Header Image

ইউএনও’র পরিকল্পনায় সবুজ পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষায় নবজাগরণ

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ ময়মনসিংহ:

প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়ে থাকে মানুষ গড়ার আতুর ঘর। মানুষ গড়ার এ ঘর আজ প্রায়ই অবহেলা, খামখেয়ালি আরও নৈতিকতার অভাবে মূল কাজটি করতে পারছে না।

ময়মনসিংহ জেলার সদর উপজেলায়ও এর ব্যতিক্রম ছিল না। তবে বর্তমান সময়ে উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় আধুনিকতা ও উন্নয়নের জোয়ার এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর শিক্ষা ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তনের কান্ডারী হচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।

ময়মনসিংহ সদরে যোগদানের পর থেকেই উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের মতো গড়ে তোলার জন্য চষে বেড়াচ্ছেন উপজেলার প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। উপজেলার দের শতাধিক  প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শতাধিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন। এ পরিদর্শনে তার ফলাফল আজ দৃশ্যমান। শুধুমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বা অভিভাবকগণ নয় উপজেলার আপামর জনসাধারণ এক বাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন। পরিচ্ছন্ন প্রতিষ্ঠানকে উপজীব্য করে এগিয়ে চলা ইউএনও প্রতিষ্ঠানগুলোতে তো শতভাগ ড্রেস পরিধানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা চুল, নখ, দাঁতের যত্নের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। এছাড়াও শ্রেণী কক্ষে এবং প্রাঙ্গণে কোন রকমের ময়লা, আর্বজনা না থাকার বিষয়টি সবারই নজর কেড়েছে। তিনি বলেন, নোংড়ার মধ্যে আর যাই হোক সুস্থ্য মনমানসিকতা সম্পন্ন মানুষ গড়ে উঠতে পারে না।

প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর পরিচ্ছন্নতা বহিরাগত যে কারও দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে দৃঢ় প্রত্যয়ী ইউএনও এর অভিনব উদ্ভাবন সবুজ পাঠশালা। এ ধারনার মধ্যে রয়েছে স্কুলের মাঠের বাইরে পরিত্যক্ত জায়গায় সবজি চাষ, ফুলের বাগান ও বৃক্ষ রোপন করা। ইতোমধ্যে প্রায় ১০-১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সবুজ পাঠশালার বাস্তব রূপ দিতে পেরেছে।

ইউএনও বলেন, মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুশাসন ‘১ ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না’ এ থেকেই সবুজ পাঠশালার পরিকল্পনা আমার মাথায় আসে। এতে করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ যেমন প্রশান্তিময় হবে, আকর্ষণীয় হবে তেমনি শিশুদের মাঝেও বাড়ির আঙিনায় চাষাবাদের অভ্যাস গড়ে উঠবে। এছাড়াও SDG এর লক্ষ্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত হবে।

খেলাধুলার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে বিদ্যাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রাঘবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর মাঠ সংস্কার করেছেন। বেঞ্চের অভাবে যখন শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে বসতে পারতেছিল না তখন দাতা হিসেবে ইউএনও ঝাপারকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেঞ্চ সরবরাহ করে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করেন।

রাঘবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে স্কুলের বাউন্ডারি নির্মাণে স্কুলের জায়গা জমি নিয়ে সমস্যা থাকায় রাঘবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিদর্শন করে জমি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে স্থানীয় গণ্যমান্যদের নিয়ে আলোচনা করেন। দুঃস্থ শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ ব্যাগ, খাতা, পেন্সিল, টিফিন বাক্স বিতরণ করেছেন। বিতরণ করেছেন ক্রীড়া সামগ্রী। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষার্থীকে দিয়েছেন হুইল চেয়ার। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে মিডডে মিল কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিটি স্কুলে মিডডে মিল যথাযথ ভাবে বাস্তবায়নে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। কাব কার্যক্রম জোরদার করতে কাব লিডারদের নিয়ে প্রশিক্ষণ ও ওরিয়েন্টেশন কোর্স করেছেন। কাব কার্যক্রম বেগবান হয়েছে মর্মে শিক্ষকরা স্বীকার করেছেন।

এছাড়াও ব্রাকের সহযোগিতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের বিনামূল্যে চক্ষু পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। নিয়মিত মা সমাবেশ ও উঠান বৈঠকে অংশগ্রহণ করে প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের অংশ বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছেন।

ইউএনও’র নানামুখী পদক্ষেপ এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্বদর্প উপস্থিতি ও পরিদর্শন শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া বহুলাংশে কমিয়েছে। শুধু ঝরে পড়া রোধই করেনি বরং শিক্ষার্থীদের ক্লাসের উপস্থিতি বাড়িয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের যাবতীয় কার্যক্রমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে, শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি পেয়েছে, স্কুল প্রাঙ্গনে পরিছন্নতা বৃদ্ধিসহ একটি নবজাগরণের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন উপজেলাবাসী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!