিশু শিক্ষার্থীদের নাম্বারের স্থালে অন্য নাম্বার ওই তালিকায় বসানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। একই সাথে এতগুলো শিক্ষার্থীর নাম্বার কি ভাবে ভুল হয় বা ভুল হয়ে যেসব নাম্বারে টাকাগুলো স্থানাস্তর হয়েছে সেগুলোর বাহক কারা এমন প্রশ্নের কোন জবাব প্রধান শিক্ষক ফিরোজ কিবরিয়া দিতে পারেননি। এবং বিদ্যালয়ের উন্নয়ন খাতের টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের কাজ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা ও সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম ধাপে সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি টাকা আত্মসাতের অভিযোগটি তদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত চলছে। তদন্তের স্বার্থে আপাদতঃ বেশী কিছু মন্তব্য করতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেছেন তিনি।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার তৃষিত কুমার চৌধুরী জানান, শিশু শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি আত্মসাতের অভিযোগটি গুরুতর। তদন্ত চলছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই কর্মকর্তা আরো জানান,গত বছর বিদ্যালয়টি পরিদর্শন কালে উন্নয়ন কাজে গাফিলতি পাওয়া গেছে। তাকে সতর্ক করা হয়েছিল। প্রধান শিক্ষক পরবর্তীতে উন্নয়ন কাজ করেছেন বলে জানান। মুলতঃ এখন দেখা যায় ওই প্রধান শিক্ষকের তথ্য সঠিক ছিল না।তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রুহুল আমিন জানান, তদন্তের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!