খায়রুল আলম রফিক:
ময়মনসিংহের ত্রিশালে দরিরামপুর উজানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারপাশে সারি সারি ফুল আর ফলের গাছের ডালে ঝাঁকে ঝাঁকে নানা প্রজাতির ফুল আর ফল সোভা পাচ্ছে। সেই দৃশ্য দেখতে ভিড় কসাহী মানুষ। এই বাগান গড়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো: মোজাম্মেল হক ওরফে মোজাম্মেল মাষ্টার ।
কেবল স্কুলে বাগান করেই ক্ষান্ত হননি তিনি । নিজ বাড়ির আঙিনার চারপাশে বিষমুক্ত শীতকালীন সবজি ও বারোমাসি ফসলসহ প্রায় ৩৫ রকমের ফুল ও ফলের আবাদ করছেন। তিনি নিজেই নন । তার দুই পুত্র নিজেদের লেখাপড়ার পাশাপাশি পোল্টি মুরগির খামার দিয়ে এবং ডেইরি ফার্ম করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
জানা যায়, বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ হলেও এদেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা মিটাতে বর্তমান সরকারের যুগোপযোগী পদক্ষেপ ও কর্মসূচি গ্রহণ করায় এদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বর্তমানে করোনা নামক ভয়াবহ ভাইরাসের আক্রমণে পৃথিবীতে নেমে আসে এক সংকট। এ সংকটকালীন সময়ে বিশ্বের সর্বত্রই দেখা দিতে শুরু করেছে অর্থনৈতিক এবং খাদ্য ঘাটতি। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশে এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে, সে নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছেন, শিক্ষক ও তার দুই সন্তান । তারা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন নিজেদের সকল জমি কাজে লাগাতে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, দরিরামপুর উজানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারপাশ নানা প্রজাতির ফুলে ফুলে ভরা । গোলাপ, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা, রজনীগন্ধাসহ নানা প্রজাতি ফুলের পাশাপাশি রয়েছে আম, বেল, আঙুর, মাল্টা, লেবু, কমলা , জাম্বুরা, পেঁপে, বেগুন, মরিচ, ওলকপি, ধনেপাতা, পালংশাক আর টমেটো।সেখানে অনেক গাছে ফুল আসায় আলাদা শোভা দিচ্ছে ।
মোজাম্মেল মাষ্টার তার নিজ বাড়ি ও নিজস্ব জমিতে ৩৫ প্রকার গাছ লাগিয়েছেন । এখন সবুজ ফসলের সমারোহ। নিজ হাতেই এ সবুজ গড়ে তুলেছেন। তিনি প্রতিদিন সকালে বিকালে সময় পেলেই পরিচর্যা করেন গাছপালা। ছুটির দিনে তার অধিকাংশ সময় কাটে ফসলের মাঠে।
নিজের ক্ষেতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালংশাক, লালশাক, মুলাশাক, ডাঁটাশাক, লাউশাক, পুঁইশাক, লেটুসপাতা, পটোল, সজনে, কাঁচকলা, পেঁপে, মিষ্টিকুমড়া, শরসে, গাজর, ধনেপাতা, বিলাতি ধনেপাতা, কাঁকরোল, শালগম, বেগুন, ঝিঙে, বরবটি, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, লেবু, শসা, ধুন্দুল, করলা, শিম, কলমি, সরিষা, ব্রকলি, ক্যাপসিকাম, টমেটো ও মরিচ। গন্ধরাজ, টগর, জবা, বেলি, কসমস, অর্কিড, গাঁদা, সূর্যমুখী, বেলি, জুঁই, বকুল, রঙ্গন, কামিনী, মালতি, চিরতা, তোকমা, তুলসী, লটকন, আমড়া, কলা, মালটা, ড্রাগন ফল, ডালিম ও সফেদা ইত্যাদি।
মোজাম্মেল মাষ্টার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজস্ব অর্থায়নে চাষাবাদ করার চেষ্টা করছি । নিজেই বীজতলা তৈরি করে চারা উৎপাদন করেছি। এসব ফসল চাষাবাদে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও আমাকে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। জৈবসার ব্যবহার করে প্রাকৃতিক উপায়ে এ চাষাবাদ করা হচ্ছে।কোনো ধরনের কীটনাশক ব্যবহার না করে শুধু জৈবসার ব্যবহার করছি । মাটি উর্বরের কারণে ফলন ভালো হচ্ছে।
মোজাম্মেল মাষ্টারের দুই পুত্র লেখাপাড়ার পাশাপশি পিতার মতই চাষাবাদের পাশাপাশি পোলট্রি ও ড্রেইরি ফার্ম করে সফলতা দেখিয়েছেন । তারা আজ স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাদেরকে দেখে অনেকেই পোল্টি মুরগি ও গরু পালনে এগিয়ে আসছেন। আগে ছেলেদের এগুলি ছিল শখের বিষয়। এখন ব্যবসায়িক ভাবে রুপ নিয়েছে। বর্তমানে বেকারত্ব দূরীকরণ সহ আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার উপায় হয়ে দাড়িয়েছে তাদের এই কর্মকান্ড । মোজাম্মেল মাষ্টারের বড় ছেলে, শাকিল জানান,দুই হাজার মুরগি আছে ফার্মে । গরু আছে । বড় ছেলের পাঁচ লাখ টাকা এবং ছোট ছেলের আড়াই লাখ টাকা আয় হয়েছে ।
মোজাম্মেল হক ও তার পুত্ররা জানান, ইচ্ছা থাকলে আমরা প্রত্যেকেই এসব করে অর্থনৈতিকভাবে তৈরি করতে পারি সফলতা।