Header Image

ত্রিশালে মাথা উদ্ধার করে র‌্যাব, কোদাল থানা পুলিশ! 

কামরুজ্জামান মিনহাজ,ময়মনসিংহ  : 
ময়মনসিংহের ত্রিশালে গত ৬ জানুয়ারি একটি ধান ক্ষেত থেকে এক নারীর মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ । পরদিন ৬ জানুয়ারি র‌্যাব পুলিশের যৌথ অভিযানে ডোবা থেকে ওড়নায় জড়ানো পুুতে রাখা মাথা উদ্ধার করা হয় । সংশ্লিষ্ট অভিযোগে থানা পুলিশের পাশাপাশি অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব সেলিম নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে । ত্রিশাল থানার ওসি মোহাম্মদ  মাইন উদ্দিন এবং পুলিশ পরিদর্শক  (তদন্ত) আবুবকর  সিদ্দিক মেধা দক্ষতা ও বিচক্ষনতায় ৭ জানুয়ারি অভিযুক্তের বাড়ির বসত ঘর থেকে উদ্ধার করা হয় হত্যায় ব্যবহৃত কোদাল ।
পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবু বকর  সিদ্দিক  জানান, হত্যার সঙ্গে জড়িত সেলিমকে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৌশলে অভিযান পরিচালনা করে আটক করা হয় । মাথাবিহীন লাশটি সুলতানা বেগম নামের এক নারীর । তার বাড়ি রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার চেংমারী গ্রামে। সুলতানা চাকরি সূত্রে গাজীপুরে বাস করত । ত্রিশালের ধানীখোলা ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামের ধান ক্ষেত থেকে তখন অজ্ঞাত পরিচয়ের ঐ নারীর মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার এবং কাটাখালী থেকে মামলার আসামি সেলিমকে আটক করা হয় ।
পরে ওড়নায় পেঁচানো অবস্থায় ঘটনাস্থলের অদূরে একটি পুকুর হতে আসামি সেলিমের দেখানো মতে নারীর খন্ডিত মাথা উদ্ধার করা হয় ।  প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত সেলিম এই নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনা স্বীকার করে। ভিকটিম সুলতানা গাজীপুর এক গার্মেন্টস কারাখানায় চাকুরি করত। মোবাইলে ত্রিশালের ধানীখোলার সেলিমের সাথে মোবাইলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে । সম্পর্ক গভীর হলে এই নারীকে মাঝেমধ্যে ধানীখোলায় এনে তার বাড়িতে রেখে শারীরিক সম্পর্ক করত। এর বিনিময়ে টাকা নিত ভিকটিম সুলতানা। সুলতানা অবিবাহিত বলে পরিচয় দিতো। এসময় সেলিম বিয়ের প্রলোভন দেখায় । অভিযুক্ত সেলিম জানতে পারে সুলতানা বিবাহিতা এবং স্বামী পরিত্যক্তা । বাড়ি রংপুরের মিঠা পুকুর ।
ঘটনার দিন বিয়ের কথা বলে ডেকে এনে ভিকটিম সুলতানাকে তার আগের বিবাহ সম্পর্কে জানতে চায়। এনিয়ে  তর্ক বিতর্কের এক পর্যায়ে সেলিম সুলতানার গলায় থাকা মাপলার দিয়ে গলায় পেচিয়ে শ্বাসরোধ  করিলে সুলতানা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অচেতন হয়ে যায়। মৃত্যু নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অভিযুক্ত সেলিম কাছেই তার বাড়ি হতে  কোদাল নিয়ে আসে এবং কোদাল দিয়ে মাটিতে পড়ে থাকা অচেতন সুলতানাকে কোপ মেরে দেহ থেকে  মাথা বিচ্ছিন্ন করে । মাথাটি সুলতানার গায়ে থাকা ওড়না দিয়ে জড়িয়ে ঘটনাস্থলের অদূরে একটি পুকুরে ফেলে দিয়ে পার্শ্ববর্তী ফুলবাড়িয়া উপজেলায় আত্বগোপনে যায় ।
সেলিমের দেখানো মতে মাথা উদ্ধারের পরদিন থানা পুলিশ  হত্যাকান্ডে ব্যাবহৃত কোদাল উদ্ধার করে । ২০২২ সালের ২ মার্চ অভিযুক্তকে ২ দিনের পুলিশ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে । অভিযুক্ত সেলিম স্বেচ্ছায়  বিজ্ঞ আদালতে এই লোমহর্ষক হত্যার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। ভিকটিমের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে জানায় । হত্যার ঘটনায় মামলার বাদী হয়েছেন এসআই আমিনুল হক।
ত্রিশাল থানার ওসি মাইন উদ্দিন  জানান,ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর। পুলিশ অল্প সময়ে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয় এবং হত্যাকান্ডে ব্যাবহৃত কোদাল উদ্ধার করে। অভিযুক্ত দোষ স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও প্রদান করে। র‌্যাব-১৪ এর সিও উইং কমান্ডার রুকুনুজ্জামান  জানান, অজ্ঞাত হিসাবে নারীর মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার হয়। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সেলিমকে আটক করা হয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!