Header Image

ভালুকায় পেঁপে চাষে কাকনের ভাগ্য বদল

 

আনোয়ার হোসেন তরফদার, ভালুকা প্রতিনিধি ঃ

ভালুকার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের সোনাখালি গ্রামের অনার্স মাষ্টার্স করা শরীফ হোসাইন কাকন টপলেডি জাতের পেপে আবাদ করে ব্যাপক সফলতা অর্জণ করেছেন। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান ২০১৬ সালে তীতুমীর কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স ও ২০১৭ সালে ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন বিশ্ব বিদ্যালয় কলেজ হতে মাষ্টার্স শেষ করে কৃষি কাজের উদ্যোগ গ্রহন করেন।

এ ব্যাপারে তার পিতা মজিবর রহমানের উৎসাহ পেয়ে পেপে চাষের সিদ্ধান্ত নেন। আঙ্গার গাড়া গ্রামে ৩ একর ৮৮ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে তাতে টপলেডি জাতের পেপের আবাদ শুরু করেন। । গত বছর জমির ভাড়া, বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ, শ্রমিক ইত্যাদি বাবদ ১২ লাখ টাকার মত খরচ হয়। গত বছর ফল ধারক ৩৫০০ গাছ হতে পেপে বিক্রি হয় ২১ লাখ টাকা। খরচ বাদ দিয়ে ৯ লাখ টাকার মত মুনাফা পান তিনি। গত বারের তুলনায় এ বছর পেপের বাজার ভাল হওয়ায় ৩৫ লাখ টাকা বিক্রির আশা করছেন। স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় হতে ফিলোসফিতে অনার্স মাষ্টার্স করেছেন। তিনি স্বামীর কৃষি কাজে সার্বিক সহযোগিতা ও উৎসাহ দিয়ে চলেছেন। সামিয়ান আহম্মেদ নামে আড়াই বছরের এক ছেলে সন্তান রয়েছে তাদের। তিনি জানান প্রায় ৪ একর জমি বর্গা নিয়ে গত ৪ বছর যাবৎ টপলেডি জাতের পেপের আবাদ করে মোটামোটি অর্থনৈতিক সফলতা পেয়েছেন।

একের ভিতর দুই কাঁচা পেপে সবজি পাঁকা হলে ফল। কাঁচা পেপে তরকারী, ভাজি, ভর্তা হিসাবে সকলের কাছে সমাদৃত আর পাঁকা পেপে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হওয়ায় সর্বত্রই এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় বর্তমানে ভালুকার বিভিন্ন এলাকায় বানিজ্যিক ভাবে এর আবাদ বেড়ে গেছে। ভালুকার উৎপাদিত পেপে দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানী করে চাষীরা লাভবান হচ্ছেন। শরীফ হোসাইন কাকন জানান চলতি মৌসুমে জমি চাষ, বীজ ক্রয়, চারা তৈরী, চারা রোপন, পারিচযার্, সার কীটনাশক ও যাবতীয় কাজ কর্ম বাবদ প্রায় ১৫ লাখ টাকার উপরে খরচ হয়েছে। পেপের চারা সাধারণত ফাল্গুন চৈত্র মাসে লাগানো হয়। আবহাওয়া অনুকূল হলে সার কীটনাশক দিয়ে সঠিক পরিচর্চা করতে পারলে ১২০ দিন অথার্ৎ ৪ মাসের মাথায় ফলন আসা শুরু হয়।

রোগ বালাই নাশকে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকতার্র পরামর্শ নিয়ে কীটনাশক ও সার দিয়ে পরিচর্চা করে থাকেন। একটি গাছ পযার্য়ক্রমে একাধারে ৫ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত প্রতি মৌসুমে ফল দিয়ে থাকে। বর্তমানে ৩০/৪০ টাকা কেজি দরে পেপে বিক্রি করছেন। গাছ থেকে পেপে নামিয়ে বাজার জাত করার জন্য কাগজে মুড়িয়ে বস্তাবন্দী করা হয়।

পরে ট্রাকভরে ঢাকার কারওয়ান বাজারে নিয়ে পাইকারী দামে বিক্রি করেন। সর্ব সাকুল্য খরচ বাদ দিয়ে চলতি মৌসুমে ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা মুনাফা পাবেন বলে তিনি আশা করছেন। তিনি জানান ঝাড় জংলার চালা জমির আগাছা পরিষ্কার করে শক্ত মাটি চষে নরম বানিয়ে চাষোপযোগী করে তাতে পেপের আবাদ শুরু করেন। তার দেখাদেখি অনেকেই ফেলে রাখা পতিত জমিতে পেপে বাগান করে সংসারে অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ ফিরিয়েছেন। তিনি মনে করেন শিক্ষিত বেকার যুবকদের অর্থনৈতিক সমস্য দুর করতে চাকুরীই একমাত্র উপায় না ভেবে নিজের কিংবা অন্যের জমি লিজ নিয়ে পেপে সহ বিভিন্ন অর্থকরী ফসলের আবাদ করে ব্যপক লাভবান হওয়া সম্ভব।

ভালুকার হবিরবাড়ী, মল্লিকবাড়ী, চাঁনপুর, ডাকাতিয়া, আঙ্গারগাড়া, উথুরা, নয়নপুর, কাদিগড়, পাড়াগাঁও সহ বিভিন্ন গ্রামে পেপের ব্যাপক আবাদ হচ্ছে।
শরিফ হোসাইন কাকন আরো জানান, দেশের শিক্ষিত যুবকরা যদি কৃষি কাজে এগিয়ে আসে আর সরকার যদি সহযোগিতা করে তাহলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে পেঁপে।

উপজেলা উপ-সহকারী উদ্বিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা এনামুল হক জানান এ বছর প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে টপলেডি ও রেড লেডি জাতের পেপে আবাদ হয়েছে। পেপে লাভ জনক ফসল হওয়ায় চাষীরা আবাদে বেশী আগ্রহী হচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!