Header Image

ভালোবাসা দিবসে ভাইরাল হওয়া সোহেল আসলে বকুল

 

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি :

গত ১৪ ফেব্রুয়ারী ভালোবাসা দিবসে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া রওশন-সোহেল চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের শামপুর গ্রামের চা দোকানী বকুল বলে দাবি করেছে এলাকাবাসী। ভালোবাসা দিবসে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ময়মনসিংহের ত্রিশালের প্রতিবন্ধী স্ত্রী রওশন আরাকে ঘাড়ে নিয়ে চলাফেরা করে খ্যাতি অর্জন করা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করা যুবক সোহেল তার বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় উল্লেখ্য করলেও তার বাড়ি আসলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের শামপুর গ্রামে বলে দাবি করেছে এলাকার লোকজন।

স্থানীয়রা জানান, তার নাম মোকলেসুর রহমান বকুল। তার বাবার নাম মৃত আব্দুল হামিদ। প্রায় ২০ বছর পূর্বে একই ইউনিয়নের সন্তোষপুর গ্রামের সাজ্জাদ আলীর মেয়ে শুরাতন বেগমকে বিয়ে করেন। তাদের ৩ ছেলে ও ১কন্যা সন্তান রয়েছে। বর্তমানে তার ছেলেরা ওই চা স্টলটি চালাচ্ছে।

তার ১ম স্ত্রী দাবি করা শুরাতন বেগম জানান, তার স্বামীর নাম মোখলেশুর রহমান বকুল। তাদের বিয়ে হয় ১৯৯২ সালে। বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলেন বকুল। অভাবের সংসারে ঋণ শোধের চাপও ছিল। এসব কারণে তাদের মধ্যে কলহ চলছিল। ২০০৫ সালে একদিন কাজের খোঁজে ঢাকায় যাওয়ার কথা বলে বের হন বকুল। তার পর থেকে আজ অবধি ফেরেননি। তিনি ধরে নিয়েছিলেন স্বামী হারিয়ে গেছে।

এদিকে, চা দোকানী বড় ছেলে সিহাব জানায়, তার বাবা তাদের ছোট অবস্থায় তার মার কাছে ফেলে রেখে যায়। তার মা অনেক কষ্টে তাদের বড় করেছে। তার বোনের বিয়ে দিয়েছে। সে দূরে থাকলেই ভালো। তার এ অন্তর্ধান আবার হঠাৎ এভাবে উদয়ে এলাকাবাসী বিস্মিত হয়েছে। আমরা কিছুই চাই না। তবে যে মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে, এটাই দেশবাসীকে জানাতে চাই। তাই কথা বলছি। তিনি আমার বাবা, ছেলে হলেও বলতে হচ্ছে তিনি মিথ্যা বলছেন। সে সেবা করতে সেখানে যায়নি, আসলে সে লুকিয়ে থাকতেই সেখানে গিয়েছে।

সিহাব আরও জানান, বিভিন্ন খবরে লেখাপড়ার বিষয়ে সোহেল যা দাবি করেছেন, তাও সত্য নয়। সোহেল দাবি করেছেন যে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। কিন্তু তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন।

এবিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে সোহেল সব অস্বীকার করেন। কিন্তু পরে বলেন, এসব মিথ্যা নয় আমার আগের স্ত্রী ও সন্তানদের কলহের জেরে ছেড়ে এসেছি। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িনি, মেট্রিক পরীক্ষাই দিইনি। অভাবের মধ্যে ছিলাম। তাই বুঝতে পারিনি যে ভুল করতেছি। ওইখান থেকে আসার পর পঙ্গু মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। অভাবের তাড়নায় মিথ্যা বলেছি।

অপরদিকে রওশন জানান, তিনি স্বামীর অতীত সম্পর্কে কিছুই জানেন না, জানতেও আগ্রহী নন। এই সংসারেই তিনি সুখী। স্বামীর ভালোবাসায় তিনি কৃতজ্ঞ। যিনি এসব কথা বলেছেন, মিথ্যা বলেছেন। আমি প্রথম থেকে জানি সে সোহেল রানা। এখন সে (ওই নারী) এসে ভাবছে যে সোহেলের স্ত্রী দাবি করলে হয়তো মিডিয়ার মাধ্যমে অনেক কিছু পাবে। সোহেল ওনার হাজবেন্ড না। এসব মিথ্যা-বানোয়াট।

প্রসঙ্গত, ময়মনসিংহের ত্রিশালের শারীরিক প্রতিবন্ধী রওশনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তিনি। চলাফেরায় অক্ষম স্ত্রীকে ১৫ বছর ধরে কোলে-পিঠে তুলে বহন করে আসছেন। রওশনের প্রতি সোহেল মিয়ার এই অদম্য ভালোবাসার খবর প্রচার হয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলোয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই দম্পতির জন্য নানা সহায়তার ব্যবস্থাও করছে স্থানীয় প্রশাসন।

তাদের বাড়িতে গিয়ে বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘এ দম্পতির বিষয়টি জানতে পেরেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জেলা প্রশাসক স্যারকে পরিবারটির খোঁজখবর নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!