Header Image

সিভিল সার্জন অফিসের জাকিরের সম্পদের উৎস নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা

স্টাফ রিপোর্টার:
ময়মনসিংহে প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীরা বিভিন্ন অনিয়ম দুর্ণীতির মাধ্যমে সরকার ও সাধারণ মানুষ কে ঠকিয়ে নিজেরা বিত্তশালী হচ্ছেন।অথচ এদের অনেকের পারিবারিক অবস্থা অস্বচ্ছল হলেও সরকারী অফিসে পিয়ন,কেড়ানি,এমএলএসএস এর একটা চাকরির সুবাদে অবৈধ ভাবে  অর্থ লোটপাঠ করে অর্থের পাহাড় বানাচ্ছেন। রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষকরা মনে করেন-এসব অসৎ কর্মচারীদের অতীত বর্তমান যাচাই বাছাই ও তদন্ত করলেই বেড়িয়ে আসবে তাদের অর্থের উৎস।  কে দেখবে এসব, এই অসৎ কর্মচারীদের অবৈধ অর্থের উৎস তদন্ত করলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আরো এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। দেখার কেউ নেই!  কোন সাংবাদিক এসব বিষয়ে সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করলেও হয় মামলা-হামলা। তাদেরই একজন ময়মনসিংহ   সিভিল সার্জন অফিসের কর্মচারী জাকির হোসেন। তিনি চতুর্থ শ্রেনী হতে পদোন্নতি পেয়ে এখন তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারী। পদান্নোতি পেয়েই ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’ বনে গেছেন। আবার এলাকার লোকজনের নিকট তিনি নিজেকে সিভিল সার্জন হিসাবেও পরিচয় দেন বলে তথ্য রয়েছে, তাকে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা হিসাবে চিনেন স্থানীয়রা। তার এসব বিষয়ে স্থানীয় একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করায় পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশকের নামে অভিযোগও করেছেন তিনি। আরেকজন সাংবাদিক সংবাদ লেখার পুর্বে তার অনিয়ম দুর্ণীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তাকে সেই পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশকের নামে করা অভিযোগ সম্পর্কে অবগত করে ভেবে চিন্তে লেখার কথাও বলা হয়। অর্থা এটা একরকম হুমকিও বলা চলে। এই যদি হয় পরিস্থিতি তাহলে প্রশাসনের অনিয়ম দুর্ণীতি বন্ধ হবে কিভাবে? এটাও বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। তবে বর্তমান সম্পদের উৎসের জোড়ালো তদন্তের  দাবী উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের ৩১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান জামালকে একজন সাংবাদিক কল করে তার নিকট  জাকির হোসেন সম্পর্কে প্রশ্ন করলে উত্তরে জাকির হোসেনকে স্থানীয়রা সাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা (সিভিল সার্জন) হিসাবে চিনেন বলে সত্যতা স্বীকার করেন। ময়মনসিংহ শহরের শম্ভুগঞ্জ নিজ এলাকায় ৪ তলা ফাউন্ডেশনের বাড়ী, নিজের নামে বেনামে নামে দুই একর  সম্পদ গড়ে তুলেছেন তিনি। নিজ এলাকায় বিশাল মার্কেটও রয়েছে তার। তার চাকরিতে যোগদানের পুর্বে তার এসব ছিলোনা। এসব বিষয়ে সাংবাদিক  লেখলেই অভিযোগ,মামলা, হুমকি, যেকারণে অনেক সাংবাদিকরাও লেখতে আগ্রহ প্রকাশ করেনা। এমন পরিস্থিতিতে রয়েছে ময়মনসিংহ সহ সারা দেশের চিত্র।
সুত্র মতে-অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মূদ্রাক্ষরিক জাকির হোসেন চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী হিসাবে নিয়োগের বিষয় অস্বীকার করলেও সূত্র বলছে,  ২৫ মে ১৯৯১ সালে সিকিউরিটি গার্ড হিসাবে নিয়োগ পান তিনি। এরপর ২৪ আগষ্ট ১৯৯৭ সালে বিভাগীয় মনোয়ন বোর্ড তাকে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মূদ্রাক্ষরিক পদে পদোন্নতি দেন। সূত্র নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন অফিসের হিসাব রক্ষক ফরিদা ইয়াসমিন।
জানা গেছে, ময়মনসিংহ স্বাস্থ্য বিভাগের নৈশ প্রহরীর চাকরী পেয়ে জাকিরের ভাগ্যোন্নয়ন শুরু  হয়। চাকুরীর শুরুতে  ময়মনসিংহ স্বাস্থ্য বিভাগের সিকিউরিটি গার্ড হিসাবে চাকরী যোগদান করেন। যোগদানের  ৫ বছরে পদোন্নতি পেয়ে একেবারে শূন্য থেকে বিশাল বিত্তবৈভবের মালিক হয়ে যান জাকির হোসেন। তিনি  ময়মনসিংহ সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মূদ্রাক্ষরিক হিসেবে বর্তমানে কর্মরত আছেন। চাকরির শুরুতে  ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন।
বেসরকারী ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নিবন্ধন ও নবায়ন করার জন্য  সিভিল সার্জনের পরিদর্শন ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের  খরচের অযুহাতে দেখিয়ে  হাতিয়ে নেন বিপুল পরিমানে টাকা। তাকে  ঘুষ দিয়েও লাইসেন্স  না পেয়ে  সিভিল সার্জন অফিসে লাইসেন্সের জন্য ঘুরতে হয়েছে মাসের পর মাস। তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ  ময়মনসিংহের বেসরকারী ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের মালিকদের।
এসব অভিযোগের  প্রেক্ষিতে ওই জাকির হোসেনের পিছনের তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে  বেরিয়ে এলো অন্য ঘটনা। চর ইশ্বরদিয়া গ্রামের আবু তাহের ২০১২ সালের দিকে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিবেশির সাথে সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে একটি মামলা হলে, সিভিল সার্জন অফিসের জাকির তাকে মামলা হতে নাম কেটে দেওয়ার কথা বলে ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। তৃতীয় শ্রেণির চাকরি করে কোটিপতি বনে যাওয়ার ম্যাজিক দেখিয়ে তিনি এখন নিজ এলাকা নগরীর শম্ভুগঞ্জ চর ইশ্বরদিয়ার সাধারণ মানুষের আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনত হয়েছেন। অদৃশ্য খুঁটির জোরেই তিনি ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন।
শহরের নিউ রুম্পা নাসিং হোমের শেয়ার হোল্ডার শাহজাহান জানান, তার  লাইসেন্স করিয়ে দেয়ার নামে অফিস ও  স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খরচ বাবদ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন অফিস সহকারী জাকির হোসেন। প্রতিশ্রতি নামের একটি ক্লিনিক এর লাইসেন্স বাবদ দিয়েছিলাম ৯০ হাজার টাকা। সেই লাইসেন্সটিও হয় নাই, টাকাও ফেরৎ দেয় নাই। এছাড়াও শাপলা ক্লিনিকের মালিকসহ অনেকের নিকট হতে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জাকির হোসেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নতুন লাইসেন্স কিংবা নবায়নের জন্য সিভিল সার্জন অফিসে খরচ বাবদ ঘুষ দিতে হয়। এলাকার লোকজনের নিকট নিজেকে এই নামে পরিচয় দিতেন। তাদের পুর্বে তেমন সম্পদ ছিল না, এখন অনেক সম্পদের মালিক হয়েছেন।
এ সব অভিযোগের বিষয়ে জাকির হোসের সাথে ফোনে কথা হলে তিনি জানান, তিনি চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসাবে চাকরিতে যোগদান করেননি তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারী হিসাবে চাকরীতে যোগদান করেছেন। সিভিল সার্জন অফিসের লাইসেন্স সংক্রান্ত ফাইগুলোর কাজ গত দেড় বছর ধরে করেন না। দেড় বছর পুর্বে লাইসেন্স সংক্রান্ত বিষয়গুলো তিনি দেখাশুনা করতেন।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বিষয়ে  এক সাংবাদিক জানতে চাইলে  উত্তরে বলেন, আপনাকে একজন অভিযোগ করতেই পারে, এইটা তো অভিযোগ হলো না। আমি যদি বলি আপনি আমার কাছে চাঁদা চাইতেছেন এইটা কি অভিযোগ হলো। আমার বিষয়ে একজন সাংবাদিক পত্রিকায় লিখেছিলো তার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আপনিও ভেবে চিন্তে লিখবেন।
ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন নজরুল ইসলাম জানান, তিনি সম্প্রতি ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন হিসাবে যোগদান করেছেন। অফিস সহকারী জাকির হোসেন সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!