Header Image

হস্তশিল্পের নামে প্রতারণার ফাঁদে ৩১৮ জন নারী

 

মোঃআনভিল বাপ্পি, ঘোড়াঘাট( দিনাজপুর) প্রতিনিধি :

দিনাজপুর ঘোড়াঘাট উপজেলায় হস্তশিল্পের কাজ শেখানোর নামে ৩১৮ জন নারীকে প্রতারণার নতুন একটি ফাঁদে ফেলানো হয়েছে। প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কয়েক লক্ষ টাকা। ভ্ক্তুভোগী ওই সকল নারীরা উপায় না পেয়ে গত বুধবার (১১ মে) ঘোড়াঘাট ৪নং ইউপি’র চেয়ারম্যান বরাবর একটি অভিযোগও দাখিল করেছেন। পরবর্তিতে শনিবার (২১ মে) ঘোড়াঘাট থানায় ভারপ্রাপ্ত বরাবর একটি অভিযোগও করেছেন বলে জানান তারা।

গত এক সপ্তাহের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘোড়াঘাট পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কলেজপাড়া গ্রামে ফরিদ মিয়া নামের এক ব্যক্তি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে নিজ বাড়ীতে মা হেনড্রি গ্রাফ কোম্পানির অধিনে একটি হস্তশিল্পের ট্রেনিং সেন্টার খোলে। সেখান থেকে বলা হয় এই ট্রেনিং সেন্টারে প্লাস্টিকের সুতো, খড় দিয়ে কিভাবে সুন্দর সুন্দর ডালা বানানো যায় তা শেখানো হবে এবং এখানে যারা কাজ শিখবে তাদের প্রত্যেকে প্রতি মাসে কাজ শেখার পাশাপাশি সম্মানী বাবদ ২,৬০০ টাকা দেয়া হবে। যারা কাজ শিখে চলে যাবে তারা বাড়িতে বসে এই ডালি গুলো বানিয়ে পরে আমাদের কোম্পানীর কাছে বিক্রি করে নিজেরাই সাবলম্বি হতে পারবেন।

এ সব প্রলোভন দেখিয়ে ১ম অবস্থায় ৪১০ জন নারীকে ভর্তি করানো হয়। এর মধ্যে ৩১৮ জন নারীদের বেতনের আওতায় আনার হয়। আর বাকি নারীরা অনিয়মিত হওয়ায় তারা বেতন পাবে না মর্মে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়। কাজ শুরু হয় চলতি বছরের গত রবিবার (১০ ফেব্রুয়ারী) থেকে। এরপর থেকেই সূচনা হয় প্রতারণার নতুন ফাঁদ।

একটার পর একটা নতুন নতুন নিয়মের বিষয়ে জানান দেন ভুয়া ট্রেনিং সেন্টারের মালিক প্রতারক ফরিদ মিয়অ ও তার স্ত্রী ছাফিয়া। সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রতিটি এলাকা থেকে সুপারভাইজার নিয়োগ দেয়া হবে মর্মে সকলকে জানানো হয়। পরে ওই ৩১৮ নারীর মধ্যে থেকে প্রথম ধাপে ৯ জন নারীদের টাকার বিনিময়ে সুপারভাইজার বানানো হয় এবং তাদের বেতন নির্ধারণ করা হয় ৫০০০ টাকা।

এই সুপারভাইজারদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫,৭,৯ হাজার করে করে মোট ১,২৬০০০ টাকা নেওয়া হয়। এর মধ্যে অনেকেই, অসহায়, দরিদ্র পরিবারের মানুষ। যারা অনেকেই এই প্রতারণা ফাঁদে পরে বাড়ির পালিত গরু ছাগল বিক্র করে, অন্র মানুষের কাছে থেকে টাকা ধার করে আবার কেউবা উপায় না পেয়ে সুদের ওপর টাকা নিয়ে ভুয়া ট্রেনিং সেন্টারের মালিক ফরিদ মিয়ার হাতে দেয়। আবার অডিটের কথা বলেও অনেকের থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে অনেক টাকা।

এভাবেই চলতে থাকে কার্যক্রম দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ। কিন্তু সমস্যাটা সৃষ্টি হয় অনেক পরিশ্রম করার পরও বেতন না পেয়ে। সকলেই পাওনা বেতন চাইলে প্রতারক ফরিদ মিয়া আজ না কাল, কাল না পরশু দেবো বলে অভিনবো কায়দায় দিন পার করতে থাকে। এভাবে গত বুধবার (১৩ এপ্রিল) পর্যন্ত কেটে যায় দুই মাস। এরপরও বেতন না পেয়ে ৩১৮ সদস্যরা কাজ বন্ধ করে প্রতারক ফরিদ মিয়ার কাছে গত ২ মাসের বেতন ১,৬৫৩,৬০০ টাকার জন্য চাপ দিলে উপায় না পেয়ে সবার উপস্থিতিতে বলে এই কোম্পানীর আসল মালিক জহির উদ্দিন, উত্তম কুমাররা আগামীকাল ঘোড়াঘাটে এসে সকলের বেতন দিয়ে দেবে বলে আশ্বস্ত করে সকলকে বিদায় করে দেয়।

এ ঘটনার পরদিন সকল নারীরা ওই ট্রেনিং সেন্টারে গিয়ে দেখে বাড়ির রুমে তা ঝুলছে কাউকে আর খুঁজে পায় না। সেই সাথে এ বিষয় সম্পর্কিত সকল কাগজপত্রও উধাও। পরে লোক মুখে জানা যায়, ফরিদ মিয়া সকলের সাথে প্রতারণা করে পালিয়ে গেছে।

এভাবে কেটে যায় বেশ কয়েক দিন, কিন্তু ফরিদ মিয়াকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এক পর্যায়ে উপায় না পেয়ে সকল নারিরা ফরিদ মিয়ার বাড়িতে থাকা একটি গরু নিয়ে যায়। যার কারনে ফরিদ মিয়া ওই সকল নারিদের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করেছে। গরুটি বর্তমানে ৪নং ইউপি’র চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান ভুট্টুর জিম্মায় রয়েছে।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আরও অনেক তথ্য। এই ফরিদ মিয়ারা বাড়িতে যারা কোম্পানিটি খুলেছিল, মূলত তারা একটি প্রতারক চক্র। এরা এরকম কাজ পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলাতেও করেছে বলে স্থানীয় ও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে এবং এদের মধ্যে ৩/৪ জনকে ধরে গনধোলাই সহ অপরাধের শাস্তি স্বরুপ গাইবান্ধা জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বগুড়া, শেরপুরেও এদের চক্র রয়েছে।

অভিযুক্ত ফরিদ মিয়ার সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি জানান, আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। আমি শুধু ট্রেনিংয়ের জন্য বাড়ির জায়গাটা দিয়েছিলাম, কারো থেকে কোনো প্রকার টাকা-পয়সা নেইনি। টাকা নিয়েছে মা হেনড্রি গ্রাফ কোম্পানির, ঢাকার গুলশান থানার জহির উদ্দিন, বগুড়া শেরপুরের উত্তম কুমার, বাগরার হাতেম আলি, পাঁচ তলি/দেওলির আরজুল্যা, বগুড়ার ইসমাইল, বগুড়া শেরপুরের হাসান আলী, এলিজা বেগম, রফিকুল ইসলাম এবং ঘোড়াঘাট উপজেলার খোদাদপুর দিঘিপাড়া গ্রামের নূরনবী।

ঘোড়াঘাট ৪নং ইউপি’র চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান ভুট্টু জানান, এ বিষয়ে আমার কাছে একটি অভিযোগ আসার পরপরই আমি তৎক্ষণাৎ বিবাদীগণকে নোটিশ করি এবং ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হওয়া জন্য গ্রাম পুলিশকে নির্দেশ প্রদান করি, কিন্তু তারা উপস্থিত হয়নি। পরে বিবাদীর সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তারা আসার কথা বলে আর আসেনি। এমতাবস্থায়, বাদীগণকে আমি আইনি পরামর্শ নেয়া সহো থানার শরণাপন্ন হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।

এ বিষয়ে ঘোড়াঘাট থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু হাসান কবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠো ফোনে জানান, আমি ছুটিতে আছি। অভিযোগের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নই তবে এই ঘটনার কথা কদিন পূর্বে শুনেছি। অমরা একখনও প্রপার ডকুমেন্টস পর্যালোচনা করতে পারিনি। থানায় যাওয়ার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!