বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এখনো শহীদের তালিকায় নাম ওঠে নাই কালামিয়া শেখের পরিবারের। মহান মুক্তিযোদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর হাতে তাঁর পরিবারের সদস্যরাও নির্যাতনের শিকার হয়। তখন এক মেয়েও শিকার হন পাশবিক নির্যাতনের। এসময় পাক হানাদার ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আর ফিরে আসেনি কালামিয়া শেখ। কিন্তু স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও সরকারের পক্ষথেকে কোন স্বীকৃতি মিলে নাই এই পরিবারটির।
শহীদ কালামিয়া শেখের ছেলে সিদ্দিকুর রহমান (৬৬) সহ স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী মুক্তিযোদ্ধারা গণস্বাক্ষর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠির মাধ্যমে আবেদন জানিয়েছেন, যেন অন্তত শহীদ কালামিয়া শেখকে শহীদের সরকারী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
শহীদ কালা মিঞা শেখ হচ্ছে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার পোনা (কাদিরপাড়া) গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা।তারা গরীব হলেও ছিলেন স্বাধীনতাচেতা মানুষ। স্বাধীনতার সময় তাদের ভূমিকা অপরিসীম। এই কারণে মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের আগস্টে (ভাদ্র মাসের ২ তারিখ) স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তাঁর বাড়িতে আক্রমণ চালায়। সে সময় ছেলে সিদ্দিকুর রহমান তার মা ও ছোট ভাই বোনকে নিয়ে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে পালাতে পারলেও কালা মিয়া শেখ ও তার ১৪ বছর বয়সী এক কন্যা পাক হানাদারের হাতে ধরা পড়ে। তখন তাকে অমানুষিক নির্যাতন করে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাক্ষর সংবলিত চিঠিতে শহীদ কালামিয়া শেখের পুত্র সিদ্দিকুর রহমান (৬৬) জানান, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে গিয়ে তার ছোট বোনের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। তার বাবা কালামিয়া শেখকে হানাদাররা ধরে নিয়ে যায় এবং তাদের বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়। এরপর তার বাবা আর ফিরে আসেনি। নিশ্চয়ই তিনি শহীদ হয়েছেন। তখন থেকে পিতৃহীন নির্যাতিন সর্বহারা তার পরিবার জীবন সংগ্রাম করে কোন রকম বেঁচে আছেন তাদের পরিবার।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে করে এই শহীদের পুত্র ছিদ্দিকুর রহমান (৬৬) করুণ আর্তি জানিয়ে বলেন,
আমার পিতা শহীদ কালা মিঞা শেখকে স্বাধীনতার সময় নিজ বাড়ি থেকে পাকিস্তানি পাক হানাদার বাহিনী
ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আর ফিরে আসেনি এবং তার মৃত্যু দেহও খুঁজে পাইনি। স্বাধীনতা যুদ্ধে আমদের এত বড় ক্ষতি হলেও আজ পর্যন্ত কেউ আমাদের না দিয়েছে সান্ত¦না বা সহযোগিতা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই আমাদের দিকে দৃষ্টি দিতেন এবং আমরা সব হারানোর দুঃখ ভুলতে পারতাম। ইতিমধ্যে ছিদ্দিকুর রহমান (৬৬) সরকারি তালিকাভুক্ত এবং সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে একাধিক বার আবেদন করা হলেও কোন প্রতিকার মিলেনি বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা এতিমের দুঃখ আপনার থেকে আর কারও ভালো বোঝার কথা নয়। তাই আজ শেষ বয়সে আমি ও আমার পরিবারকে যদি একটু সুদৃষ্টিতে দেখতেন এবং নির্যাতিত বোনকে যদি আপনি একটু সান্ত¦না দিতেন তাহলে মনে করতে পারতাম যে বঙ্গবন্ধুর হাতের ছোঁয়া পেয়েছি এবং আমরা সব হারানোর দুঃখ-কষ্ট একটু হলেও ভুলতে পারতাম। তাই বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত পিতা কালামিয়া শেখকে শহীদের সরকারী তালিকাভুক্ত করা এবং আমাদের এই পরিবারের দিকে একটু সুদৃষ্টিতে তাকানোর জন্য আকুল আবেদন জানান তিনি।
এদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এই আবেদন তালিকাভুক্ত স্থানীয় সাতজন মুক্তিযোদ্ধাও একই অনুরোধ করে জানান, শহীদ কালামিয়া শেখকে পাক হানাদাররা ধরে নিয়ে যাওয়ার পর সে আর ফিরে আসে নাই। তাই আমরা মনে করি তাকে এবং তার পরিবারকে যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা একটু সুদৃষ্টিতে দেখলে ভালো হতো। কারণ কালা মিঞা শেখের পরিবারটি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হওয়া একটি পরিবার।